অটোয়া, সোমবার ২৩ জুন, ২০২৫
গল্পের শেষ কবে জানিনা - মৈত্রেয়ী সিংহরায়

সেই গল্পটা এখনো শেষ হয়নি
কোনো এক ভোরবেলায় আকাশের
কোণে কোণে জমে ওঠা কালো মেঘগুলো
ভোরের লাল সূর্যকে ঢেকে দিয়েছিল।
চারিদিকে ঘোর অন্ধকার
নক্ষত্রের শেষ ঝিকিমিকিও আর নেই
কীটপতঙ্গের ডাক‍ও তেমন শোনা
যাচ্ছে না,
চারপাশের গাছপালা থমথমে,
কোথা থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে পাখিরা
মাথার ওপর দিয়ে উড়ে যায়,
নিঃস্তব্ধ সেই ভোরে শুধু শোনা যায়
তাদের ডানার শব্দ।
অন্ধকার আরও ঘনিয়ে এলে
কাকেরা কা কা করে উঠলো
এদের ডাকে প্রবল দীর্ঘশ্বাস।

আর সেই পাগলটা
গায়ে কিম্ভুতকিমাকার পোশাক,
ছেঁড়া তালিমারা, গালে দাড়ি,
চোখ কোটরাগত,
একটা লম্বা দাঁত ঠোঁটের ফাঁক থেকে
দেখা যাচ্ছে,
ন‍্যাকড়া জড়ানো লাঠি নিয়ে
সে ভোর থেকে উন্মত্ত হয়ে ছুটছে,
সে যেন অনেক কিছু দূরে অদূরে
দেখতে পাচ্ছে....
চিৎকার করে বলছে
সমুদ্রে যদি জাহাজ ডুবি হয়
কেউ বাঁচে না,কেউ বাঁচে না
লাইফবোট নামিয়ে দেবার পর
দেখা যায় সবার জায়গাও হয় না
সমুদ্রের চোরাস্রোতে কে কোথায়
যে তলিয়ে যাবে....
দরজা বন্ধ করো, ভেতরে যাও
নিজের বধ‍্যভূমি নিজে তৈরী করো না।
মূহুর্তে শোরগোল, রাস্তা ফাঁকা
বন্ধ হল সব দরজা
এখন‌ও বন্ধ‍ই আছে।

মানুষ পারে না হেন কাজ নেই পৃথিবীতে
কালো মেঘটাকে সরিয়ে দেবার
আপ্রাণ প্রচেষ্টা।
ভোরের লাল সূর্যটাকে সে দেখবেই।
কি এক বড়ো প্রতীক্ষা যেন!
এই প্রতীক্ষার মতো অমূল্য ইচ্ছে
মানুষে আর কী থাকতে পারে।

বিশ্বাস না হলে দেখো নিজের
মনের গভীরে ডুব দিয়ে,
মনের ভিতর এক আশ্চর্য ভালোবাসা
তৈরী হচ্ছে,
জীবনের প্রতি ভালোবাসা....
কী যে এক ব‍্যাকুলতা
শরীরের লোমকূপে কী এক তীব্র ইচ্ছা
অন্ধকারের সব থাম উপড়ে ফেলার
আর সবাই মিলে সমস্বরে গান গাইবার অপেক্ষা....

গল্পটা শেষ হলে আবার আসব ফিরে
আমার জন্য একটু সময় রেখো।

মৈত্রেয়ী সিংহরায় । মেমোরি, বর্ধমান