হলুদপরী মেয়ে -শেখ মোহাম্মদ হাসানূর কবীর
ছেলেবেলাকার কথা-
তখন বামনডাঙার কাঠগড়া স্কুলে পড়তাম।
স্কুলে আমার কোনো বন্ধু ছিল না,
দরিদ্র বলে খুব একটা সমাদর ছিল না সহপাঠীদের কাছে।
স্কুলের কোল ঘেঁষে বয়ে গেছে রেল লাইন বাহাদুরাবাতঘাট অবধি
স্টেশনে ঘণ্টাবাজার সাথে সাথে জানালা দিয়ে তাকিয়ে থাকতাম
দেখতাম, ট্রেন ছুটে চলেছে বাঁধভাঙ্গা উজানের সোঁতের মতন।
পড়ায় খুব বেশি মনোযোগ ছিল না-
প্রায়ই শিক্ষকের নির্দয় মার সহ্য করতে হতো দাঁতেদাঁত চেপে;
আত্মমর্যাদা নষ্ট হওয়ার ভয়ে কেউ বসতেও চাইতো পাশে
স্কুলে আমার অবস্থাটা ছিল অনেকটা নির্বোধ গাধার মতন।
একবার কোন এক বসন্তে উৎসবে মেতেছিল সতীর্থরা সবাই
স্কুলের সবচেয়ে সুন্দর মেয়েটি হলুদপরী সেজে বসেছিল সরসীর ধারে,
মেয়েটির আবিরমাখা টোল পড়া কপোল বেয়ে যেন রক্ত ঝরছিল।
ভীষণ দুর্বল হয়ে পড়েছিলাম মেয়েটির প্রতি,
কৈশোরের সেই সাদামাটা মনে সামান্য রঙের ছোঁয়াও হয়ত লেগেছিল সেদিন।
রোজ মেয়েটির স্কুলে আসার প্রতীক্ষায় থাকতাম
নানা ছুতোয় মেয়েটির সঙ্গে ভাব জমাবার চেষ্টা করতাম।
একদিন সব সংকোচ দূরেঠেলে বঙ্কুদের বাগানের চুরিকরা গোলাপ
আর সারারাত জেগে লেখা চিঠিটা খামে ভরে মেয়েটিকে দিলাম।
পরদিন হেডমাস্টারের পিওন আমাকে ডেকে নিয়ে গেল স্যারের রুমে
বেদম মার খেলাম হেডমাস্টারের হাতে;
প্রথমজীবনের ভালোলাগা কাঁচাস্বপ্নগুলো নির্বোধ মেয়েটি
এভাবেই ধুলোয় মিশিয়ে দিল!
তারপর বাবা বদলি হলেন-
আমরাও বাবার সাথে বামনডাঙা ছেড়ে চলে এলাম দূরে,
সীমান্তের কাছাকাছি এক অদ্ভুত শহরে।
শেখ মোহাম্মদ হাসানূর কবীর। সাভার, ঢাকা
-
ছড়া ও কবিতা
-
10-03-2020
-
-