অটোয়া, সোমবার ২৩ জুন, ২০২৫
মহরত-ফাহমিদা রিআ

জ্বলজ্বলে নীল অক্ষরের ”শুভ্রনীল” নামাংকিত দুধসাদা দ্বিতল বাড়ীটার মস্ত গেটে ঢুকে খানিকটা পথ পেরিয়ে কলাপসিবল গেটের পাশে আটকে রাখা ছোট্ট একটি চিঠির বাক্স পুরোনো স্বাক্ষর বহন করে টিকে আছে। চিঠিপত্র   না আসলেও শুভ্রনীলের দারোয়ান জয়নাল নিয়ম করে নিত্য নৈমত্তিক পরখ   করে ক্লান্তিহীনভাবে। মাস শেষের বিদ্যুতের, টেলিফোনের ইত্যাদি আবশ্যকীয় বিলগুলি জয়নাল সময়মতই উদ্ধার করে শুভ্রনীলের গৃহবধু রোয়েনা মাহমুদের হাতে তুলে দেয় একটুও দেরী না করে। আর রোয়েনা প্রাত্যহিক রুটিনের মত পুরো বিকেলটা কাটান খোলা হাওয়ায় বাগানের ফুলগাছ গুলির একান্ত সান্নিধ্যে। কখনও মেতে উঠেন পরিচর্যায়, কখনও শুধুই দেখেন মুগ্ধ হয়ে। সেদিনও হাজারী গোলাপের অজস্র ক্ষুদে ফুলের সমারোহে গাছটির নুয়ে পড়া ডালটি তুলছিলেন গভীর ভাললাগায়। কানে এল জয়নালের কন্ঠ - 
-খালাম্মা আপনের চিঠি। 
নীলরঙা লম্বা খামটি খানিকটা বিস্ময় নিয়ে হাতে নিলেন রোয়েনা মাহমুদ। তাকে কে চিঠি লিখবে? ইংরেজী হস্তাক্ষরে প্রাপকের স্থলে মিসেস মাহমুদ লেখা। খামের উল্টো পিঠে প্রেরকের নাম দেখে মুহূর্তকাল থমকে যান, স্মৃতিতে টোকা পড়ে চমকে উঠেন।
- শারমিন সুলতানা? টেকসাস থেকে? তার কাছে? কিন্তু কেন? ত্বরিতে খুলে ফেলেন চিঠিখানা। মেলে ধরেন

সুচরিতাসু,
মাহমুদ ছাড়া শুভ্রনীলের আর কারো নাম জানা নেই বলে এভাবেই সম্বোধন করতে হল। ব্লাড কানেকশনের দুনির্বার আকর্ষণ নাকি টিন এজের অদম্য কৌতুহল জানিনা। দীর্ঘ উনিশ বছর পর পিতৃ সান্নিধ্য বঞ্চিত সন্তান  হঠাৎ করেই জন্মদাতার জন্য উন্মুখ হয়ে উঠেছে। এতটাই উন্মুখ যে তাতে উৎসাহ না দেয়ায় আলাদা স্টেটে পাড়ি জমিয়েছে আজন্ম চেনা আশ্রয় ফেলে। চিন্তা ভাবনাও করছে নিজের মত করে। দিনের পর দিন অপেক্ষায় আছে ওর জন্মদাতা পিতাই ওকে খুজে নেবে। ওর এই অতি উৎসাহে ভাটা পড়লে নিজ জীবনের প্রতি নিরুৎসাহী হয়ে যাবে ক্রমশ, স্বাভাবিকতা হারাবে কর্তব্য