অটোয়া, শনিবার ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৪
বাকাওভের নির্বাচনে সিরাজুল ইসলাম সাইদ সভাপতি এবং সুপ্তা বড়ুয়া সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত : ১২৬ নিয়ে শুরু

আশ্রম সংবাদঃ ২১ এপ্রিল ২০২৪, কানাডার রাজধানী অটোয়ার প্রথম বাংলাদেশী সংগঠন, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের জাতক, সম্পূর্ণ অসাম্প্রদায়িক একটি সংগঠন, “বাংলাদেশ কানাডা এ্যাসোসিয়েশন অব অটোয়া ভ্যালীর ২০২৪-২০২৭ কার্যকরী বৎসরের নির্বাচনে সিরাজুল ইসলাম সাইদ সভাপতি এবং সুপ্তা বড়ুয়া সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। বাকাওভের ১১ সদস্য বিশিষ্ট কার্যকরী পরিষদের অন্যান্য নির্বাচিত সদস্যরা হলেন যথাক্রমে, সহ-সভাপতি মোঃ আনোয়ার হোসেন; সহ-সাধারণ সম্পাদক শংকর চৌধুরী; কোষাধ্যাক্ষ শাহ আলম ইসলাম শুভ; জনসংযোগ সম্পাদক জাহিদা বেগম মিতা; সংস্কৃতি ও ক্রীড়া সম্পাদক গোলাম কিবরিয়া টিটু; সাংগঠনিক সম্পাদক জুলফিকার রহমান ফুলু; সোশ্যাল মিডিয়া এবং আইটি সম্পাদক দুর্জয় বড়ুয়া; কার্যকরী সদস্য গাজী মোহাম্মদ মুন্না ও শরফ উদ্দীন ভূইয়া। এছাড়া সংগঠনের পরিবর্তীত ও সংশোধিত নতুন সংবিধান অনুযায়ী, সার্বিকভাবে সংগঠন এবং কার্যকরী পরিষদকে সাহায্য-সহযোগিতা করা এবং ঠিক সময়মত ‘বাকাওভের’ কার্যকরী পরিষদের নির্বাচন পরিচালনা করার জন্যে আগামী ছয় বৎসরের (২০২৪-২০৩০) জন্যে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট উপদেষ্টা পরিষদের নির্বাচন সম্পন্ন করা হয়। নির্বাচিত উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যবৃন্দ হলেন যথাক্রমে, বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ আনোয়ার হোসেন, সুলতানা শিরীন সাজি, গুলজাহান বেগম রুমি, শৈলেস দেব এবং কবির চৌধুরী। উল্লেখ্য যে, আয়োজিত উভয় পরিষদের নির্বাচনে প্রতি পদের জন্য একজন করে প্রার্থী থাকায় নির্বাচনী তফশিল অনুযায়ী ২১শে এপ্রিল ২০২৪ স্থানীয় ব্রনসন সেন্টারে নির্বাচনে অংশ গ্রহণকারী সকল প্রার্থিদেরকে বিজয়ী বলে ঘোষণা করা হয়। 

