নকশী কাঁথা - বন্যা হোসেন
গতকাল বিকেলে হিথরোতে ল্যান্ড করার পর থেকেই মৃদু ব্যথা করছে ঘাড়ে, মাথায়। এই শীতের দেশে নিয়মিত ওভারকোট, গামবুট, স্কারফ, গ্লাভস পরা মানুষগুলোকে দেখে মায়া হয়। কাল থেকে এক্সিবিশন শুরু। বিবিসি টেলিভিশনে ডকুমেন্টারিটা দেখানোর পর থেকে অনেকে সাক্ষাতকার চায়। অস্বস্তি হয়, চটপট উত্তর দেয়ার অভ্যাস নেই। মার্গারেট নামের মেয়েটি নাছোড়বান্দা, তাঁর জীবনী লিখতে চায়। সঞ্জয় ডাট বা বিগ বি নয় যে তাঁর উপর বায়োপিক করা হবে। নেলসন ম্যান্ডেলাও নয়, মালালাও নয়। সে নিলুফার বেগম, ছাপোষা সামান্য এক নারী। সন্তানেরা তাঁর কাজগুলো দুনিয়ার বুকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে।
সাদা আর সোনালী চায়ের কাপের দিকে তাকিয়ে ভাবছে নিলুফার, জীবনটা যদি এমনি সাদায় আর সোনালীতে মেশানো হত!!
মার্গারেট কিছু প্রশ্ন পাঠিয়ে দিয়েছে ইমেইলে। প্রস্তুতি নিতে সুবিধে হবে তা-ই।
তোমার স্বামী মারা যাওয়ার দিনটি সম্পর্কে বলবে? এরকম একটি প্রশ্নের উত্তর কিভাবে দেয়া যায়। ভাবছে নীলা। নিজের কথা বলতে হবে সম্পূর্ন অচেনা লোকের কাছে … …...বেশ তো তা-ই হোক। এখান থেকেই শুরু হোক নিজকথন।
------------------------
দোতলার বারান্দায় দাঁড়িয়ে শুনলাম ছেলে অশ্রুভারাক্রান্ত কন্ঠে বলছে, “আমার বাবা যদি কাউকে দুঃখ , কষ্ট দিয়ে থাকে তাহলে তাকে মাফ করে দেয়ার জন্য অনুরোধ করছি। উনার নামাজে জানাযার আগেই দয়া করে উনাকে ক্ষমা করে দিন। বিনীত আর্তি জানাই । আর কেউ যদি উনার কাছে টাকা পেয়ে থাকেন, আমি তা শোধ করার দায়িত্ব নিলাম।”
চারদিক থেকে রোল উঠেছে, আমরা সবাই মৃত ব্যক্তিকে ক্ষমা করে দিচ্ছি। উনার কোন ঋণ নেই কারো কাছে। আর কোন পিছুটান নেই।
তানীম বাবার মৃতদেহ কাঁধে নিয়ে ট্রাকের দিকে যাচ্ছে। দেখলাম, মেয়েরা কাঁদছে, তাঁর ভাইয়েরা কাঁদছে, বোনেরা চিৎকার করে কাঁদছে। তানীম তার দুই বোনকে দুই হাতে জড়িয়ে কাঁদছে, সান্ত্বনা দিচ্ছে। বাড়ীর কাজের লোকেরা চোখ মুছছে। বৃদ্ধ ড্রাইভার কাশেম ভাই ভারাক্রান্ত হৃদয়ে দাঁড়িয়ে অশ্রু মুছছে। নারিকাল গাছের পাতাগুলি হঠাৎ বাতাসে দুলে উঠলো। তাঁর লাগানো বোগেনভালিয়া আজ কেন ফুলশুন্য মনে হচ্ছে। মাধবীলতা যেন নুইয়ে পড়েছে!
