অটোয়া, সোমবার ২৩ জুন, ২০২৫
হোমোসেপিয়ান – মহসীন বখত

চ্ছে করে ভনভন ঘোরাই বংশীদন্ড কুরসী যুবার ত্যাজে
হেঁতালের গদা হাঁকি, ভাঙ্গি সভ্যতার ঘাড়,
হাঁকিয়ে হায়দরি লাঠি মারি কামোট কুম্ভির 
প্রাচীন মাংসাশীর দাঁতগুলো চূর্ণ করি, বিছাই শত্রুর লাশ
ওমো-নদীর বালুচরায় 
যারা আমার পরদাদা লাক্কড়নানীর হাঁড়-মাংশ চিবিয়ে নধর।

কিবিশ-গ্রামে আছো যত ভাইবেরাদর 
দেখো তোমাদের
দুইলক্ষ বছরের কুটুম্ব অবাক উপত্যকায়
একদিন ঝাপিয়ে পড়েছিলাম খড়বিচালীর ভেলায়
একদিন তেলকালো তুর্কানা যুবা সিনা টানিয়ে আকাশ সমান
টাইগ্রিস-ইফ্রেতিসের প্লাবন
বহে চলেছি লোহিত-কৃষ্ণ সাগরে
জিব্রাল্টার গুহায় প্রেমে পড়েছি যুবতি হুরীর 
নিয়ান্ডার্তাল কন্যার গর্ভে বপন করেছি মানবিক বীজ
চকমকি ঘষে ফুলের নির্যাস রঙ গলিয়ে একটানে এঁকেছি 
রাগী বাইসনের ত্যাজ।

এই দেখে মূর্চা গেছে আমার পায়ের তলায় হিমযুগ
নাইল-ভ্যালীর কুমারি মাটিতে ফুটিয়েছি শস্যের অঙ্কুর
হিরালীর মন্ত্র ঝলসিত বিদ্যুৎ পাঠিয়েছি শিলাতান্ডবের বিরুদ্ধে
আবরুস পর্বতের পদযোগে বেঁধেছি ফসলের গোলা।

বাবিল প্রাসাদের ধুন্ধুমার গল্প ফেঁদে মিথ্যেকে সত্য ভাবতে 
আমাকে প্ররোচিত করেছিলে কে তুমি বাজিকর?
সহস্র সহস্র বছর আমাকে নিরন্ন রেখে অনাহারের রাজ্যে 
বানালে রাজাসন, তক্তে বসে শুভ্র বসন দেবদূত পাঠালে
ভীত হতে বললে, বেতস লতার মত প্রণত হতে নির্দেশ দিলে
নিরঞ্জন বিশ্ব নিয়ন্তার -
কে তুমি বাদশা নামদার? মন্দির মসজিদ তীর্থ প্যগোডায় 
এত ধূপধূনো আমাকে পোড়ালে অমৃতকথনে।

এ দেহ ভঙ্কুর নয়, এ দেহ সভ্যতার মিনার
এ দেহ ধনুর্বাণ 
শিকার জানে হরিণ সম্বর বনেলা শুকর
অরণ্য গিরিখাত মালভূমি বরফের রেলব্রিজ নবনাক্ত সাগর
উর্মিমুখর নদের অন্তহীন চোরাপথ মাড়িয়ে এসেছি আমি
আমাকে নেবেতো নেবে আলোকবর্ষ দূরদেশে মায়ামন্ত্র 
স্বপ্নবাজি মাখিয়ে দিয়েছি শূন্যতায়।

কার সাধ্য আমাকে ধনুর্গুণে বধে আজ অকাল বোধনে
অগ্নিঝড় পাড়ি দিতে মেনেছি  মহাযোনী পবিত্র সাধনে
মহাযৌবনের কমলরস পান করেছি থানকুনি বাসকের লতায় পাতায়
আমি উত্তরভারতে এসে মাঝরাতে গেয়েছি কীর্তিনীয়ার গান
দুগ্ধসর পূর্ণিমায় মর্দন করেছি শবর যুবতীর কুন্তল, তার খোঁপায় দিয়েছি
নাগকেশর ফুল গলায় গুঞ্জরীর মালা গেয়েছি আশ্চর্য মৃগনাভি
সুগন্ধি চুম্বন প্রাণেপ্রাণে
শবরী নারীর মায়াজালে করুণা-নৌকায়  চড়ে আমি আজ
বিশদ বঙ্গাল 

মহসীন বখত
অটোয়া, কানাডা।