অটোয়া, সোমবার ২৩ জুন, ২০২৫
একগুচ্ছ কবিতা - জিললুর রহমান

বলেছিলে কথা হবে 

বাড়ি ফিরে ফের কথা হবে বলেছিলে
শাদামেঘ কালোমেঘ পেঁজাতুলাভরা মেঘ 
রাজহাঁস প্রজাপতি মৌমাছির দল ফেরে ঘর
উড়ন্ত ফড়িঙ আর কর্মক্লান্ত অফিসার উঠানের শ্রান্ত শিশুরাও 

তুমিও নিশ্চয় আজ ফিরেছো ঘরেই কাজ সেরে
গায়ের গরমটুকু ডলে ডলে তুলে নিচ্ছো ঠাণ্ডা জলে 
সাবানের সফেন উল্লাসে 
সতেজ হয়েছ মুছে ঘামের গন্ধটুকুন

ঠোঁটেও ছড়িয়ে গেছে চায়ের উষ্ণতা হয়তোবা
চোখ বুঁজে ঘুরে এলে মুঘলি আজম থেকে 
অথবা নিজেকে ভেবে আফ্রোদিতি অপ্সরা কিন্নরী কেউ 
গুনগুন গলা ভাঁজো আকতারী বাই 

বাড়ি ফিরে কতো কাক নিদ্রামগ্ন এতক্ষণে
সন্ধ্যাতারা শুধু রাত জাগে আর ওপারে আরেকজন 
প্রতীক্ষার ঘামে নেয়ে ঘন ঘন উদ্ভ্রান্ত দৃষ্টিতে 
মুঠোফোন দেখে, যদি কোনো গান গেয়ে ওঠে 

বলেছিলে কথা হবে, কতো কথা বলা হয়ে থাকে
হেমন্তের মেঘের মতোন বলো এসব কথার কথা
একপল্কা বাতাস পেলে উড়ে যায় মন থেকে 
উড়ে যায় কোথায় কে জানে...

আগুন

হাড়িসরদার বাজারের ইটভাটাগুলো সব জ্বলছে
দমকে দমকে লাফিয়ে উঠছে পুড়ে যায় কাদা তাল তাল
আগুন কোথাও হলুদ কখনো কালোধোঁয়াটার রূপ নেয়

ভেতরের যত মামদোর ভূত আত্মার জটা খুলছে
ঘাসিগ্রাম থেকে লালবাগ থেকে জোড় কাননের   সুনামে 
উল্লাসে মরে ডাইনি কাহিনী ধনাইতরীতে রাত্রে

শুয়াগাজি পুড়ে মাটির নরম হৃদয়ের মোম লালচে
চৌধুরীভিলা সেবাসদনের ভুতগুলো বড় মনোরম 
পদুয়াবাজার মাত করে লাল আগুনের শিখা গনগন

রক্তকণার মহা উল্লাসে ধমনী শিরারা 
টগবগে বাঁকে কী যে ফূর্তিতে টলমল
মহাসড়কের আলোআঁধারিতে গলিঘুপচিতে   কাতরায়
ধুকে ধুকে মরা ঘাসবিচালির অবশেষ যত যাতনা
মাস্টার পাড়া বিপনি বিতানে ইটভাটা যেন জ্বলছে

কতকাল ধরে জ্বলে জ্বলে সেই মানবের মহাস্রোত 
মহাকাল থেকে মহাবিশ্বের লাভা ছোটে দিকে বিদিকে
জ্বলছে সূর্য তারকার সারি জ্বলে হোমশিখা ধূম্র
অন্তরজ্বালা জ্বালে ছারখার যত ঘরদোর সংসার
সাজানো বাসর পুড়ে ছাই হয় ফের আগুনেই সৃষ্টি 

অনাদিকালের সকল আগুন মহাবিশ্বেতে ছড়িয়ে
নবনির্মাণে অগ্নিশিখারা প্রয়োজনে জেগে উঠছে ।

নিয়তির কড়িকাঠে

 ঈমানের জোরে মেনে নিতে হয় 
তাদের ঘন্টা বেজে গিয়েছিল
আয়ুবৃক্ষের গাছে হতে পাতা 
চল্লিশ দিন আগে ঝরেছিলো বুঝি

তবু এত প্রাণ একসাথে যাবে 
শিকারের কোনো খেলনা পাখির 
বেশে ঝরে যাবে এমন কি ছিলো 
লেখা দয়াময় নিয়তির কড়িকাঠে 

তবে যার হাতে স্টেনগান ওঠে
যার আঙুলের কারুকাজে আজ
ঊনপন্চাশ বায়ু উড়ে গেল
সেকি দয়াময় নিয়োগ প্রাপ্ত দূত!

সে কি তবে আজ স্বর্গের থেকে 
রক্ত রঙিন নকশার স্রোতে
পৃথিবীর রঙ পাল্টাবে বলে
মহাসময়ের ঈশ্বর নিয়োজিত! 

তাদের বুঝিবা গায়েবে এলেম 
আমাদের নেই দিন শেষে ঘর
শাদা ভাত আর প্রেয়সীর বুক
সন্তান সুখ শান্তিতে টিকে থাকা

খোদা যা করেন মঙ্গল তরে
বান্দা খোদার ইশারার দাস
তবে আর কেন এতো হাহুতাশ
ডঙ্কা বাজায় শঙ্কা না করে আজ

ক্ষুদ্রতা হেতু ভয়ে ভয়ে থাকি
কালো রঙ নিয়ে শরমে লুকাই  
দারিদ্র হেতু নম্র কণ্ঠ
ভাগ্যের দিকে দৃষ্টি বদ্ধ রই 

বিরাট শিশু কি খেলিছে আজিকে
মানুষ নামের দাবার গুটিকে 
অনাসৃষ্টির চাল চেলে চেলে
প্রলয় সৃ্ষ্টি পুতুলের খেলা যার?

জিললুর রহমান
চট্টগ্রাম, বাংলাদেশ।