অটোয়া, সোমবার ২৩ জুন, ২০২৫
বামপন্থীদের কড়চা – ফরিদ তালুকদার

জ্জা তোমার হয় কিনা 
বলা যাবেনা
তবে…
অতীতের আয়নায় 
নিজের প্রতিবিম্ব দেখতে
ভয় পাও  তুমি
খুব বেশী ভয় পাও

বাহ্য আচরণ 
মন ও মানস 
সব কিছুতেই…
পুরোদস্তুর পেটি বুর্জোয়ার ছাপ
তোমার অবয়বে

অফিসের টেবিলে
কাঁচা বাজারের দর কষাকষিতে
দিন শেষের সন্ধ্যায়
উপাসনালয়ের দুয়ারে 
সারাদিনের সাতকাহনে 
অতি সাধারণ  এখন তোমার 
জৈবিক সব যজ্ঞ 

মৈথুনের  নিভৃত কোনে
সহধর্মিণী সহবাসে 
ভালোবাসার ফিসফাস সংলাপে ও
কোন বিশেষত্ব নেই তোমার

অচলায়তন ভাঙার স্বপ্ন 
বহুদিন ভুলে গেছ তুমি

নির্ঝঞ্ঝাট বেঁচে থাকার অমোঘ ইচ্ছায়
স্ত্রী, পুত্র, কন্যার প্রতি 
স্বার্থপর ভালবাসায়
সুযোগ পেলে ছটাক দু'আনা 
অন্যায় করে ফেলা 
তুমি এখন….
অনেকটাই ভীতু হৃদয় 
অনেকটাই…

নাহ্….
তবে সীমানার বেড়া ঠেলে 
কারোর দু'ইঞ্চি জায়গা কেড়ে নেয়ার 
অভিপ্রায়  হয়না তোমার
তুমি তাই… 
আমাদের চারপাশে থাকা
যে কোন একজন ভালো মানুষ… 
যে কোন একজন হামিদ সাহেব।

এই তুমি 
জাগতিক তুমি
হামিদ সাহেব
ভালো মন্দের হিসেবে 
কিছুটা বিবেক আর…
সমাজ শৃঙ্খলের পরিধিতে গড়া 
জীবন সমীকরণের হামিদ সাহেব 

মৃত্যু শয়ানে এখন তোমার 
ভিতরের সেই অদৃশ্য মানুষ 
কখনো কি ইচ্ছে হয়
ফিরে দেখতে তাকে?

মার্কিনী আগ্রাসন, স্বদেশী স্বৈরাচার 
পলপট বেগিনের কালো হাত
ভেঙে দেয়ার প্রত্যয়ের 
সেই ঝাঁঝাল মিছিলে 
তোমার কন্ঠ 

মার্ক্স, লেনিন, কখনো মাও
চে, চারুদা, সিরাজ শিকদার
সান্দানিস্তাদের নিয়ে
আলোচনার মত্ত টেবিলে
তোমার তারুণ্যের সূর্য সময় 

যে ভালোবাসা 
শোষকের রক্তাক্ত থাবার মুখে 
ঋজু হয়ে দাঁড়ায় 

যে ভালোবাসা
বেনিয়া বুটের নীচে পিষ্ট 
মানবতাকে তুলে ধরে ফের

যে ভালোবাসা 
বৃদ্ধ ফজর আলীর 
চোখে নিয়ে আসে
সান্ধ্য শিশিরের শান্তি… 

প্রান্তিক চাষীর ঘরে
ভাদ্রমাসী স্বচ্ছলতার মতই
বিরল সেই ভালোবাসার 
স্বপ্ন বিলাসী ছিল তোমার যৌবন 

কোথাও কি খুঁজে পাও
তার ছায়া
হামিদ সাহেব?

ভয় পাও তুমি
জানি খুব বেশী ভয় পাও 
সেই তোমার মুখোমুখি দাঁড়াতে 

এই যে 
আমি তোমার স্মরণ…

পেলাগোরনিস পাখির মত
আদিম সূর্যকে ডানায় নিয়ে তুমি
চষে বেড়াতে নীল জলের দরিয়া 

বৃষ্টির অঝোর ধারায় ভিজে
নেমে আসতে তুমি
পৃথিবীর প্রথম অরণ্য পথে

তোমার পায়ের নীচে 
তপ্ত লাভার বিকিরণ 
তোমার শরীর তাম্র বর্ণ
অবিরাম তুমি হেঁটে চলো
আদি পুরুষের পদচিহ্ন ধরে 

জুরাসিক পার্ক, বরফ, প্রস্তর যুগ
পার হয়ে তুমি আনত হও 
প্রমিথিউসের পদপ্রান্তে

নিয়ানডার্থালদের বিলুপ্তিতে
সেই কবে 
শোকাহত হয়েছিলো তোমার হৃদয়

বিজয়ের সব পতাকার নীচে
পড়ে থাকা আর্তনাদের নীরব বধ্যভূমিতে
তুমি আক্রান্ত হতে অশোকা বোধে

আদিম পৃথিবীর 
বাষ্পীয় কুণ্ডলীর মত
স্মৃতির ধূসর গহ্বরে 
হারিয়ে ফেলেছ সব আজ

আমি তোমার স্মরণ 
হামিদ সাহেব

তোমার মেরুদন্ড ন্যুব্জ
দিনের পর দিন
চেতনার অপমৃত্যু হতে হতে
তোমার কন্ঠ রুদ্ধ এখন
অনুচ্চারিত প্রতিবাদের ভাষারা সেখানে 
মরে পড়ে আছে সব
কিন্তু হৃদয় তোমাকে ক্ষমা করে নি

হয়তো সেকারনেই
তার ক্ষরণের ফোঁটা ফুল নিয়ে
রাতের অন্ধকারে
চুপিসারে যাও তুমি
গোলাপি, বিউটি, নুসরাতদের 
সমাধি পাশে
ক্ষমা চেয়ে নাও 
তোমার নপুংসক মনের 
গোপন অক্ষমতার 

একবার ফিরে দেখ
হামিদ সাহেব
তুমি একা নও 

নিজেকে খুব বেশী ভালোবেসে 
কুৎসিত কুর্নিশে
আমরা সবাই ই একেকজন 
হামিদ সাহেব হয়ে যাই 
কেউ হয়তো আরও বেশী 
কপচানো আদর্শের উল্টো মেরুতে 
বসতি গড়ে হয় 
ক্ষমতার বড় চাটুকার 

আজও তাই…
পুঁজির নগ্ন থাবার নীচে
ছিন্নভিন্ন মানবতার দেহ
গোটা পৃথিবীর অবয়ব জুড়ে

কখনোই যা আর 
বিব্রত করেনা তোমাকে এখন…!!

ফরিদ তালুকদার
টরেন্টো, কানাডা।