অটোয়া, সোমবার ২৩ জুন, ২০২৫
হৃদু পাগলের সুখ – ফরিদ তালুকদার

মার মনের মধ্যে.. 
একটা আকাশ আছে
অনেক বড় আকাশ
কখনও যার হয়না শেষ 
আকাশ পেরিয়ে 
আবার আকাশ…
অনন্তে তার ব্যাপ্তি
তাইতো…
তোমাকে নিয়ে যখন  ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখি
কিছুই ভাবতে পারিনা ছাঁদের ছোট্ট সীমানায়
শুধু মনে হয়… 
অযুত নিযুত বছর ধরে 
আমরা চড়ে বেড়াবো
সপ্তর্ষীমন্ডলের সীমানা পেরিয়ে
ছুটে চলা সেই আকাশে।

আমার মনের মধ্যে… 
আর একটা মন আছে
কোন কিছুই যে ভাবতে পারেনা ছোট করে
আর তাই…
মোহ মুগ্ধ আমার উপাসনায়
তোমার উর্বশী শরীরের 
সব ভাঁজ খুলে 
পূজারীর নিপুণ হাতে যখন
সাজাতে যাই…
কেবল ফুলের আয়োজনেই
কেটে যায় 
শুক্ল পক্ষ তিথির সবটা আমার

চঞ্চলা তোমার শ্যামা পায়ের যুগলে
পড়াই রক্ত জবার মল
সদ্য ফোঁটা কাঠগোলাপে হয়
তোমার বাঁ তনুর বাজুবন্দ 
একাদশী জোছনার পেলব ময়তা ভরা
তোমার নাভীমূল, কটিদেশে থাকে
হলুদ গাঁদার সমারোহ 
বুকে হুতাশন তোলা
তোমার গ্রীবার ঐ ঐশ্বর্য্যের জন্যে
খুঁজে আনতে হয়
হাওয়াই দ্বীপের অর্কিড 
বেইলি আর লাল গোলাপকে
পাশাপাশি স্হান দিয়ে
ধন্য করি
আকাশ ছোঁয়া তোমার ঐ  খোঁপায়

আরও কত কি…
তোমার মাথার টিকলি 
নাকের নোলক, হাতের কঙ্কণ….
দেহের সব উপত্যকায়
রাতভর ব্যস্ত থাকে আমার দুহাত
আর শেষে… 
আকাশের লাল নীল 
সব নক্ষত্রদের নিয়ে আসি
তোমার তোরণের চারপাশ 
অলংকৃত করবো বলে

দোল পূর্ণিমার রাতে 
যখন আমাদের মালা বদলের শুভ লগ্ন আসে
শুধু পৃথিবীর অতিথিরাই  নয়
সারম্ভর সে আয়োজনে  
ডেকে আনি প্লুটো,  ভেনাস, এন্ড্রোমিডার সব অধিবাসীদের।

এমনই আমার মন।

সেই ছোট বেলা থেকেই…
মায়ের কোল ঘেঁষে যখন শুয়ে থাকতাম
আমার কান জেগে থাকতো
ঘরের পূব কোনার ঐ ডুমুর গাছটিতে
কখন ডেকে উঠবে দোয়েল পাখি 
মায়ের নিষেধ ভেঙে 
এক লাফে উঠে পরতাম বিছানা ছেড়ে 
তখনো ঘুটঘুটে অন্ধকার চারিদিকে 
কিন্তু  আমার কোন সমস্যা হতনা
এক দৌড়ে ছুটে যেতাম 
দক্ষিণের বড় ঐ বকুল গাছের তলায়
তারপর  
বাড়ির সামনে বড় পুকুরের কাছে
জামরুল গাছের শাখায়
হতো আমার সূর্যোদয়

অনেক অনেক দূরে পড়ে আছে সেই শৈশব 
সব তো আর মনে আসে না
তবে
বয়সের সাথে সাথে 
আরও  আরও  বড় হয়েছে 
আমার মনের পৃথিবী 
আর সে কারনেই হয়তো
কৈশোর থেকে তারুণ্যে 
কখনো ই ভালো লাগেনি
স্কুল কলেজে পাঠ্য ক্লাসের গণ্ডি
কখনোই আমাকে আটকাতে পারেনি 
নিয়ম নিষ্ঠার শেকলে বাঁধা জীবন
বইয়ের পাতা ফেলে
সব সময়ই মন ছুটে যেত
বিশাল পৃথিবীর টানে

বাবা মা  প্রায়শঃই দুঃখ করে বলতেন
আহ্ কিছুই হলনা ছেলেটাকে দিয়ে
আমার বিভীষিকাময় ভবিষ্যতের
চিত্র এঁকে এঁকে
তারা ক্ষয়ে  যেতে থাকলেন 
মনের ভিতর  
কিন্তু আমি তো আমিই
এই  ভালবাসারই মত
সাগরের জলে সাতার না কাটলে
যেন কোন তৃপ্তি ই আসেনা আমার স্নানে