কর্মের প্রতি। অনিশ্চয়তায় দোদুল্যমান এই আত্মজাটি ভাবিয়ে তুলেছে আমাকে। আদৌ কি ওর জন্মদাতা ওকে খুজে নেবে? মাহমুদই জানে এর  জবাব । কিন্তু মাহমুদের  স্মরনাপন্ন হবার পথ আমার তরফ থেকে চিরতরে বন্ধ। তাই পরোক্ষভাবে আপনাকে ছাড়া গত্যান্তর খুঁজে পেলামনা। কারন সন্তানকে বাসযোগ্য পৃথিবীর অঙ্গিকারের দায় নিয়েছিলাম, সে দায়ের ভার রক্ষার্থেই এ লেখা। সানজানার ই-মেইল এ্যাড্রেসটি মাহমুদের কাছে পৌছানোর তাগিদ রইল। আমার ভুমিকা এই পর্যন্তই। 
শারমিন সুলতানা, 
টেক্সাস।

খোলা চিঠিটি হাতে নিয়ে রোয়েনা মাহমুদ এভাবে কতক্ষণ ঘোর লাগা চোখে দাঁড়িয়ে ছিলেন জানেন না। গাড়ীর হর্ণ বাজতেই সম্বিত ফিরে পেয়ে দেখেন জয়নাল দৌড়ে গড়গড় শব্দে গেটটা খুলছে, মাহমুদের নীলরঙা টয়োটাটি পর্চের নীচে এসে থামল।
মাহমুদ প্রতিদিনের মত একেবারে গোসল সেরে ফ্রেস হয়ে চায়ের টেবিলে আসেন। সেই ফাঁকে রোয়েনা ব্যস্ত হয়ে পড়েন চা নাস্তার তদারকিতে। মাথায় ঘুরতে থাকে শারমিনের চিঠিটা। জট পাকিয়ে যায় কেমন যেন। শারমিন কি তবে আবার বিয়ে করেছে? তাই যদি হবে তবে ওর সন্তানের পিতা কাছে নেই কেন? সবচেয়ে অবাক ব্যাপার মাহমুদ তাকে চিনবে কি করে, বন্ধু নয় তো? হতে পারে কারন মাহমুদ শারমিন তো ক্লাশমেটই ছিল। দুজনের বন্ধুত্বের গন্ডি এক হওয়াটাই স্বাভাবিক। খামটা নাড়া চাড়া করতে করতে রোয়েনা ভাবে চিঠিটা মাহমুদকেই লেখা পরোক্ষভাবে। প্রত্যক্ষভাবে লিখলোনা কেন, সম্পর্ক ছিন্নের সংকোচে হয়তোবা। বড্ড এলোমেলো লাগে সবকিছু রোয়েনার।
চেয়ার টানার মৃদু শব্দে চোখ তোলেন রোয়েনা, রোজকার মত পরিপাটি হয়ে পাজামা আর কারুকাজময় ফিনফিনে পাঞ্জাবি গায়ে চুলে ব্যাক ব্রাশ করে হালকা পারফিউম ছড়িয়ে বসলেন মাহমুদ রোয়েনার মুখোমুখী। নাস্তার প্লেটটা এগিয়ে দিতে দিতে বলেন রোয়েনা 
-আমার নামে একটি চিঠি এসেছে। পড়ে খুব অবাক হয়েছি। চিঠিটা পড়বে একটু?
মুখ না তুলেই খেতে খেতে বলেন মাহমুদ
-এই না বল্লে তোমার চিঠি? আমি পড়বো কেন?