‘বাকাওভ’ নির্বাচন পরিচালনা ও অন্তর্বর্তীকালীন কমিটির সদস্য কবির চৌধুরীর সভাপতিত্বে এবং কমিটির সদস্য রিয়াজ জামানের সঞ্চালনায় ‘বাকাওভের’ নবনির্বাচিত পরিষদের কাছে দায়িত্ব অর্পণের সময় রিয়াজ জামান গত ১ অক্টোবর ২০২৩ থেকে ২১ এপ্রিল ২০২৪ পর্যন্ত ‘বাকাওভের’ দায়িত্বকালীন সময়ের আর্থিক হিসাব তুলে ধরেন এবং নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী প্রার্থীদের কাছ থেকে নমিনেশন ফি বাবৎ আদায়কৃত $৬০০.০০ ডলার হতে গত কয়েকমাস সংগঠনের আনুষাঙ্গিক কিছু ব্যয় ও নির্বাচনী খরচ বাদে উদ্ধৃত্ত $৮৬.৭১ ডলার নতুন কমিটির কাছে হস্তান্তর করেন। এই আপাতকালীন দায়িত্ব পালনের কথা এবং ফাইনান্সিয়াল রিপোর্ট জমা দিতে গিয়ে রিয়াজ জামান বলেন যে, “সংগঠনটিকে অটোয়ার সবার কাছে গ্রহণযোগ্য করতে হলে প্রথমেই নির্বাচিত কমিটিকে সংগঠনের ফাইনান্সিয়াল দিক, বিশেষ করে সংগঠনের হিসাব-নিকাশ স্বচ্চ রাখতে হবে। সংগঠনের জন্য একটি একাউন্ট খুলতে হবে। কানাডার মত বহুবাজিক সমাজ ব্যবস্থায় একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠানের চাহিদা অনেক। এখানে ইচ্ছা করলে কমিউনিটির জন্যে সরকারী এবং বেসরকারীভাবে অনেক কিছুই করা যায়। এর জন্যে প্রয়োজন সঠিক একটি ফাইনান্সিয়াল রিপোর্ট। এদেশে কোনো ধরনের আর্থিক সহযোগীতা নিতে হলে কমপক্ষে তিন বছরের ‘ফাইনান্সিয়াল রিপোর্ট’ দাখিল করতে হয়। রিয়াজ বলেন, আমি আশা করবো, নতুন নির্বাচিত কমিটি গত ৫২ বছরের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে সংগঠনের “ফাইনান্সিয়াল” হিসাবের রক্ষণা-বেক্ষণ করবেন। আজকে, আমরা আপনাদের কাছে নমুনা হিসেবে আমাদের সময়ের ফাইনান্সিয়াল ব্যালান্স সিট দিচ্ছি। আশা করি তা আপনাদের কাজে লাগবে।“ 

রিয়াজ জামান ছাড়াও এই আনন্দঘন দায়িত্ব অর্পণ অনুষ্ঠানে অটোয়ায় বসবাসকারী বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের বীর মুক্তিযোদ্ধা ফারুক হোসেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা শিকদার মতিয়ার রহমান, বাকাওভের সংশোধিত সংবিধানের বিভিন্ন বাই-লজের আইনানুগ পরিমার্জনে সহযোগিতাকারী অমিতাভ স্যানাল, বাকাওভ অন্তর্বতীকালীন কমিটির সদস্য মহসীন বখত, সদস্য সুলতানা শিরিন সাজি এবং নতুন কমিটির নির্বাচিত সভাপতি সিরাজুল ইসলাম সাইদ এবং নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক সুপ্তা বড়ুয়া বক্তব্য রাখেন। সৌহার্দ্যপূর্ণ ও আন্তরিকতাময় এই আলোচনায় সবাই অটোয়ায় ‘বাকাওভের’ মত পুরাতন ও অসাম্প্রদায়িক একটি সংগঠনের প্রয়োজনের কথা তুলে ধরেন। সকলেই নতুন কমিটির সাফল্য কামনা করে আশা প্রকাশ করেন যে, ‘বাকাওভ’ এর নতুন নেতৃত্ব শহরের সকল বাংলাদেশীদেরকে একীভূত করতে চেষ্টা করবে এবং সমর্থ হবে। বক্তারা আরো বলেন যে, “অটোয়ায় বাংলাদেশীদের বসবাস গত শতকের ষাটের দশক থেকে, এমনকি ‘বাকাওভের’ জন্মের ও ৫৩ বছর হতে চললো, অথচ আমাদের এই শহরে এখনও আমাদের ‘বসার’ কোনো জায়গা নেই। আগত অতিথি বক্তাদের কথার সূত্র ধরে সংগঠনের নবনির্বাচিত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক তাদের বক্তব্যে ‘বাকাওভ’কে শহরের সকল বাঙালির প্রাণের সংগঠন হিসেবে গড়ে তোলা এবং অটোয়ায় বাংলাদেশিদের জন্যে একটি কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। 