সে সবও অনেক দিনের কথা
আমি বলতাম…
তুমি শুনতে…
একটা সময় আর 
ভালো লাগতো না এগুলো তোমার
বলতে…
ছাড়োতো  তোমার এসব অবাস্তব অলীক কল্পনা 
তুমি তখন ব্যস্ত হতে
আমাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে
পাশ করে চাকরি…
বিষয় বাসনা, ছোট্ট ঘর
জীবনের জন্যে জরুরী 
এই সব মামুলি বিষয় ই
ঘিরে থাকতো তোমার চিন্তায়

আমাকে নিয়ে 
ক্রমশঃ হতাশ হতে থাকলে তুমিও 
আমি বুঝাতাম…
আর তাই…  
প্রাণপণে চেষ্টা করতাম 
দৃষ্টি সীমানার বাইরে 
উড়তে থাকা ঘুড়িটাকে 
মাটির কাছাকাছি…
তোমার স্বপ্নের 
ছোট ছাঁদের কাছাকাছি 
টেনে আনতে
চেষ্টা করতাম
মনের সেই অসীম আকাশটাকে
ঠিক মাথার উপরে নিয়ে আসতে
কিন্তু হতোনা
কিছুতেই হতোনা…
বার বার ব্যর্থ হয়ে 
আমি ফিরে আসতাম
আর
জগদ্দল পাথরের মত
বিষন্নতার এক পাহাড়   
বেড়ে উঠতো আমার বুকের ভিতর
অবধারিত নিয়তির মত 
আমি শুনতে পেতাম
আমাদের বিচ্ছেদের অশনি সংকেত  

আস্তে আস্তে মাটি ছেড়ে 
অনেক উপরে উঠে গেল
আমাদের মাঝে বিভেদের দেয়াল
আমার স্বপ্নের বড় আকাশে
আমি পড়ে থাকলাম একা
তুমি চলে গেলে...
আমার জীবনের গন্ডী ছেড়ে 
তুমি চলে গেলে দূরে… 
বহু দূরে…
অসীম সেই আকাশে 
এখনো চড়ে বেড়ায় আমার ভালবাসা
কিন্তু…
কোথাও আর খুঁজে পায় না তোমাকে 

অনেক মূল্যে আমি জেনেছি 
এই পৃথিবীতে 
ভালবাসা নয়
অর্থই প্রথম 
জেনেছি…  
হৃদয়ের ঠিকানা নয়
যখন যেখানে 
খোলা আকাশের নীচেও নয়
ভালবাসা আসে 
বন্ধ গেটের ভিলায়

বেশ আছি আমি এখন
যদিও দিনের সূর্য আর
ভাল লাগেনা এখন আমার
সারাক্ষণ তাই প্রতীক্ষায় থাকি
কখন সন্ধ্যা নামবে
এই একটাই প্রতীক্ষা থাকে
এখন আমার
জবাবদিহিতা নেই কারো কাছে
স্বাধীন…
সাগরের মত…
ঐ আকাশের মত স্বাধীন 
কখনো যাত্রী ছাওনির নীচে
কখনো উদোম ফুটপাতে 
যখন যেখানে ইচ্ছে 
শুয়ে শুয়ে গল্প করি
পূরণ তারাদের সাথে
তোমার গল্প 
আমাদের অলীক ভালবাসার গল্প 
আসলে একটাই তো গল্প আছে 
আমার জীবনে

বেশির ভাগটাই শুধু একা
ঐ নক্ষত্রের সাথে 
কদাচিত কখনো… 
হয়তো নেড়ী কুকুর 
অথবা আমারই মত আরেকজন…
বেশ কাটে পাশাপাশি 
অংশীদারিত্বের দখল নিয়ে 
কোন লড়াই নেই 
আমাদের এই পৃথিবীতে

ইচ্ছে হলে কখনো
চলে যাই সাগরের কাছে
থেমে গেলে সব কোলাহল 
সারাদিনের আক্রোশ আর 
উচ্ছ্বাসের ক্লান্তি ভুলে 
তার বুক থেকে উঠে আসা বেদনার বাতাস 
নিয়ে আসে
অন্য এক মমতা 
অন্য এক ভালবাসা
অন্য এক শান্তি…  
ঠিক তোমার খোলা চুলের ঘ্রাণের মত
সিক্ত করে দেয় হৃদয়

খুব সুখে আছি আমি
পারমিতা…
মাঝে মাঝে শুধু জানতে ইচ্ছে হয়…
এখনো কি 
তোমার অংগে শোভা পায়
হলুদ টিপ আর
লাল পলাশের হার
এখনো কি তোমাকে দেখে
গেয়ে ওঠে সব পাখিরা
বসন্ত সুখে…

জানিনা….! 
সাগরের কূল থেকে কখনো 
ফুটপাতে যাদের বদল হয়
রাতের শয়ান
সেই অস্পৃশ্যদের 
হয়তো…
এটুকুও জানার অধিকার 
থাকেনা….!?

ফরিদ তালুকদার
টরেন্টো, কানাডা।