শাহ্ বাহাউদ্দিন শিশিরের তিনটি কবিতা
বাহান্নের নবান্নে একাত্তর
বাহান্নের নবান্নে একাত্তর; বাহান্নের নবান্নেই এসেছে একাত্তর,
বাহান্নই বাঙ্গালীর প্রথম ডাক অধিকারের, প্রথম উন্মোচিত তোরণ।
বাহান্ন বাঙ্গালীর আগ্নি ঝরানো শপথে প্রথম গর্বিত অর্জন,
প্রথম চলার পথ, রক্তে ভেজানো প্রতিষ্ঠিত দাবীই বাহান্ন।
আজও ফাগুনের সমীরণে বাহান্নের আন্দোলনের শিহরণ জাগে,
এ যেন কিশোরী প্রিয়ার ছোঁয়ায় বুলায় পরশ বাঙ্গালীর সারা দেহে।
যখনি বাজে কানে “আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে …”
তখনি ওঠে জেগে বাঙ্গালী নতুন করে চিরপরিচিত সেই মধুর সুরে।
অমর একুশে আসে ঘুরে প্রতি বছরে বাঙ্গালীর ঘরে নিত্য নতুন সুরে,
ভাষাবীরদের অধিকারের দাবী আজও উচ্চশিরে দাঁড়িয়ে শহিদ মিনারে।
ছড়িয়ে আছে মায়া আর জড়িয়ে আছে ভালবাসা বংলায় ইতিহাস জুড়ে,
একুশে বোনা অপরাজিতা ছড়িয়ে মাতৃভাষার দাবী পৃথিবীর প্রতিটি দ্বারে।
রক্তকণায় মা বলে ডাকার প্রত্যয় পরে ছড়িয়ে বাঙ্গালীর হদপিণ্ডে,
বয়ে চলে ধমনিতে আর ধমনি থেকে শিরায় প্রতিটি বাঙ্গালীর ঘরে।
প্রতিটি ভোরে প্রতিটি রাতে একটাই নেশা, বাংলা আমার ভালবাসা,
বাহান্নের নবান্নে একাত্তর; বাহান্নের নবান্নেই এসেছে একাত্তর।
কালের সন্যাসী
একটি ভোরের প্রতীক্ষায় সময় হাতড়ে কেটে গেছে কত রজনী।
একটা সুরের খোঁজে বয়ে গেছে কত স্রোতস্বিনীর জল স্বপ্নজালে।
মন কাঁদেই-বা কেন? ব্যথার উৎস যখন আজও সন্যাসীর বেশে।
অসীমে হারায়ে নিজেরে খুঁজে পাই আমি অসার দেহের আমারে।
দিনের সকল ভাবনা যখন ডোবে, স্বপ্ন রাতের সমস্ত আকাঙ্ক্ষা ওঠে জেগে।
যায় সরে বেড়ায় কোথায় পালিয়ে দুঃস্বপ্নের কথা ভেবে প্রতিটি চন্দ্রিমা রাতে।
বিনা অজুহাতে হারায় জোছনায় ভেজা সরোবরে, জোছনা মেখে সারা গায়ে।
আঁধার রাতে ভাঙ্গা অশোকের ডালে লুকায় মুখ লজ্জা আবেশে অলক্ষণে।
অপরিচিত জীবন কাছে নেয় টেনে জানে না কিসের মোহে উড়ে বেড়ায় দূরে।
শরতের মোহে নেয় টেনে অসহায় হারানো আত্মারে নিবিড় আঁধার পথে।
নেশায় দেয় তুলে ক্ষুদ্র সম্বল অনেক বেশী পাবে ভেবে, যায় ভেসে নিঃশেষে।
রিক্ত হাতে গুপ্ত স্রোতে কাটে কাল, লুটায় সব অসারে এই প্রানহীন বাসরে।
সাজে নতুন বধুর মত লাজে, ভাবে বুঝি আজ যাবে ভেসে নব প্রেমের স্রোতে।
হারায়ে সময় ভাবে ক্ষতি-বা কি কালিমাতে? যায় যদি মুছে যা রয়ে গেছে পিছে।
এভাবেই চলে বয়ে সময় ধীরে, শঙ্কায়, অস্থিরতায়, অজানায়, অনিশ্চয়তায়।
দেয় ধোঁকা বিশ্বাসে স্বপ্ন ভেবে দুঃস্বপ্নে, হারায় আস্থা বিস্মতির অতল গহবরে।
প্রজ্বলিত প্রাণে
(১)
ঈর্ষা আর ঘৃণা ভরা জীবন দিয়ে করবে কি?
চলোমান সময়তো থামবে না।
শুধু শুধুই অসুখী হবে আর উনুনে জ্বালাবে,
প্রগতিশীল অপূর্ব ভাবনাটিরে।
(২)
কত কাল রাখবে লুকিয়ে আলোকিত পথকে?
সত্যের আভা তো মেলাবে না দূরে।
জ্বলতেই যদি হয় ঈর্ষার আগুনে কেন?
জ্বলেই দেখ না একবার অন্যের তরে মুক্ত প্রাণে।
(৩)
হিসিবি ধাঁচে কত দিন ফেলবে পা মেপে?
অজানা পথ তো থেকেই যাবে সরে।
মেকি আদর্শের গান গাইবে কত কাল জুড়ে?
নাও না ধুয়ে বিবর্তনের অবিরাম ধারে।
(৪)
ফেল না কেন ভেঙ্গে মিথ্যায় গড়া ঘৃণার পাহাড়রে?
আলোর বন্যায় কর স্নান পূর্ণ প্রাণে।
কর না কেন নির্মাণ ধ্বংসেরে বাকি রেখে?
ওঠ মেতে প্রাণে সৃষ্টির উল্লাসে।
(৫)
হাসো কেমন করে বন্ধুর অনিষ্ট হলে?
হয়তো তোমার পালা এলো বলে।
নিষ্কর্মার মত মুখ ফেরিয়ে নাও কেমনে?
যখন স্বজন তোমার বিপথের আবদ্ধ জালে।
(৬)
ধর না সাম্যের গান সকল গ্লানি ভুলে,
ক্ষমার আলোয় আর ভালবাসার সুরে।
সোনালী আলোয় উদ্ভাসিত করো,
তোমার অবচেতন স্বচ্ছ মানুষটিরে।
(৭)
ধংস স্তূপে জমানো আবর্জনা করে দূর,
বেড়িয়ে পড়ো সুন্দর শুভ্র চলার পথে।
ছুড়ে ফেলো অসুন্দর ভাবনাটিরে,
কর প্রতিষ্ঠা জ্ঞানেরে, সকল বৈষম্য ভুলে।
- শাহ্ বাহাউদ্দিন শিশির
অটোয়া, কানাডা
-
ছড়া ও কবিতা
-
05-02-2019
-
-