-কারণ পরোক্ষভাবে চিঠিটি তোমাকেই লেখা। খামটা এগিয়ে দেন রোয়েনা মাহমুদের দিকে। তেমনি নির্লিপ্ত ভাবেই খাওয়া শেষ করে মাহমুদ। টিকুজি সরিয়ে টিপট থেকে চা ঢেলে কাপটা মাহমুদের দিকে বাড়িয়ে দেন। গরম চায়ে চুমুক দেয়া দেখতে দেখতে রোয়েনা আবার বলে চিঠিটা পড়েই দেখনা শারমিন লিখেছে টেক্সাস থেকে। 
ভ্রু কুঁচকে প্রথমটায় রোয়েনার দিকে তাকান মাহমুদ। তারপর সামলে নেন নিজেকে, বলেন 
-পনেরো বছর হয়ে এলো এ সংসারে এসেছ সবটুকু জেনে। অযথা কৌতুহল পছন্দ করিনা এও জানো।
-অযথা নয়তো। তোমাকেই প্রয়োজন। 
ঠোঁটের কোনে তাচ্ছিল্যের এক টুকরো হাসি ফুটিয়ে বলেন মাহমুদ 
-কিন্তু তার প্রয়োজনে আজ আমার কিছু যায় আসেনা। যাই হোক, তোমার চিঠি তোমার ব্যাপার। এ প্রসংগ কাম্য নয় আর। চায়ে শেষ চুমুকটা দিয়ে উঠে দাঁড়ালেন মাহমুদ।
রোয়েনা এবার খামটি হাতে নিয়ে দাঁড়ালেন 
-জানি তুমি বিরক্ত হচ্ছ আমার উপর তবু বলছি, সানজানার ইমেইল এ্যাড্রেসটা এই চিঠিতেই আছে। ওর জন্মদাতাকে তা পৌঁছে দেয়ার দায়িত্ব তোমার।
থমকে দাঁড়ায় মাহমুদ। গম্ভীর গলায় বলেন
-সানজানা? জন্মদাতা?
দ্রুত হাতে চিঠিটি রোয়েনার হাত থেকে নিয়ে খুলে ফেলেন, অস্ফুটে বলেন - শারমিনের লেখাই তো এটা। 
একটু আগের নির্লিপ্ত মানুষটা হঠাৎই যেন ব্যস্ত হয়ে পড়েন। খোলা চিঠিটা বার কয়েক পড়েন তারপর এগিয়ে যান বেডরুমে। রোয়েনার কেমন যেন ধোঁয়াটে লাগে সবকিছু। পাশের চেয়ারটায় বসে পড়েন আবার।
ডাঃ মুশফেকার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন মনে প্রানে। পাওয়ারফুল চশমা ঘেরা মায়াবতী স্নেহময়ী মানুষটি কোথায় হারিয়ে গেলেন তাকে এই বিশালতায় রেখে। প্রথম যেদিন ঘোর লাগা চোখে এই মহিয়সীকে দেখেছিলেন রোয়েনা সেদিন তাঁরই ক্লিনিকের বেডে শুয়ে। দীর্ঘ ষোল ঘন্টা পর জ্ঞান ফিরে এসেছিল সেদিন রোয়েনার। এরপর একটি একটি করে দিন পেরিয়ে আড়াই মাসের মাথায় রোয়েনা সুস্থ হয়ে উঠেছে। পরম মমতায় ডাঃ মুসফেকা একের পর এক সব হারানোর গল্পে স্বান্তনা যুগিয়েছেন। রোয়েনার চোখে ভেসে উঠেছে বাবা,মা কে নিয়ে ঢাকায় আসবার দিনটি। সাধারণ মধ্যবিত্ত ঘরের একমাত্র সন্তান রোয়েনা। বাবা গানের ওস্তাদ ছিলেন বলে মেয়েকে ছোট থেকেই গড়েছিলেন আপন মনের মাধুরী