কাকচরিত্র – বেলাল উদ্দিন
হাঁস এবং কাক দুই প্রজাতির প্রাণি হলেও আলাদা বৈশিষ্ট উভয়ের মধ্যে বিদ্যমান। কাক উড়তে পারে, গাছের ডালে, বাসগৃহের টিনের উপরে বসে। পচনশীল দ্রব্যাদি ভক্ষন করা, ছোঁ মেরে কোনোকিছু ছিনিয়ে নিয়ে মহানন্দে খাওয়া হলো তার স্বভাব। তার গলার স্বর অত্যন্ত কর্কশ বলে কেউই তাকে পছন্দ করে না - তাড়িয়ে দেয়। জন্মগতভাবে তার রং কালো এবং চালাক প্রকৃতির। পক্ষান্তরে হাঁস বিভিন্ন রঙের হয়ে থাকে, স্বভাবগতভাবে অত্যন্ত সহজ, সরল প্রকৃতির। ডাঙায় ও পানিতে তার বিচরণ। তাদেরকে আমরা খুবই পছন্দ করি কারণ তাদের মাংস, ডিম অত্যন্ত উপাদেয় খাদ্য। তারা প্রকৃতির সাথে তাল মিলিয়ে জীবন ধারনে অভ্যস্ত।
কোনো এক সময় বিরাট ঝড় তুফান হয়েছিল যার ফলে কাক মহাশয়দের বংশ প্রায় নিঃশেষ হতে হতে সামান্য ক'জন বেঁচেছিলো রোগাক্রান্ত অবস্তায়। খাদ্যের অভাবে মরণাপন্ন প্রায়। কোনমতে এক মজাপুকুরের পাড়ে দাঁড়ানো আমগাছে উড়ে এসে বসলেন। এ মজাপুকুরে দিনের বেলায় হাঁস মহাশয় গোসল করে, নিজের আহারের জন্য ছোট ছোট মাছ শিকার করে। কোন সময়ে কাক মহাশয় গাছের ডালে বসলো তা কিন্তু হাঁস বুঝতে পারে নাই। পরদিন বেখেয়ালে উপরের দিকে তাকিয়ে দেখলো আলাদা জাতির এক সদস্য দিব্যি কাতর হয়ে বসে আছে। আগ্রহ নিয়ে সে কাককে প্রশ্ন করিল, -ভাই আপনি কে, কোথা থেকে এসেছেন?
কাক উত্তরে বলিল, -আমি কে, কোথা থেকে এসেছি এটা তোমাকে বলে তো লাভ নেই। তুমি এক জাতি আমি আর এক জাতি।
হাঁস বললো, -আমার বাড়ি এসেছো ভাই একটু জানার দরকার আছে, কি অসুবিধায় দুর দেশ থেকে এসেছো?
কাক তখন একটু ভনিতা করে বললো, -ভাই যখন তুমি জানতে চাচ্ছ তাহলে তো কিছু বলতে হয়। সর্বনাশা ঝড়ে আমার আপনজন বলতে আর কেউ রইল না। তাই আমি নিরুদ্দেশ হয়েছি। খাওয়া-দাওয়া করতে মোটেই ইচ্ছা হয় না।
হাঁস বললো, -ভাই যখন দুর দেশ থেকে এসেছো, ঠিক আছে। এখন তুমি আমার মেহমান। আমিও যেভাবে খাবো তুমিও সেভাবে খাবে। তোমার দুঃখ শুনে আমার বড় খারাপ লাগছে। যতদিন তুমি চাও আমার সাথে থাকো।
কাক ভাবলো বেওকুফ পাইছি, বেশ কয়টা দিন আরাম আয়েশে কাটিয়ে দিব। ক'দিন পর কাক হাঁসকে প্রস্তাব করলো, যদিও আমরা দুই জাতি চল আমরা একে অপরের বন্ধু হয়ে যাই। হাঁস কোন ধরনের ভাবনা চিন্তা না করেই প্রস্তাবে রাজি হয়ে গেল। হাঁস মহাশয় জানপরাণ দিয়ে বন্ধুকে খাওয়াতে শুরু করলো, কাকের ক্লিষ্ট শরির আস্তে আস্তে মোটাতাজা হতে লাগলো। হাঁস প্রতিদিন নিজের দিকে নজর না দিয়ে বন্ধুর দিকে বেশি নজর দিল। দিন যেতে লাগলো বসন্ত কাল আসলো গাছে গাছে ফুল ও ফল ধরতে লাগলো। কাক মহাশয়কে একটু অন্য রকম হতে দেখা গেলো। তিনি এবাড়ি ওবাড়ি গিয়ে পাকা আম-জাম-কাঁঠাল খাচ্ছেন আবার হাঁস মহাশয় নাস্তা খাবার তৈরি করে অপেক্ষায় প্রহর গুনছেন।
এভাবে বেশ ক'দিন গত হওয়ার পর হাঁস মহাশয় চতুর কাককে বললেন, -কিগো ব্ন্ধু আজকাল কোথায় যান, কখন যান কোন খবর টবর বলেন না, আমি কি কোন অপরাধ করেছি?
কাক উত্তরে বললো, -আমি কোথায় যাই, কেন যাই এটা তোমাকে বলে কি লাভ, তুমি কি কিছু বুঝ? আমি জীবনে একটা ভূল করেছি তোমার সাথে বন্ধুত্ব করে।
হাঁস বিনয়ের সাথে জানতে চাইলো, -ভাই আমার কি দোষ একটু দয়া করে বলো?
কাক উত্তরে বললো, -তোমরা নিচুজাতি আর আমরা হলাম বড়জাতি, তোমরা সবসময় পানিতে থাকো আর আমরা থাকি উপরে, আমরা উড়ি আকাশে, আমরা একগ্রাম থেকে অন্যগ্রামে যাই উড়ে উড়ে তোমরা থাকো বাড়ির মধ্যে, জগতের খবর রাখো না। তোমরা হলে বেয়াক্কলের জাতি আমরা হলাম চালাক।
এতসব শুনে হাঁস বেটার চক্ষু চড়কগাছ। ভাবতে লাগলো নিদানের কালে জায়গা দিলাম, জামাই আদরে রাখলাম এর পরিণাম হলো এই! কিছু সময় নিয়ে বললো - ভাই আমরা তো বোকা জাতি আর তুমি তো চালাকের সরদার। ঠিক আছে চল বন্ধুত্ব ছেড়ে যার যার গোত্রে চলে যাই। দূঃসময়ে ছিলাম আমি তোমার, তোমার সুসময়ে তুমি তোমাকে নিয়ে থাকো। আমি যেভাবে ছিলাম ওভাবে আছি, থাকবো।
বেলাল উদ্দিন। সিলেট, বাংলাদেশ
-
গল্প//উপন্যাস
-
04-04-2020
-
-