পরিবর্তনের স্বপ্ন - জয়দীপ মুখোপাধ্যায়
সমীরণবাবু ইদানিং মেয়ের করা নজরদারিতে আর ডাক্তারের পরমর্শে নিজের মেজাজটাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সকাল সন্ধ্যা নিয়ম মেনে মেডিটেশন করছেন।
বেসরকারি চাকরির উঁচুপদে থেকে পাঁচবছর হলো অবসর নিয়েছেন। মেজাজী, রাশভারী, সৎ অফিসার ছিলেন। ওনার সাথে কথা বলতে অফিসের জুনিয়ররা রীতিমত ভয় পেত। অবশ্য যোগ্য জুনিয়রকে সবার সামনে প্রশংসা করতে এবং প্রমোশন সুপারিশ করার কাজটা উনি ভালো করতেন। কাজের জায়গায় মোবাইল হাতে সোশ্যাল মিডিয়াতে বিচরণ ওনার দুচক্ষের বিষ ছিলো। কতো লোককে যে এরজন্যে শোকজ করেছেন তার ইয়াত্তা নেই।
অবসরের পর উনি মাথায় কালো রংকরা ছেড়ে দিতেই একরাশ মাথাভর্তি সাদা চুল বেরিয়ে এলো। স্ত্রীকে নিয়ে ঘুরে বেড়িয়ে, বই পড়ে, মোবাইলের ইউ টিউব দেখে সময় ভালোই কাটছিল ওনার। মেয়ে - জামাই নাতনি ব্যাঙ্গালোরে থাকে। উনিও সস্ত্রীক মাঝে মাঝে নাতনির সান্নিধ্য পেতে সেখানে কয়েক সপ্তাহ করে কাটিয়ে আসেন। শরীরটাকে ঠিক রাখতে ইদানিং সমীরণবাবু ও ওনার স্ত্রী মৌমিতা সকালে মাঠে হাঁটতেও যাচ্ছিলেন।
সম্প্রতি দুটো ঘটনায় সমীরণবাবুর মন বড়ো বিক্ষিপ্ত হলো। একদিন দুপুরে গাড়ি নিয়ে ব্যাঙ্কের কাজে যাচ্ছেন। ড্রাইভার যতীন ভালোই গাড়ি চালায়। গাড়িটা স্পিডেই চলছিল একটা পুলিশের জিপের পিছন পিছন। সমীরণবাবু লক্ষ্য করলেন সামনের জিপে ড্রাইভার ছাড়া দ্বিতীয় কোনো আরোহী নেই। চৌমাথায় সিগন্যাল লাল হতেই দেখলেন সামনের জিপটা সিগন্যাল না মেনেই এগিয়ে যাচ্ছে। উনিও যতীনকে বললেন গাড়িটাকে ওই জিপের পিছন পিছন নিয়ে যেতে। যতীন প্রথমে রাজি ছিল না, কিন্তু সমীরণবাবুর ধমক খেয়ে ট্রাফিক সিগন্যাল ভেঙে পুলিশের গাড়ির পিছন ধরলো। চৌমাথা পেরোতেই সাক্ষাৎ যমদূতের মতো সাদা পোশাকের ট্রাফিক পুলিশ এসে ওনার গাড়ি ধরে বললো,"গাড়ি সাইড করুন। লাইসেন্স বার করে দেখা করুন।"
"পুলিশের গাড়িটাকে ছেড়ে আমাদের গাড়িটা ধরলেন কেন?" সমীরণবাবু গাড়ির জানালা দিয়ে ট্রাফিক সার্জনের সঙ্গী সিভিক পুলিশকে বললেন।
"সে জবাব আপনাকে দেবো না। তাছাড়া পুলিশের ইমার্জেন্সী থাকে।" ট্রাফিক পুলিশ এগিয়ে এসে জবাব দিল।
"কিন্তু সামনের গাড়িতে তো শুধু ড্রাইভার ছিলো। আপনি ইমার্জেন্সী জানলেন কীকরে?"