মিশিয়ে। কলেজে বিএ ক্লাশের ছাত্রী তখন রোয়েনা। আন্তজেলা প্রতিযোগীতায় প্রথম হওয়ার আনন্দ সংবাদে বাবা কেঁদে ফেলেলন। মাকে বলেলন - রোয়েনার সাথে আমরাও ঢাকায় যাই চলো, দর্শক সারিতে বসে মেয়ের পুরষ্কার নেয়ার দৃশ্য দেখে চোখ জুড়াবো। মা ছিলেন সদা হাস্যময়ী আর খুব চটপটে মানুষ। রাজী হয়ে গেলেন সঙ্গে সঙ্গেই। অনুষ্ঠানের আগের রাতে নাইট কোচটি ঢাকায় পৌছানোর মুখেই বিপরীত দিক থেকে আসা ট্রাকের ধাক্কায় ঘটলো চরম দূর্ঘটনা। স্পটেই মারা গেলেন মা, অজ্ঞান অবস্থায় দুদিন পর মারা গেলেন বাবা। একমাত্র চাচা ছুটে এলেন খবর পেয়ে। ডাঃ মুশফেকা আশ্বস্ত করলেন রোয়েনার সুস্থতার জন্য সব রকমের চেষ্টাই তিনি করছেন।
সেরে উঠলো রোয়েনা ঠিকই। কিন্তু চিরদিনের মত হারিয়ে ফেলল বাবা মা আর হারালো নিজের মাতৃত্বের ক্ষমতা। রিলিজ নেবার দিনে যথা সময়ে চাচা এসেছিলেন রোয়েনাকে আপন আবাসে ফিরিয়ে নিতে। ডাঃ মুসফেকা আমন্ত্রন জানালেন চাচাকে যাবার আগে তার বাসায়। কিছু কথা বলবার  আছে।
সদ্য পিতৃমাতৃহীন ভাস্তির মানসিক যন্ত্রনা লাঘবের আরও কিছু উপদেশাবলী হয়তো ডাক্তার জানাবেন, নির্দ্বিধায় সায় দিলেন রোয়েনার চাচা। শুভ্রনীলের মস্ত গেটের মধ্য দিয়ে যখন ডাঃ মুসফেকার গাড়ীটি গিয়ে ঢুকলো, গেটের দুপাশে ছড়ানো বুগেনভুলিয়া আর মাধবিলতার ঝাড় দেখে রোয়েনার ভাবলেশহীন চোখ দুটিতে ভেসে উঠলো বাবার নিজ হাতে লাগানো উঠোনে রজনীগন্ধার ঝাড়, নাকে এসে লাগলো মার পরম যত্নে ফোটানো অজস্র বেলীর সৌরভ।

-আমার হাত ধরো রোয়েনা, নেমে এসো। 
ডাঃ মুসফেকার কোমল ডাকে ধীর পায়ে নেমে আসে রোয়েনা গাড়ী থেকে। একপা দুপা করে এগিয়ে ঢুকে সাজানো বাড়ীটিতে। চাচাকে ড্রইংরুমে বসিয়ে রোয়েনাকে আপন বেডরুমে নিয়ে আসেন ডাঃ মুসফেকা। মায়ের সবটুকু মমত্ব দিয়ে নিজের পাশটিতে বসান। গলা বাড়িয়ে বুয়াকে ডেকে চায়ের কথা বলেন, দুপুরের রান্নার ব্যবস্থাও করতে বলেলন সেইসাথে। অপলকে দেখছিল রোয়েনা নীরবে, কত রোগীইতো আসে উনার ক্লিনিকে, সুস্থ হয়ে ফিরেও যায়। তার আশে পাশে এমনি কত এল গেল কিন্তু তাকে এমন আলাদা করে বাসায় বয়ে নিয়ে এলেন কেন স্নেহময়ী মায়ের মত আগলে। তার অসহায়ত্বটা কি ডাঃ মুসফেকাকে খুব বেশী নাড়া দিয়েছে? হয়তোবা।
-কি ভাবছো এত তখন থেকে? 