আমার গলা দিয়ে শব্দ বের হচ্ছে না , চোখের কোণে নেই কোন অশ্রুর চিহ্ন। চুপ করে আছি, সবাই ভাবছে শোকে পাথর হয়ে আছি। তাই তো, হওয়ার কথা!! কোন অনুভূতি হচ্ছে না! কাতর হতে পারছি না, শোকে পাথর হতে পারছি না!! হ্যাঁ, সে আমার জীবনের ৩৫ বছরের সঙ্গী, আমার ছেলেমেয়েদের বাবা, আমার স্বামী। তাঁর ব্যবসা, বাড়ী, সমস্ত সম্পত্তির মালিক এখন আমি। খুশী হব নাকি বিলাপ করে কাঁদবো!! ছেলেটা সবার কাছে ক্ষমা চাইলো বাবার জন্য। শুধু আমি ছাড়া। ওরা ধরে নিয়েছে, আমি স্ত্রী, সারা জীবনের সুখ-দুঃখে পাশেই ছিলাম …...আমাকে কিছু জিজ্ঞেস করার দরকার নেই।
৩৫ বছর আগে আমি এবাড়ীতে এসেছিলাম, বন্দী হয়েছিলাম। একেবারে খাঁচার পাখীর মত, আজ খাঁচা খোলা … কিন্তু আমি কোথায় যাবো!! ইব্রাহীম মাহমুদ নামের যে লোকটি আজ অন্তিম যাত্রায় গেল, ভাল মানুষের মুখোশটি পড়ে থাকলো সারাজীবন। আমাকে দৈহিক নির্যাতন, অত্যাচার, টাকা পয়সার কষ্ট দেয়নি। সে আমাকে ভালবাসতো, অন্তত বলে বেড়াতো লোকের কাছে!! সারাজীবন উজাড় করে দিয়েছে আমাকে অর্থ, গাড়ী, বাড়ী, শাড়ী, অলংকার। আমার প্রাচুর্যে সবাই হিংসে করতো। হিংসেপরায়ন মানুষগুলো জানে না তাদের সবাইকে আমি কতটা হিংসে করতাম।
-------------------
মার্গারেটঃ নিলুফার, নকশীকাঁথায় তুমি কি আঁক? আর সেই সাথে তোমার ছেলেবেলার কথা বল প্লিজ।
নিলুফারঃ নকশীকাঁথার মধ্যেই আমার জীবন কাহিনী গাঁথা। সেলাইয়ের বুননে, সুঁই সুতোর ফোঁড়ে রচনা করি কিশোরীর নারী হয়ে ওঠা, অবুঝ বালিকার মাতৃত্বে পদার্পণ, নিজের অস্তিত্বকে ভুলে যাওয়া। বাবা-মা-শীলা, সৎ মা ও তার দুই সন্তান, পুরনো ঢাকার বাড়ি আর চারপাশে ঘিরে থাকা গাছ-গাছালি। দাদুর হাতের লাগানো বড়ই, পেয়ারা, কামরাঙ্গা, আম, লিচু গাছে চড়ার স্মৃতি, ফড়িংগের পেছনে ছোটা, বুলবুলি, টুনটুন্ ফিঙে দেখে আত্মহারা হওয়া, শুয়াপোকার কাঁটা ছাড়াতে চুন লাগানো, ছাদে লাফঝাঁপ --এসব কিছুই স্মৃতির কোণ থেকে নিয়ে বুনে ফেলি এক একটি মহাকাব্য যা স্মৃতির কাঁথা হয়ে দিনভর উষ্ণতা দিয়ে যায়। ঐবাড়ীটিতে মাত্র পনের বছর কাটিয়েছি। সূর্যের ঝিকিমিকিতে স্নাত, সবুজের শ্যামলিমায় ঘেরা, পাখীর কলকাকলির মূর্ছনায় আবিষ্ট হলুদ রংগের দোতলা বাড়ীটিকে ভুলতে পারিনি। এবাড়ীটি তে পেরিয়ে গেল পঁয়ত্রিশটি বছর, আপন করে নেয়া হল না কংক্রিটের দালানের বসতবাড়ীটি। নাহ, ভুল হল আমি আপন করে নিয়েছি আমার দায়িত্বকে, দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে ভালোবাসার বীজ রোপন করিনি।
অনেক আগে জীবনের শুরুতে তাঁকে কয়েকবার বলেছি এ অর্থ, বিলাস কোনটাই চাই না। সবকিছু কেঁড়ে নিয়ে উজাড় করে সমুদ্র, নদী, আকাশ, নক্ষত্র দিয়ে ভরিয়ে দিলে। প্ররোচনা করে আমার জীবন থেকে সব আনন্দ কেঁড়ে নিয়েছিলে। আমাকে সারা পৃথিবী দিতে চাইলে, আমি কিন্তু শুধু আমার মা-কে চেয়েছিলাম।
মা-কে হারিয়েছি ছ’বছর বয়সে। মা মারা যায়নি, খুন হয়নি বা আত্মহত্যা করেনি! সে আমাদের ছেড়ে চলে গিয়েছিল। শুনেছি, বাবাকে তার পছন্দ ছিল না। ছোট বোন শীলা তখন চার বছরের। দাদা বাড়ীতে অনেক লো্কের মাঝে থাকতাম। কিছু বুঝতে পারিনি। মা চাকরী করতো একটি বিদেশী সংস্থায়। তখন আমি স্কুল যেতে শুরু করেছি। মা চলে যাওয়ার পর থেকে শীলা আর আমার স্থান হল দাদীর ঘরে। বাবার নাকি আমাদের দেখলেই মায়ের কথা মনে পড়ে, বাবার দুঃখ কমানোর জন্য আমাদের দাদীর রুমে শোয়ার ব্যবস্থা হয়। নানী বাড়ি ধানমন্ডীতে, যেতে চাইতাম খুব। ওবাড়ির নাম শুনলেই বাড়ীর লোকেরা চোখ গরম করতো। কতদিন চাচ্চুকে বলেছি, একটু মায়ের কাছে নিয়ে যাও। দাদীর কাছে বায়না ধরেছি। হাতে পায়ে ধরে কান্না করেছি মায়ের কাছে যাবার জন্যে। শীলাকে টেনে বলতাম, চল একসংগে কান্না শুরু করলে বাড়ীর লোকের টনক নড়বে। একদিন যখন হাত-পা ছুঁড়ে কান্না করছি কচি ফুপু রাগে, বিরক্তিতে কয়েকটা কথা শুনিয়ে দিলেন।
-- মা কি আর তোদের আছে নাকি?? সে এখন অন্যলোকের বউ!