সেযাত্রায় যতীনের মধ্যস্ততায় দুশো টাকা ফাইন দিয়ে বেরিয়ে এলেও সমীরণবাবু মনে মনে বিস্তর রেগে রইলেন।
একসপ্তাহ পরের ঘটনা। সকালে বাজার যেতে থলি হাতে বেরিয়ে উনি বড়ো রাস্তা পেরোতে রাস্তার ধারে অপেক্ষা করছিলেন সিগন্যাল লাল হবার জন্য। সিগন্যাল লাল হতেই উনি এবং আরো দুএকজন রাস্তা পেরোতে লাগলেন। ঠিক সেই সময়েই পুলিশ লেখা একটা বাইকে চেপে সাধারণ পোশাকে এক যুবক লাল সিগন্যাল ভেঙে এগিয়ে যেতে লাগলো। সমীরণবাবু আগে থেকেই পুলিশের ওপর রেগে ছিলেন। আজ আবার পুলিশের ট্রাফিক রুল ভাঙা দেখে তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলেন। জোরে বলে উঠলেন,"পুলিশ বলে কি সাপের পাঁচ পা দেখেছেন? ট্রাফিক রুল ভাঙছেন।"
যুবক বাইকের স্পিড আস্তে করে বেশ রুঢ় স্বরে জবাব দিলো, "এই বুড়ো, বেশি নিয়ম দেখালে লকআপে ভিতরে পুরে দেবো।"
সমীরণবাবু স্তব্ধ হয়ে গেলেন। বাইক বেরিয়ে চলে গেছে।দেশে কি নিয়ম কানুন কি কিছুই নেই? পুলিশের জন্য কি কোনো নিয়ম খাটে না? এরকম কতোশত চিন্তা করে বাজার করে উনি বাড়ি ফিরলেন।
এরপর সমীরণবাবু মাথায় এক অদ্ভুত আইডিয়া খেলে গেলো। বিকেল হলেই রোজ উনি ট্রাফিক সিগন্যালের কাছে হাজির হতে শুরু করলেন। রেড সিগন্যালে গাড়ি দাঁড়ালেই উনি মোবাইলের ভিডিও তোলা শুরু করেন। কজন সিগন্যাল মানছে না, তা ভিডিও রেকর্ড করে রাখেন। এরকম পনের দিন রোজ বিকেলে একঘন্টা করে ট্রাফিক সিগন্যালের পাশে দাড়িয়ে প্রায় উনি তিনশো মতো ভিডিও তুলে ফেললেন। সেগুলো নিয়ে ওনার পরিচিত বঙ্কুবাবুকে দিয়ে উনি প্রায় চব্বিশটি এমন ভিডিও বাছালেন যেখানে দেখা যাচ্ছে পুলিশ লেখা গাড়ি বা বাইক ট্রাফিক রুল ভাঙছে। সেগুলো নিয়ে লিংক বানিয়ে উনি পুলিশের এবং ট্রাফিকের বড় কর্তাদের মোবাইল এবং ইমেইল এ পোস্ট করে দিলেন। সঙ্গে এটাও লিখতে ভুললেন না যে পুলিশের ট্রাফিক নিয়ম ভঙ্গের জন্য কি শাস্তি বিধান আছে তা ওনাকে জানাতে।
প্রায় দু সপ্তাহ কেটে গেলো। কোনো জবাব নেই। কিন্তু সমীরণবাবুর অস্থির মন হার মানতে নারাজ। উনি আবার সেই ভিডিও লিংকগুলো রাজ্যের প্রধান প্রশাসক ও মন্ত্রীদের একে একে পাঠাতে শুরু করলেন। কিন্তু কোনো জবাব এলো না।
রাত সাড়ে নটা। সমীরণবাবু ও ওনার স্ত্রী রাতের খাবার খেয়ে মেয়েকে ফোন করার কাজ সমাধান করে টিভিতে সিরিয়াল দেখতে বসেছেন। এমন সময় বেল বেজে উঠলো। সমীরণবাবুর স্ত্রী দরজা খুলে দেখলেন খাকি পোশাকে দুজন দাঁড়িয়ে। ওনাদের একজন বললেন,"মিস্টার সমীরণ আইচ বাড়িতে আছেন?"
"হাঁ আছেন। আপনারা?"
"ওনাকে একটু ডাকুন। থানা থেকে আসছি। আমাদের সাথে একটু থানা যেতে হবে।"
"কেন? থানায় এতো রাত্রে কেন?"