পরম স্নেহে রোয়েনার একখানা হাত আপন কোলে টেনে নেন। একটু ইতস্তত করে বলেন 
-প্রথমে তোমাকেই বলি মা আমার ভাবনাগুলো।
বাকহীন দুচোখ ছল ছল করে উঠে রোয়েনার। ভেতরের জমাট বাধা বরফ অপারাহ্নের উষ্ণতায় কেবলি গলে পড়তে চাইছে যেন।
-রোয়েনা আড়াইটি মাস আগেও তোমায় আমি জানতাম না চিনতাম না। কিন্তু আজ তুমি আমার ভাবনার অনেকটা অংশ জুড়ে আছ। সেদিন ভোরের আলো ফোটার আগেই যখন ক্লিনিক থেকে ম্যানেজারের ফোন এল, ভয়ংকর বাস এ্যাকসিডেন্ট হয়েছে ক্লিনিকের খুব কাছেই। আশে পাশের লোকেরা অসংখ্য আহত যাত্রী এনে ভরে ফেলেছে রিসেপশন। হৈচৈ বাধিয়েছে ক্লিনিকে জায়গা দেয়ার জন্য। ছুটে গেলাম। তার পরের ঘটনাগুলো ঘটতে লাগলো অতি দ্রুত। দীর্ঘ ষোল ঘন্টা পর তোমার জ্ঞান ফিরলেও আশংকা মুক্ত নও তখনও। বোর্ড সিদ্ধান্ত নিল অপারেশান জরুরী। আশংকা মুক্ত হলে তুমি, কখনও মা হতে না পারার বিনিময়ে। স্বস্তির নিশ্বাস ফেললাম সব ডাক্তারেরা। মিথ্যে বলবোনা, তখন থেকেই আলাদা ভাবে নজর কাড়লে তুমি আমার। 
হঠাৎ দুহাতে মাথাচেপে ধরে রোয়েনা 
-আমার অর্থহীন এই জীবনটার জন্য কেন এত দয়া করলেন, কেন? এত করুণা কেন?
রোয়েনার দুচোখের অঝোর ধারা মুছিয়ে দিলেন ডাঃ মুসফেকা। খানিক ক্ষণ থেমে আবারো বলতে লাগলেন 
-তোমার এই জীবনটা যদি কারো জীবনের অর্থ বয়ে আনে তবে? তুমি হয়তো ভাবছো তোমাকে করুণা করেছি আমি। কিন্তু একবারো কি ভাবতে পেরেছ - তোমার করুণা নেয়ার জন্যই আমি তোমাকে আজ আমার খুব কাছটিতে চাইছি।

এত শোকে মুহ্যমান রোয়েনা অবাক বিস্ময়ে অস্ফুটে উচ্চারন করলো সব হারিয়ে নিঃস্ব অসহায় এই আমি, আপনাকে...?
মাথা দোলান ডাঃ মুসফেকা 
-হ্যাঁ রোয়েনা তুমি, তুমিই পারবে। তোমার মতামত জানবার আগে তোমাকে শোনাবো আমার যন্ত্রনার কথা।
আমার হাজবেন্ডও ছিলেন ডাক্তার। তাঁর অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলশ্রুতিই এই ক্লিনিক। আমাদের দুজনের সব সময়গুলি তখন সদ্য নির্মিত এই ক্লিনিকের জন্য ব্যয় করেছি, গড়ার আনন্দে মেতে থেকেছি সারাক্ষণ। খেয়াল করিনি আমাদের একমাত্র সন্তান মাহমুদের জীবনের ভাঙ্গনটাকে। ওর তখন মেডিকেল কলেজের সেকেন্ড ইয়ার চলছিল। হঠাৎ একদিন কলেজ থেকে বাড়ী ফিরলো না মাহমুদ। খোঁজ নিয়ে জানলাম প্রায় মাস খানেক থেকে কলেজে যায় না। আত্মীয় স্বজন পরিচিত সব জায়গায় খোঁজ নিয়েও যখন ওকে পাওয়া গেল না পেপার পত্রিকায় ”ফিরে আয়” বিজ্ঞাপনেও সাড়া মিললোনা। ওর বাবা আর আমি খুব মুষড়ে পড়লাম। এমন সময় ডাক যোগে এল মাহবুবের নামে একটি ভারি খাম। এক মুহূর্ত দেরী না করে খামটি খুলে বজ্রাহত হয়ে যাই দুজনেই। কি করে সম্ভব! মাহমুদের নামে ডিভোর্স লেটার। মেয়ের ঠিকানায় ছুটে যাই। সব শুনে মেয়ের বাবা মা ও থ’ হয়ে যান।  