তার আরো ছেলেমেয়ে হবে, সে তাদের মা হবে। তোদের রেখে সে বিদেশে পাড়ি দিয়েছে কবে আর তুই কিনা মায়ের জন্য কাঁদতে কাঁদতে শেষ হয়ে গেলি!
কথাগুলো সে বয়সে পুরোটা বুঝিনি। বুঝেছিলাম একটি কঠিন সত্য মা আর আমাদের নেই। ফুপুর কাছে কৃতজ্ঞ, সত্যটা সামনে তুলে ধরেছিলেন। সেদিনটি ছিল আমার মায়ের জন্য প্রকাশ্যে কান্না করার শেষ দিন! কষ্টটাকে বুকের গহীনে লুকিয়ে সবার সামনে নির্লিপ্ত থাকা, ঐ বয়সেই ভাল রপ্ত করেছিলাম।
বাবা বিয়ে করে নতুন মাকে নিয়ে এলেন। নতুন মা অচিরেই বাংলা সিনেমার সৎ মা হয়ে গেলেন। একটু বড় হওয়ার পর আমরা দু’বোনে বলতাম নতুন মা বাবাকে বিয়ে করার আগে সিন্ডেরেলা বইটা নিশ্চয়ই মুখস্থ করেছে। কয়েকটি ঘটনা পর পর ঘটে। কচি ফুপুর বিয়ে হয়। আমাদের শেষ আশ্রয়স্থল দাদী মারা যান। বাবা নতুন স্ত্রীর গর্ভে জন্মানো সন্তানদের নিয়ে ব্যস্ত। আমাদের দিকে ফিরেও তাকান না। খাবারটা জুটতো প্রতিবেলা … তবে তার জন্য খুব ভোরে উঠে স্কুলে যাওয়ার আগে আমাকে আর শীলাকে রান্নার কাজে সাহায্য করতে হত। স্কুল থেকে বাড়ী ফেরার পর নতুন মা তার বাচ্চাদের আমাদের দুবোনের কাছে দিয়ে দুপুরের ভাত-ঘুমটি সেরে নিতেন।
তখন আমার চৌদ্দ বছর। স্কুলে যাওয়া আসার পথে পাড়ার এক বড় ভাই গল্প করতো। দুবোন তখন ভিন্ন স্কুলে পড়তাম। আমার ছুটি হত দুপুরে, ফেরার সময় একা ফিরতাম। বড় ভাইটিকে ছোটবেলা থেকে চিনি। একই পাড়ায় বাড়ী। নানান এলোমেলো গল্প হত তার সঙ্গে। প্রতিদিন আসা যাওয়ার পথে আমাকে সংগ দিতো। কিছুটা হৃদ্যতা হল, সম্পর্কটা ছিল একেবারে নির্ভেজাল। আমার প্রতি কোন বিশেষ আগ্রহ প্রকাশ করেনি বা ইঙ্গিত দিলেও বুঝতে ব্যর্থ হয়েছি। তাকে কোন একসময় বলে ফেললাম মায়ের জন্য আমার গভীর গোপন আকুতির কথা। মায়ের নাম উচ্চারণ করা নিষিদ্ধ বাড়ীতে। পাড়াতুতো ভাইটির সংগে গল্পে গল্পে সেই নিষিদ্ধতার বেড়াজাল অতিক্রম করেছি অনায়াসেই। তাকে বলতে গিয়ে আমি অনুযোগ অভিযোগ করেছি, পরিবারের বিরুদ্ধে তর্জন-গর্জন করেছি, শাপ-শাপান্ত করেছি। ভারাক্রান্ত হৃদয় হালকা করেছি।
একদিন জানালো, নিয়ে যাবে মায়ের কাছে। খোঁজ নিয়ে এসেছে, মা এমূহুর্তে দেশে আছে, ধানমন্ডীতে নানীর বাসায়। কথা হল, পরদিন স্কুল থেকে বেড়িয়ে ওর সাথে মায়ের কাছে যাবো। এক সেট কাপড় নিয়েছিলাম স্কুলব্যাগে, বাথরুমে স্কুলের পোশাক বদলে সুন্দর গোলাপী চিকনের থ্রী পিস পরে বের হলাম। হা করে দেখেছিল। বুঝিনি চোখের মুগ্ধতা। মা-কে দেখতে পাবো সেই আনন্দে বিভোর ছিলাম। ভয়ও পাচ্ছিলাম মা যদি আমাকে চিনতে না পারে …...ভয় পাচ্ছি বাড়ীতে কেউ জানে না, ভয় পাচ্ছি শীলাকে কি বলবো এই ভেবে … যাহোক দেখা যাবে!
