অটোয়া, সোমবার ২৩ জুন, ২০২৫
ক্ষুদিরামের ঘুম - ফরিদ তালুকদার

মি জেগে উঠেছি মা
ওরা আমাকে আর ঘুমুতে দিলো না!
আমার আত্মত্যাগ যে এখন রক্তের নদীতে ভাসে!

আমার বুকে ক্ষোভ ছিলো, আগুন ছিলো
কিন্তু এখন যে তা আপন রক্তের প্লাবনে ভেসে যায়, 
এখন যে সেখানে হিংসার আগুনে ঝলসানো কাচা মাংসের গন্ধ 
এই কি আমার সেই স্বপ্নের স্বাধীন দেশের বাতাস?

আমার নিঃশ্বাস ভারী হয়ে আসে,
আমি আর নিঃশ্বাস নিতে পারি না, আমি জেগে উঠেছি মা
শান্তির ঘুম ভেঙে, খুব বেশী যন্ত্রণা কাতর আমি এখন মা
আমার আর ঘুম হবে না!

ওরা তো জানে, দিনের ক্লান্তিকে ভুলে,  কতো কতোদিন..
একই মাটিতে বুক পেতে ঘুমিয়ে পড়েছি  আমি আর আলফাজ, 
একই বেত ঝাড়, একই নদী কিনার, 
নিঃশ্বাসে ছিলো একই পরাধীন বাতাস, 
হাতে হাত রেখে, ছিলো একই শৃঙ্খল ভাঙার প্রতিজ্ঞা
আমাদের মাঝে তো ছিলো না কোন ধর্মের বিভেদ পাহাড়? 
এই কি সেই ভারতবর্ষ?? 
দিনে দিনে এ কি রক্তাক্ত চেহারা তোমার? 
ভাইয়ে ভাইয়ের রক্তের নেশায় এ কি হোলি উৎসবে মেতে উঠা? 
এ কি হতাশার রূপ তোমার সারা অবয়বে মা?? 
তোমার এই দীনতা..
প্রতিদিন একটু একটু করে  আবারও আমাকে হত্যা করে
এ যে সেই ফাঁসির চেয়েও অনেক বেশী নির্মম মা!

হাতে বোমা, বুকে প্রতিরোধ, 
চোখে তীব্র সূর্যের মতো জ্বলজ্বলে ফোঁটে স্বাধীনতার স্বপ্ন, 
আমি তোমার সেই খোকা,  তোমার সেই ক্ষুদিরাম মা
সবটুকু বিভ্রান্ত এখন আমি, 
খুব অসহায় এখন আমার সব বোধ, সব অনুভূতি 
শতবছরের পরাধীনতা.., সেই কি ছিলো তবে ভালো?
এখন যে চারিদিকে শুধু রক্ত আর আর্তনাদ, 
অথচ কোন শত্রু নেই  এখানে আমার!
কোথায় এর অবসান? 
কার বিরুদ্ধে এখন আমি বোমা নিবো??

আমি আর ঘুমোতে পারছি না 
আমার শয়ানে অন্য মাটি দাও মা
আমি ঘুমুতে চাই, খুব বেশী ঘুমুতে চাই 
শান্তির ঘুম..!!

ফরিদ তালুকদার / ফেব্রুয়ারী ২৮, ২০২০
টরন্টো, কানাডা