"দরকার আছে। বড়কর্তা তলব করেছেন। আমাদের সাথে জিপ আছে। ওনাকে ডেকে দিন।"
"কি দরকার আমাকে বলুন। আমি ওনার মিসেস।"
"আপনাকে বলা যাবে না। দেরি না করে ওনাকে ডাকুন।"
ইতিমধ্যে সমীরণবাবু দরজায় লোকেদের কথাবার্তা শুনে স্ত্রীর পিছনে এসে দাঁড়িয়েছেন। ওনাকে দেখে দুজন খাকি পোশাকের লোকের মধ্যে বয়স্কজন বললেন,"আপনিই সমীরণবাবু? নিন তৈরি হয়ে নিন। আমাদের সাথে একটু থানায় যেতে হবে।"
সমীরণবাবু যখন পুলিশের জিপ থেকে স্থানীয় থানায় নামলেন তখন রাত দশটা বেজে গেছে। থানার গেটে একদল মহিলা পুরুষ জড়ো হয়ে নিজেদের ভিতর তীব্র বাদানুবাদে মত্ত। সামনের লম্বা বারান্দার একপাশে রাখা বেঞ্চে একজন রোগা জিন্স পরা ছেলে আদুড় গায়ে চোখ বুজে বসে আছে। ওর কোমরে একটা মোটা পাটের দড়ি যার এক প্রান্ত ওরই পাশে বসা এক মোটাসোটা অর্ধঘুমন্ত কনস্টেবলের হাতে ধরা। ভিতরের ঘরে একজন কনস্টেবল মোটা খাতা খুলে কিছু লেখালেখি করছে। ওনার সামনের বেঞ্চে একজন বসে প্রায় ফিসফিসিয়ে কিছু বলছে।
সঙ্গের লোকদুজন সমীরণবাবুকে নিয়ে থানার বড়বাবুর সুসজ্জিত ঘরে ঢুকলেন। বড়বাবু নিজের গদিদেওয়া চেয়ারে নেই। পাশেই নিজের কোয়ার্টারে রাতের খাবার খেতে গেছেন। বড় বাবুর চেয়ারের সামনে একটা মস্ত টেবিল। টেবিলের কাঁচের তলায় একটা ম্যাপ, কনস্টেবলদের ডিউটির রস্টার আর দক্ষিণেশ্বরে মায়ের মন্দিরের ছবি। তার উল্টোদিকে গোটা তিনেক কাঠের চেয়ার পাতা। সমীরণবাবুকে নিয়ে একজন সেই কাঠের চেয়ারে বসলেন।
মিনিট পনেরো পরে বড়বাবু ঘরে প্রবেশ করে সমীরণবাবুকে দেখে একটু হেসে অন্য লোকটিকে জিজ্ঞাসা করলেন, "ইনিই সেই বিপ্লবী?" লোকটি সম্মতিসূচক ঘাড় নাড়ার পর বড়বাবু সমীরণবাবুকে ইশারা করে চেয়ারে বসতে বলে বললেন, "তা বেশী বয়সেই বিপ্লব করতে নামলেন দেখছি। আপনার নামে তো পুরোনো কোনো ক্রিমিনাল রেকর্ড নেই। আপনার পুরোনো অফিসেও কোনো বিপ্লবী ছবি পাওয়া যায় নি। তিনবার ভালো কাজের পুরস্কারও পেয়েছেন। কিসে ইনফ্লুয়েন্স হলেন? আরবান নকশাল বলে চালান করে দেবো নাকি?"
সমীরণবাবু রীতিমত ঘামছেন। সবে রাতের খাবার খাওয়া শেষ করেছিলেন। এর মধ্যে এরা ধরে থানায় নিয়ে এসেছে। উনি কেমন একটা ঘোরের মধ্যে আছেন। বললেন,"আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। আমার ফল্ট কি? এরকম ভাবে আমাকে জোর করে ধরে আনার কারণ কি?"