আগে মা-কে তো দেখে নিই। মায়ের গায়ের গন্ধটা কি সুন্দর ছিল। অপ্সরীর মত চেহারা মায়ের, ধারালো চোখমুখ, লম্বা, একহারা ছিপছিপে গড়ন, পিঠের মাঝ বরাবর সুন্দর করে ছাঁটা চুল। প্রতিদিন সকালে অফিসে যাওয়ার সময় কি সুন্দর পরিপাটি হয়ে তৈরী হত। মায়ের হাতব্যাগ, জুতো, শাড়ী সব ম্যাচিং হত!! সকালে নাশতার টেবিলে সবাই চেয়ে থাকতো আমার মায়ের দিকে। আমাকে আর শীলাকে আদর করে, বাবার সংগে গাড়ীতে উঠে মা বেড়িয়ে যেতো। শেষ আদরের দিনটি এখনও চোখের সামনে স্পষ্ট। মা কাছে এলেই হাস্নাহেনার সৌরভ ছড়িয়ে পড়তো চারদিকে … আমার চুলে হাত দিয়ে গালে গাল লাগিয়ে চেপে ধরতো বুকের ভেতরে। মায়ের বুকের ঘন উত্তাপ টের পেতাম। মায়ের গালে চকাস চকাস করে চুমো দিতাম। এক হাত দিয়ে আমার চিবুকে হাত রেখে মা বলতো,
--স্কুল থেকে ফিরে দাদীর কথা শুনবে। লক্ষী মেয়ে হয়ে হোম-টাস্ক শেষ কোর। শীলাকে নিয়ে গাছে চড়বে না। ওকে তুমি সামলাতে পারবে না বুড়ী মেয়ে!!
আদর করে মা আমাকে ‘বুড়ী মেয়ে’ ডাকতো। আদরে আচ্ছন্ন হয়ে মুগ্ধতার আবেশে চোখ বুজে থাকতাম। অদ্ভুত ভাল লাগায় মায়ের হাস্নাহেনার সৌরভে স্নাত হয়ে প্রজাপতির মত উড়ে স্কুলে পৌঁছে যেতাম।
শৈশবের কথা ভেবে আমার কিশোরী মন কল্পনার রাজ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছিল। একবার মায়ের সংগে দেখা হলে আর ফিরে আসবো না। চললাম দুজনে স্কুটারে ধানমন্ডির উদ্দ্যেশে। বাইরে আকাশে বিদ্যুতের ঝলকানি শুরু হয়েছে। ঝোড়ো বাতাস, মেঘের গর্জন আর তুমুল বৃষ্টিতে পুরো প্রকৃতি যেন প্রলয়ের দামামা বাজাচ্ছে। বাড়ীটা কিছুতেই খুঁজে পাওয়া যায় না। আমি তো রাস্তা-ঘাট সম্পর্কে অজ্ঞ, যা বলছে মেনে নিচ্ছি। অনেক ঘোরার পর এক বাড়ীর সামনে এসে স্কুটার থামে। বৃষ্টির কারণে নজর করিনি, কোথায় এলাম। ভেতরে ঢোকার সংগে সংগে বুঝেছিলাম এ বাড়ীতে কিছুতেই মা থাকতে পারে না। সে-ই প্রথম ভয় পেলাম। ভীত -সন্ত্রস্ত হয়ে সংগীটির দিকে তাকালাম। আমাকে বসতে বলে বাড়ীর ভেতরে ঢুকে গেল। বুঝিনি কি হতে যাচ্ছে।
অল্পক্ষনের মধ্যেই দেখি অনেক লোকজন চারদিকে। বুঝলাম সে আমাকে তার বাড়ীতে নিয়ে এসেছে। নিজের বাড়ীতে ফিরে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই বাধাপ্রাপ্ত হলাম। ওর মা আদর করে কাছে বসালেন। মাথায় হাত বুলিয়ে কিছু খাবার খাওয়ালেন। আমি আবারও যখন বাড়ী ফেরার জন্য উন্মুখ তখন তিনি বোঝালেন তার ছেলে যেহেতু আমাকে নিয়ে এসেছে এখন থেকে এটাই আমার বাড়ী। আমি সব কথাগুলো তখনও বুঝিনি। মা-কে দেখার উত্তেজনার আতিশয্যে আর অসীম আগ্রহে বাড়ী থেকে বেরিয়ে এসেছি। মুদ্রার অপর পিঠে যে অন্য কিছু থাকতে পারে তা তো আমাকে কেউ শেখায়নি!
