রাণুবালার আহুতি - নিত্য রঞ্জন মণ্ডল
দরজা খোলা। জালনা খুলতে ভুলে গেছে। ঘরটা কেমন গন্ধে ভরা। ভাড়া ঘরে থাকি। অথচ ঘরটা নিজের করে ভাবি। আমার দিন জাপনের জীবনটা, সময় কাটায়।
রাণুবালা এসে বলল - তুমি এখনও বসে?
হাতে এক কাপ লাল চা। ঝাঁঝাল গলায় বলল - হাত মুখ ধুয়ে বসতে পারো না! কাজ থেকে এসেছ, হাত পা না ধুয়ে ঘরে ঢুকতে পারো কেন?
তোমায় দেখে লিলিও এরম করে। তোমার মেয়ে তো! ইস্কুল থেকে এসে হাত পা মুখ না ধুয়ে বিছানায় উঠে যায়।
চায়ে ঠোঁটে ঠেকাতে গরম ছেঁকা লেগে গেল।আবার ক্লান্ত শরীর গরম চা ভালোই লাগলো।
রাণুবালা ঘরের কাজ শেষ করে সেলাই মেসিনে বসে। আমার কাজের টাকায় আজকাল সংসার ভালভাবে চলে না। সেলাই মেসিনের কাজে সপ্তাহে দু'হাজার টাকার কাছাকাছি আয় করে।
রাণুবালা কয়েক দিন থেকে আমাকে একটা কথা বলে আসছে। আজ ও কাছে এসে হাসি হাসি মুখ করে বলল - জানো তো রিয়ার মা আজ ফোন করে ছিল। বলছিল আর একটা নিতে। লিলি তো বড় হয়ে গেছে। আমার ছোটো বৌদি গো, কালনায় থাকে। ছোটো বৌদি ও বলছিল, এখন নিয়ে নিতে। এর পরে নিলে অসুবিধে হবে।
একটুখানি বিরক্ত হচ্ছিলাম। চেপে রেখে আর একটা সন্তান নেবার রুচি আমার নেই। একটু থেমে বলাম - তুমি জানো আমাদের সংসারটা কেমন করে চলে।আজকাল আবার দিনদিন ঘর ভাড়া বেড়ে যাচ্ছে। তারপর সংসার খরচ বাড়ন্ত। জিনিস পত্তরের দাম বেড়ে চলেছে। লিলি আবার ফাইভে উঠল। তার লেখা পড়ার খরচ আছে। টিউশন ফি গত বছর থেকে বেড়ে গেছে।
রাণুবালা বলল - আমি দেখে নেবো। আমি বিরক্ত হয়ে বলল - হুম! সংসার চলছে না আবার। তোমার ছোটো বৌদি বা রিয়ার মা আমাদের সংসার চালিয়ে দেবে!
রাণুবালা রেগে বলল - তোমরা এত গুলো ভাই বোন কেন। আমি হেসে বলাম - আমার বাবাকে জিজ্ঞেস করে দেখতে হবে। রাণুবালা বলল - জিজ্ঞেস করে এসো। যাও। তোমার মরা বাপের কাছে জিজ্ঞেস করে এসো।
বাবা দু'বছর হলো মারা গেছে। আমরা চার ভাইবোন। আমি বড়। মা বেঁচে আছে। মা ছোটো ভায়ের কাছে থাকে।
রাণুবালা বিরক্ত আর কাঁদোকাঁদো হয়ে ঘর থেকে বেড়িয়ে গেলো।
বলগে, আমার কথার কথার কোনো দাম নেই। আমার কথা কেউ শোনে না। আমার মরণ হলে বাঁচি।
আমি হেসে ঘরের জালনাটা খুলে দূরে আকাশের দিকে চেয়ে থাকলাম। একটি তারা টিপটিপ করে আমার দিকে যেন চেয়ে রইল। এ মাসের কারেন্ট বিল হাজার টাকা এসেছে। আলোটা নিভিয়ে বসে থাকলাম। ঘরের মধ্যে একটা পাগলা বাতাস খেলে বেড়াচ্ছে।
নিত্য রঞ্জন মণ্ডল । পশ্চিমবঙ্গ, ভারত
-
গল্প//উপন্যাস
-
11-01-2020
-
-