"কিছুই না। একটু বোঝানো আর কি। আপনি যে সব কাজকর্ম গুলো করছেন তা আপনার বয়সে মানায় না। শিক্ষিত লোক। সমাজ পরিবর্তন করছেন ভেবে পুলিশের পিছনে লেগেছেন। শোনেন নি বাঘে ছুঁলে এক ঘা আর পুলিশে ছুঁলে আঠারো ঘা। শুনুন, আপনাকে একটা চান্স দিচ্ছি। একটা কাগজে লিখুন যে আপনি যা করেছেন তা ভুলবশতঃ করেছেন এবং ভবিষ্যতে আর এরকম করবো না। তলায় সাইন করে ডেট লিখুন।"
সমীরণবাবুর কাছে সব ব্যাপারটা এবার ধরা দিচ্ছে। তবে উনি হার মানার পাত্র নন। উনি বললেন, "আমি এসব লিখবো না। তাতে জেলে যেতে হলে যাবো।"
"লকআপে নিয়ে একরাত্রি রাখলেই বিপ্লব বেরিয়ে যাবে।"
"যা করার করুন। আমি মুচলেকা দেবো না।"
"আপনাকে পুলিশের কার্যকলাপে গুপ্তচরবৃত্তি করার অপরাধে গ্রেফতার করতে পারি। এটা রাষ্ট্রদোহ। বড় কেস। দশ বছরের জেল হতে পারে।" বড়বাবু চোখ পাকিয়ে বললেন।
সমীরণবাবুর মাথায় যেন খুন চড়ে গেছে। তিনি আবার বললেন, "যা করার করুন। আমি কিছু লিখবো না।"
বড়বাবু সমীরণবাবুকে চা খাওয়ানোর পর আবার মুচলেকা দেবার কথা পাড়তে, উনি মানলেন না। রাত বারোটা নাগাদ সমীরণবাবুকে থানার লকআপে এনে ঢোকানো হলো। উনি গারদের শিক ধরে হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন। জীবনে যে এই পরিস্থিতি আসতে পারে সেটা ওনার সুদূর কল্পনাতেও ছিলো না।
গারদের ভিতরটা প্রায়ন্ধকার। একটা মাদকাসক্ত লোক মেঝেতে চিৎ হয়ে শুয়ে আছে। ওপাশের অন্ধকার কোনায় একজন ছোকরা উবু হয়ে বসে মেঝেতে আঁকিবুকী কাটতে কাটতে মাঝে মাঝে হেসে উঠছে। ঘরের বাঁদিকের কোনায় একটা ইঁটের ঘেরাটোপে মলমূত্র ত্যাগের জায়গা। সেখান থেকে বাতাসে ভেসে আসা বিশ্রী গন্ধে সমীরণবাবুর গা- টা গুলিয়ে উঠলো। মাথার ওপর একটা পাখা ঘরঘর শব্দ করে নিজের উপস্থিতি জানান দিচ্ছে। মেঝেতে শুয়ে পড়ে থাকা মাতালের শরীর থেকে মদের গন্ধ আর বাথরুমের প্রস্রাবের কটুগন্ধ সমীরণবাবুর নাকে আসতেই উনি অভ্যাসবশত রুমাল খুঁজতে পকেটের দিকে ডানহাতটা বাড়ালেন এবং বুঝতে পারলেন যে উনি রাতের পায়জামাটা পরে আছেন।
বেশ কিছুক্ষন গারদের রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে থাকার পর পিছনে জোরে হাসির শব্দ শুনে সমীরণবাবু দেখলেন কোনায় উবু হয়ে বসা ছোকরাটি ওনার দিকে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে হেসে যাচ্ছে। ছোকরা হাসতে হাসতেই জিজ্ঞাসা করলো, "কি রেপ কেস না পেটি চুরির কেস। রাত্রে ঢুকিয়েছে মানে ধরতে পারি বেশ্যাপাড়া থেকে ধরে নিয়ে এসেছে। কি ঠিক বলিনি?"বলে ছোকরাটা আবার খিকখিক করে হাসতে লাগলো।
সমীরণবাবু ভিতরটা ঘেন্নায় কেমন যেন করে উঠলো। উনি নাতনির মুখটা মনে করার চেষ্টা করতে লাগলেন। প্রায় বছর দশেক আগে ডি আই জির সাথে ওনার আলাপ ছিলো। সেসব এখন অতীত। ফোনটাকেও পুলিশে নিয়ে নিয়েছে। লকআপের ভিতর থেকে দেখতে পাওয়া যায় লকআপের বাইরে পুলিশের চেয়ারে বসে একজন সামনের টেবিলের ওপর দুটোপা তুলে, মাথাটা একপাশে নীচু করে ঘুমোচ্ছে। ওর নাক ডাকার আওয়াজ প্রায় পনেরো ফিট দুর থেকেও পরিষ্কার শোনা যায়। ক্লান্ত হয়ে সমীরণবাবু মেঝেতে বসে পড়লেন। মশারা ওনার মুখের চারপাশে উড়ে বেড়াতে লাগলো।
সমীরণবাবুর ঘুম যখন ভাঙলো তখন গারদের জানালা দিয়ে রোদ মেঝেয় এসে পড়েছে। ওনার সকালের চা তেষ্টা পেল। একটু পরেই একজন হকারের মতো লোক এসে মাটির ভাঁড়ে তিনজনের তিন ভাঁড় চা দিয়ে গেলো। উনি হাতেই চাটা নিলেও বাকি দুজন এখনও ঘুমে আচ্ছন্ন। সমীরণবাবু সেই চা দেওয়া ছেলেটিকে জিজ্ঞাসা করলেন, "এই, কটা বাজে?"