ওর মা বললেন, “তুমি যদি বাড়ী ফিরে বল যে, আমার ছেলে তোমাকে ফুঁসলিয়ে নিয়ে গেছে তাহলে ওর জেল হবে। শান্ত হয়ে বস। কাজী ডেকে আজ রাতেই তোমাদের বিয়ের ব্যবস্থা করছি!’’
এসব শুনে হতচকিত, বিহব্বল অবস্থায় মাথা একেবারেই কাজ করছিল না। বারবার তাকে বোঝাতে চাইলাম আমি ওর সাথে বের হয়েছিলাম মায়ের কাছে যাওয়ার জন্য, কিন্তু কে শোনে কার কথা! ওদের পরিবার আমার মায়ের কথা খুব ভাল করেই জানতো। তারা আমার কথার কোন মূল্যই দিল না। বহু দিন পরে সেদিনের ঘটনার গুরুত্ব আমি বুঝেছিলাম। কেন তারা আমার আর ইব্রাহীমের বিয়ে দিতে চান ঐ রাতেই!
আমার পরিবারটি ছিল শিক্ষা-দীক্ষা, রুচি, সংস্কৃতি আর আভিজাত্যে সমাজে অগ্রগামী। অন্যদিকে, ইব্রাহীমের পরিবারে শিক্ষার কোন চল ছিল না …...এবং শিক্ষা-দীক্ষার প্রতি অনাগ্রহের কারণে অঢেল পয়সা থাকলেও ওরা উঁচুতলার সমাজে অভিজাত হিসেবে স্বীকৃতি পেতো না। ওদের ছিল স্বর্ণের ব্যবসায় বংশানুক্রমে। অনেক বেআইনি লেন-দেনও করতো। আর করতো রাজনীতি। পাড়ার গুন্ডামী, মাস্তানীতেও এরাই সর্বসেরা !!!
একরাতে আমি সর্বস্ব হারিয়েছি। ওরা আমাকে বাড়ীতে পৌঁছে দিতে পারতো। কিন্তু আমার বাড়ী থেকে পুলিশ কেস করার সম্ভাবনা ছিল। নাবালিকা কিডন্যাপিংয়ের কেসে ওরা ফেঁসে যেত। সবচেয়ে সহজ সমাধান বিয়ে। যত দ্রুত বিয়ে দেয়া যায় তত সহজে প্রমাণ করা যাবে, আমি প্রেমিকের সাথে পালিয়ে এসেছি। ঐ রাতে আমাকে মায়ের ঘরে শুতে দেয়া হলো। পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠেই বিয়ের আয়োজন। মনে পড়লে এখনো লজ্জায়, ঘেন্নায়, ধিক্কারে মাটির সাথে মিশে যাই। কেঁদেছি, চিৎকার করেছি, দুএকজনকে চড় থাপ্পড়ও দিয়েছি। আমার মতামতের কোন মূল্য ছিল না ওখানে।
আমার স্বনামধন্য ভদ্র রুচিশীল, অভিজাত পরিবার যখন শুনলো তাদের বাড়ীর মেয়ে স্বেচ্ছায় বিয়ে করেছে ঐ লোক্লাসকে, তারা আমাকে নিয়ে যাওয়ার কোন ব্যবস্থা তো করলোই না, উপরন্তু পুরোপুরি ত্যাগ করলো। জানিয়ে দিল, ওবাড়ীর পথ আমার জন্য বন্ধ। বিয়ে হয়ে যাওয়ার পর আর কোন বাধা ছিল না ওবাড়ীতে যাওয়ার। আমি দৌড়ে পালিয়ে চলে গিয়েছি। কিন্তু সুশীল সমাজের লোকেরা নিরাপদ দূরত্বে ছিলেন। কথায় বলে, বিয়ের পরে মেয়েদের বাপের বাড়ীর চৌকাঠ উঁচু হয়ে যায়। আমার জন্য সে চৌকাঠ হিমালয় পর্বতের মত উঁচু হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে রাতারাতি। একই পাড়ায় থেকে আমার অচ্ছুত মুখ দেখতে যাতে না হয়, তাই আমার পরিবার ১৫ দিনের মধ্যে এক বিঘা জমির উপর তৈরী বাগানসহ বাড়ীটি বিক্রী করে শহরের আরেক প্রান্তে ভাড়া বাড়ীতে উঠে যায় । মানসম্মান ধুলায় লুটিয়ে দিয়েছি, সমাজে মুখ দেখানোর অবস্থা নেই ---এসব ছিল তাদের অভিযোগ! একটি মানুষও বিশ্বাস করলো না, আমি শুধুমাত্র মা-কে দেখতে চেয়েছিলাম। ১৪ বছরের কিশোরী ভুল করেছে বলে তাকে ক্ষমা করে দেয়ার কথা কেউ ভাবেনি। বাবা, নতুন মা, চাচা চাচী ফুপু সহ সবাই আবার মা-কেই দোষারোপ করলেন। আমিও তো মনে মনে মা-কেই দূষছিলাম!!