বাকাওভের নতুন কমিটির কাছে দায়িত্ব অর্পণের শেষে অনুষ্ঠানের সভাপতি কবির চৌধুরী নতুন কমিটির সকল সদস্য এবং অনুষ্ঠানে উপস্থিত মুক্তিযোদ্ধা, বাকাওভের সদস্যসহ আগত সকল অতিথিদেরকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, “অনুষ্ঠানের সম্মানিত বক্তাদের বক্তব্য ও এবারের নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী অটোয়ায় একটি কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণ ও ‘বাকাওভ’কে অটোয়ার সকল বাঙালির প্রাণের সংগঠনে পরিনত করার যে অঙ্গীকার নবনির্বাচিত কমিটির সদস্যরা করেছেন তা প্রশংসার দাবী রাখে। নতুন কমিটির এই আগ্রহ আর উদ্দীপনাকে কাজে লাগানো এবং তাদেরকে উৎসাহ দেওয়া আমাদের দায়িত্ব। কবির চৌধুরী অনুষ্ঠানে উপস্থিত সবাইকে অনুরোধ করে বলেন যে, আসুন আমরা সবাই আজকেই নতুন কমিটির কমিটমেন্ট “অটোয়ায় বাংলাদেশী কমিউনিটি সেন্টার তৈরি করতে হবে’ এই স্লোগানের সাথে একাত্বতা প্রকাশ করে এখনই এক (১) ডলার করে দিয়ে ‘বাংলাদেশ কমিউনিটি সেন্টার, অটোয়া’র জন্যে একটি ‘ফান্ড’ তৈরী করি।“ তাঁর এই আহ্বানে সাড়া দিয়ে উপস্থিত সবাই অটোয়ায় একটি বাংলাদেশী কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণের জন্যে তাৎক্ষণিকভাবে $১২৬ ডলার দান করেন এবং ‘বাকাওভের’ নেতৃত্বে ‘বাংলাদেশ কমিউনিটি সেন্টার, অটোয়া’ নামে একটি ফাণ্ড তৈরি করেন। উল্লেখ্য যে, উপস্থিত সকলেই আহ্বানকৃত ‘১’ ডলারের উপরে দান করেছেন।

অনুষ্ঠানের পরে আমাদের প্রতিনিধি, কবির চৌধুরীর কাছে কমিউনিটি সেন্টারের ‘ফান্ডের জন্য’ এক ডলার চাওয়ার কারন কি জানতে চাইলে তিনি বলেন, “অটোয়ায় ছোট একটি কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণ করতে বেশী টাকার দরকার পড়বে না। ৪/৫শ হাজার ডলার হলেই ছোট-খাটো একটি বাড়ী কিনে একটি কমিউনিটি সেন্টার করা যায়। আমাদের অটোয়ায় প্রায় দশ হাজার বাংলাদেশি বাস করেন। সবাই যদি মাসে এক ডলার করে দান করেন তাহলে আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই শহরে একটি কমিউনিটি সেন্টার করা যায়। এই ‘এক’ ডলার প্রতিকী অর্থে ব্যবহার করা হয়েছে। তিনি বলেন, অটোয়ার বাংলাদেশীরা চাইলে এক বছরের মধ্যেই শহরে বাঙালিদের জন্য নিজস্ব একটি কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণ করতে পারেন।“ 

আরশী নগর অটোয়ার বাসিন্দা হিসেবে আমরাও তা বিশ্বাস করি এবং আশা করি ‘বাকাওভের’ নতুন কমিটি ২১ এপ্রিল ২০২৪ ব্রনসন সেন্টারে সংগৃহিত $১২৬ ডলার ভবিষ্যতে $১.২৬ মিলিয়ন ডলারে রূপান্তরিত হবে। 

নিজস্ব প্রতিবেদক
আশ্রম, অটোয়া, কানাডা