"সাড়ে আটটা।" বলে সে প্রায় দৌড়ে চলে গেলো।
ইতিমধ্যে একজন কনস্টেবল এসে সমীরণবাবুকে জিজ্ঞাসা করে গেছে যে পাউরুটি চা খাবেন কিনা। উনি সম্মতি জানিয়ে পানীয় জল দিতে বললেন। প্রাত্যহিক কাজের বেগ আসাতে উনি বেজায় অস্বস্তিতে পড়লেন। ওই ইঁটের ঘেরাটোপে কি করে কাজ সারবেন চিন্তা করেই উনি বেজায় চিন্তায় পড়লেন। নিশ্চয়ই কমোড নেই। শৌচ কর্মের জলটুকু আছে কিনা সন্দেহ।
ইতিমধ্যে লকআপের বাইরে কিছু গুঞ্জন শোনা গেলো।
সমীরণবাবু পরিচিত গলার আওয়াজ পেয়ে সচকিত হলেন। জামাই হরেনের গলা শোনা যাচ্ছে। তাহলে কি ও রাত্রেই ব্যাঙ্গালোর থেকে রওনা হয়েছিল। গলার আওয়াজটা এবার আরও স্পষ্ট হবার পর লকআপের ভিতর থেকেই ফর্সা চেহারার হরেনকে দেখতে পেয়ে উনি যেন একটু নিশ্চিন্ত হলেন। হরেনের সাথে থানার বড়বাবু ও আরও দুজন কনস্টেবল লকআপের দিকে এগিয়ে আসছে। তালা খোলা হলো। সমীরণবাবু বাইরে বেরোলেন। পিছনের ছোকরা ঘুম ভেঙে উঠে সমীরণবাবুকে বেরিয়ে যেতে দেখে টিপ্পনী কাটলো, "শালা, চেনাশোনায় কি না হয়। মেয়েছেলের দোষ করেও লোক ছাড়া পেয়ে গেলো আর আমি সামান্য পাইপ চুরি করে এখানে পড়ে রইলাম।"
হরেন উত্তেজিত ভাবে বললো, "বাবা, আপনার কি হয়েছে বলুন তো। এই বয়সে কি সব শুরু করেছেন? ভাগ্যিস থানার বড়বাবু আমার ছোটবেলার বন্ধু বেরোলো নাহলে কপালে আরও কতো দুর্ভোগ ছিলো কে জানে? কালই আপনি আর মা আমার সাথে ব্যাঙ্গালোর চলুন।"
সমীরণবাবু মাথা নিচু করে রইলেন।
বিকেলে প্রায় জোর করেই ডাক্তার দেখানো হলো। ডাক্তারের পরমর্শ মেনে ওষুধ খাওয়া শুরু হতেই ওনারা ব্যাঙ্গালোরে রওনা হলেন।
জয়দীপ মুখোপাধ্যায়
কলকাতা, পশ্চিমবঙ্গ
-
গল্প//উপন্যাস
-
02-01-2024
-
-