পুরো ঘটনার নাটের গুরু আসামী ইব্রাহীম কাউকে কিছু বললো না। অহংকারে তার মুখ জ্বলজ্বল করছিলো। তার সব বন্ধুরা আমাকে দেখতে এসেছিলো, বন্ধুরা পিঠ চাপড়ে গেছে কচি বউয়ের সৌন্দর্য দেখে। সারাজীবনে বহুবার ভালোবাসার কথা বলেছে, দিতে পারিনি তাকে সেই ভালোবাসা। যে সম্পর্ক শুরু হয়েছে প্রতারণা দিয়ে সেখানে ভালোবাসার স্থান আস্তাকূড়ে!
মনে যাই বলি না কেন, এসম্পর্ক একসময় আমাকে মেনে নিতে হয়েছে। যার বাপের বাড়ী নেই, যার পক্ষে কথা বলার কেউ নেই সে একা কতটা সংগ্রাম করতে পারে? শ্বাশুড়ী, স্বামী, ননদ সহানুভূতিশীল ছিলেন, তারপরও কিছু আত্মীয়স্বজন সারা জীবন মা-কে নিয়ে খোঁটা দিতো। একে একে আমাকে মানিয়ে নিতে হয়েছে, ভুলে যেতে হয়েছে আগের জীবন। ছেলেমেয়ে হলো। পড়ালেখাটা আর হলো না, কিন্তু ছেলেমেয়ের পড়ালেখা বন্ধ হতে দেইনি। ওরা যখন পড়তো ওদের সাথে আমিও পড়ে নিতাম। বড় মেয়ে আইন নিয়ে পড়া শুরু করলো আমারও আইনের বইগুলো পড়া হলো। ছোট মেয়েটা কমার্স পড়তো, ওর সাথে আমিও বাণিজ্য বিষয়টা বুঝে নিতাম। ছেলে যখন ডেন্টালে সুযোগ পেল ওর সাথে বিজ্ঞান আর শরীরবিদ্যার কিছু পাঠ নিতাম। ছেলেমেয়েরা আমার আগ্রহ উপলব্ধি করতে পেরেছে, আমাকে ওদের জীবনের খোলা হাওয়ার হিমেল স্পর্শ কিছুটা হলেও পেতে দিয়েছে। আমি তাতেই খুশী। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার সনদ আমার নেই। আমি সুশিক্ষিত নই, স্বশিক্ষিত। এই অর্জন একদিনে আসেনি, অপেক্ষা করতে হয়েছে বহুদিন।
---------------------------
মার্গারেটঃ তোমার জীবনের সব কথাই বললে, কিন্তু কবে তোমার কাঁথা সেলাই শুরু হল আর কিভাবে?
নিলুফারঃ শাশুড়ী আমার কষ্ট বুঝতেন। সেই বালিকা বেলাতেই আমাকে কাছে ডেকে রান্না, সেলাই, হাতের কাজ শেখাতেন। সেলাইয়ে আমার আগ্রহ দেখে বড় বড় কাঁথা সেলাই করতে দিতেন। সেই থেকে আমার কাঁথা বোনার শুরু। আবিষ্কার করলাম এক ভিন্ন জগত। এ জগতের রাণী সুঁই সুতোর টানে মানবজগতের চিত্র এঁকে দিতে পারে অনায়াসে। কল্পনার ঘুড়িতে আমি উড়ে বেড়াই গ্রহ, নক্ষত্রের মাঝে, পাখী হয়ে যাই ছেড়ে আসা জীবনে, কত গল্প গাঁথি ,রাতের আকাশের সবচেয়ে উজ্জ্বল তারা হয়ে বাবা, মা, ছোট ভাই বোনদের মানস জগতে ঢুকে পরি।
মার্গারেটঃ শুনেছি, তোমার স্বামী অনেকদিন নিখোঁজ ছিলেন?
নিলুফারঃ গত পাঁচ বছরে জীবনের আমূল পরিবর্তন হলো। আমার স্বামী ফেঁসে গেল রাজনৈতিক খুনের মামলায়। ধরা পরার ভয়ে পালিয়ে গেল বাড়ী থেকে। ব্যবসার দায়িত্ব আমাকেই নিতে হল। বৈষয়িক ব্যাপারগুলো বুঝে নিতে বাধ্য হলাম।
মার্গারেটঃ তোমার পরিবারের ব্যাপারটা খুব স্ট্রেঞ্জ। তারা কি কখনো যোগাযোগ করেনি?
নিলুফারঃ বাবা মারা গেছেন দুবছর হয়। ক্যান্সার হয়েছিল। মারা যাওয়ার আগে আমাকে দেখতে চান। হলি ফ্যামিলি হাসপাতালের বেডে শোয়া বাবাকে চিনতে কষ্ট হয়েছিল। মৃত্যুর দুদিন আগে বড় মেয়েকে দেখে তাঁর কি অনুভুতি হয়েছিল জানা নেই। প্রথম দিন কোন কথা হয়নি। শুধু হাত ধরেছিলেন। দুজনের অশ্রুধারায় হৃদয় প্লাবিত হয়েছিল। পরদিন আমাকে ফিসফিস করে বললেন তাঁকে ক্ষমা করে দিতে। আমার সন্তানদের দেখে তাঁর চোখে আনন্দের ঝিলিক দেখেছিলাম ক্ষণিকের জন্য।
ছোট ভাই বোনদের সাথে সম্পর্ক ঝালিয়ে নেয়ার সুযোগ এলো। প্রায়ই আসে ওরা আমার কাছে। ইব্রাহীম না থাকাতে বেশ স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। শীলা নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর। আমার সেই ছোট্ট বোনটি একজন বিজ্ঞানী। সংসার, স্বামী, সন্তান নিয়ে সফলতার ঔজ্জ্বল্যে ভরপুর মুখটি। ভাই দুটি নতুন মায়ের ছেলে হলেও দেখলাম, এতদিনের না দেখা বোনটির প্রতি মায়া আছে। ছোট বেলায় ওদের ন্যাপি পরিস্কার অনেক করেছি। বিধাতার কী লীলা! বাবা মারা যাওয়ার পর নতুন মা ঘন ঘন আবির্ভূত হতে শুরু করলেন। ছেলের বউদের সাথে বনিবনা নেই, সেই কেচ্ছা যখন আমাকে গিলতে হয় ...আমি ভাবি করুনাময়! এক জীবনেই কি সব দেখিয়ে দেবেন!
সবচেয়ে মজার ব্যাপার কি জানো, আমার মায়ের সাথেও যোগাযোগ হয়েছে। মা বহু বছর বিদেশে থেকে ইদানিং ঢাকায় ফিরে এসেছেন। দুই মেয়েসহ আমার সংগে দেখা করে গেছেন। সত্তর বছরেও অপরূপ সুন্দরী। একই মায়ের পেটের সেই অর্ধেক বোনেরা নিয়মিত খবর নেয় আমার। না , কোন অভিযোগ নেই আমার মায়ের কাছে। সবাই তার জীবন সুন্দর করে সাজাতে চায়। মা-ও চেয়েছিলেন। এই আর কি ……...।
----------------------
মার্গারেটঃ আচ্ছা, তোমার স্বামীর কি হল? কতদিন আত্মগোপন করেছিল সে?
নিলুফারঃ আমি মাসে/ দুমাসে একবার যেতাম লোকটাকে দেখতে। টাকা পয়সাসহ কিছু প্রয়োজনীয় জিনিষ নিয়ে যাই প্রতিবার। এভাবেই পাঁচ বছর কেটে গেল। সে একেক সময় একেক জায়গায় থাকে। রাজনৈতিক খুনের অভিযোগ তাঁর বিরুদ্ধে, অর্থাৎ তাঁর নির্দেশে দলের কর্মীকে খুন করা হয়েছে। উপরমহল থেকে আত্মগোপনের নির্দেশ আসে। এভাবেই চলছিলো পাঁচ বছর ধরে। তারপর সেই দিনটি এলো যেদিন সে দুপুরের ভাত শেষ করে আর উঠতে পারেনি। স্ট্রোক। হাসপাতালের নেয়ার সংগে সংগে সব শেষ।
মার্গারেট, তোমার পাঠকেরা গল্পের এ পর্যায়ে এসে হয়তো ভাববে, এবার আমার মুক্তি ঘটবে। মুক্তি কিসের? ঐ শুরুর দিকে ছাড়া কোন নিষেধাজ্ঞার প্রাচীর আমাকে পেরোতে হয়নি। মানুষটি জেনে গেছিলো আমার দৌড় কতদূর। একজন মানুষ মরে গেলেই কি সব শেষ হয়ে যায়? হ্যাঁ, তার অর্থ, বিত্ত, সম্পদ, পদমর্যাদা এগুলো আর কাজে আসে না। কিন্তু তার ভাল বা মন্দ কাজের রেশ কি থেকে যায় না?
------------------------------------
মার্গারেট নড়েচড়ে বসে। এতক্ষণ একটানা কথা বলে যাচ্ছে নিলুফার। সে প্রশ্ন করে,
-- তুমি আজই প্রায় পুরো গল্পটা বলে দিলে, তারপরও কয়েকদিন সময় লাগবে খুঁটিনাটি গ্যাপ গুলো ভরিয়ে নিতে। শেষ করার আগে জানতে চাইবো ….তুমি কি স্বামীকে ভালোবেসেছিলে???
নিলুফারঃ অনেক অনেক মেয়ে আমার চেয়ে দুর্বিষহ অবস্থায় থাকে ,তারাও মানিয়ে নেয়। আমিও মেনে নিয়েছি ভাগ্যকে। কিডন্যাপার বা ডাকাতকে ভালোবেসার অনেক গল্প-গাঁথা আছে। ইব্রাহীম মায়া করতো, যত্নশীল খুব ছিলো না, তবে শারীরিক নির্যাতন, আর্থিক কষ্ট এসব আমাকে পোহাতে হয়নি। চৌদ্দ বছরের একটি মেয়ে যখন দাম্পত্য জীবন শুরু করেছিল, পনের বছরের বড় স্বামীর সাথে …… শোবার ঘরের দরজা বন্ধ করে যা হতো তা ঐ কিশোরীর কাছে ছিল ঘৃণ্যতম বাধ্যবাধকতা। দুই দেহ এক মনের ব্যাপারটা বুঝিনি। পঁয়ত্রিশ বছর আগে ‘ম্যারিটাল রেপ’ কি জানতাম না। আজ বুঝি। তারুণ্যের উপলব্ধি হওয়ার আগেই আমি মা হয়েছি। পর পর তিনবার। রোবটের মত দায়িত্বে বাঁধা জীবন ছিল আমার। তবে হ্যাঁ, একটা বিষয়ে আমি সত্যিই তাঁর কাছে কৃতজ্ঞ। .সংসার নিয়ে মাথা ঘামানোর সময় ছিল না ইব্রাহীমের। .আমি মনের মাধুরী মিশিয়ে আদরে শাসনে বাচ্চাদের বড় করতে পেরেছি। যদিও কলেজ পেরুনোর পর মেয়েদের বিয়ে ঠেকানোর জন্য বেশ কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে। মায়া ছিল, মমতা ছিল, দায়িত্ব ছিল, কর্তব্য ছিল --- কিন্তু ভালোবাসা! চোখে চোখে মনের কথা বলা, চোখে হারানো, না দেখলে বুকের ভেতর উথাল-পাথাল। এগুলোর অস্তিত্ব বুঝিনি, নিছক প্রেম করা হয়ে ওঠেনি। তাঁর অনুযোগ-অভিযোগ ছিল কেন ভালোবাসার প্রতিদান দিচ্ছি না। আমি নির্বিকার, নিরুত্তর।
প্রতারণা, প্রবঞ্চনা, শঠতা, ছলনা … শব্দগুলো খুব মামুলি নয় আমার জন্য।
দেহ, শরীর, এক আয়ুস্কাল দিয়েছি, কিন্তু হৃদয়!
অর্থ, বিত্ত, রূপসী স্ত্রী, অনুগত সন্তান সব তাঁর ছিল। ঝিনুকের খোলস ছাড়িয়ে মুক্তোর সন্ধান সে পায়নি। শ্রান্তিহীন প্রয়াসে খুঁজেছে সে অপরূপ রত্নটি,, ক্লান্তিকর ব্যর্থতায় হার মেনেছে । ঝিনুকের ভেতরের রত্নটি একান্তই আমার নিজস্ব ।
-------------------------------
মার্গারেটঃ শেষ করার আগে অন্য একটি প্রশ্ন করছি। এক্সিবিশনে তোমার কয়টি কাঁথা প্রদর্শিত হবে? আর মোট কতগুলো সেলাই করেছো?
নিলুফারঃ বিশটি কাঁথা নিয়ে এসেছি। সারা জীবনে একশ দশটি কাঁথা বুনেছি। বাড়ী বদল করার সময় এগুলো বেরুলো। সেই থেকে ছেলেমেয়েদের মাথায় ভূত চাপলো মায়ের প্রতিভাকে হাইলাইট করতে হবে। দেশে ফাইভ স্টার হোটেলে প্রদর্শনী। বিবিসি এলো ডকুমেন্টারী করতে। বিক্রী হচ্ছে আকাশ্চুম্বী দামে। অনলাইনেও বিক্রী হয়। কিছু মেয়েকে কাজ দিয়েছি ডিজাইন দেখিয়ে দিই, ওরা সুন্দর কাজ করে।
আচ্ছা, আজ তাহলে এখানেই শেষ করি। আবার দেখা হবে।
মার্গারেট তাকিয়ে দেখে অসাধারণ প্রতিভাবান, পরিশ্রমী, বলিষ্ঠ চরিত্রের এই নারীটির প্রস্থান। ঋজু অথচ সংবেদনশীল এই রমনীর নকশীকাঁথা --- জীবনকথা রচনার এক অনবদ্য শৈল্পিক নিদর্শন। জীবনের বাঁকে বাঁকে এমন মণি -মুক্তো কতই ছড়িয়ে থাকে। সাগর ছেঁকে সেই মুক্তোর সন্ধান ক’জনই বা পায়?
বন্যা হোসেন
অটোয়া, কানাডা।
-
গল্প//উপন্যাস
-
02-02-2019
-
-