আমাদের মতই অজানা তাদের কাছেও । শিল্পপতি বাবার আহ্লাদি আর আদুরে সবার ছোট এই মেয়েটি খুব অভিমানী আর জেদী সেই ছোট বেলা থেকেই। কখনযে কোন আবদার করে বসে তটস্থ থাকতে হয় সবাইকে। মাস কয়েক আগে থেকে হঠাৎই ছুটোছুটি করে স্টুডেন্ট ভিসা জোগাড় করে। গত মাসে সেই সুত্রে এখানকার পাট চুকিয়ে পাড়ি জমিয়েছে টেক্সাসের এক ইউনিভার্সিটিতে এ্যাডমিশন নিয়ে। মাহমুদের বন্ধুবান্ধবের দুএকজন জানালো হঠাৎ সিদ্ধান্তের গোপন বিয়ের কথা তারা জানলেও ডিভোর্সের এবং ওদের মনোমালিন্যের কিছুই তারা জানতে পারেনি। আমরা চিন্তিত হয়ে পড়ি মাহমুদ কি তবে আমেরিকার পথ খুঁজছে ছুটোছুটি করে? না, দিন পনেরো পরেই একদিন উদভ্রান্তের মত মাহমুদ এল। কোন প্রশ্ন না করে ডাকে আসা খামটা ওর হাতে তুলে দিয়ে ওর বাবা বললেন
-যা হবার তাতো সাঙ্গ হয়েই গেছে। এবার জীবনটা আমাদের মনের মত করে গুছাও। আমাদের কোন দুঃখ বোধ থাকবেনা তোমার ভুল অতীতটা নিয়ে।

পরদিন খাবার টেবিলে মাথা নীচুকরে মাহমুদ ধীর গলায় বললো
-তোমরা কিছু করার আগে জেনে রাখো আমার অপরাধের কারণটা, নইলে বারবার একই ভংগনের শব্দ শুনবে।
-ওসব ছেলেমানুষী আবেগ। এবার ডিসিশন নেব আমরা ভেবে চিন্তে। তোমার কোন ভয় নেই। আমরা সবাই বড্ড বর্হিমুখী হয়ে পড়েছি। খুব শিগগিরি ঘরে নতুন মানুষ আনতে চাই।
-কিন্তু তাতেতো আমার অপরাধের সংশোধন হবে না।
-অপরাধ? কিসের অপরাধ তোমার?
-অপরাধ আমার নতুন বংশধর আনতে না পারার। একটা অনুরোধ তোমাদের কাছে, এর চেয়ে বেশী কিছু বলা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। শুধু জেনো চিকিৎসাতে এর কোনো সমাধান নেই।

এ প্রসঙ্গে আর কিছু বলার অপেক্ষা রাখেনা। মাহমুদ যথারীতি নতুন করে পড়ায় মনোযোগী হল, কিছুটা সময় নষ্ট হল যদিও। মাহমুদ যে বছর ডাক্তারী পাশ করলো সে বছরই হার্ট এ্যাটাক করলো ওর বাবার। চলে গেলেন কিছুদিন পরেই।  আমার অসহায়ত্ব আর নিঃসঙ্গতায় মাহমুদকে পাশে অনুভব করলাম অবাক হয়ে। সেই থেকে ক্লিনিকে ব্যস্ত সময় কাটতে লাগলো মাহমুদেরও। আমারওতো যাবার সময় হয়ে এল। মাহমুদের একাকিত্বের কথা ভেবে অস্থির হয়ে উঠি, মরেও যে শান্তি পাবোনা। নিত্য দুর্ভাবনায় যখন ভাসছিলাম, হঠাৎ তোমার অপারেশনের ফলাফল আমার মাতৃ হৃদয়ে সমাধানের ইঙ্গিত দিল। সেদিনই মাহমুদের সাথে কথা বলেছি। তার ঝড়ো অতীতের সাথে তোমার দূর্ভাগ্যকে মিলিয়ে দেয়ার কথা বলাতে মাহমুদ আমাকে আশ্বস্ত করেছে - ”আমার সবকিছু জানবার পর মেয়েটি যদি মত দেয় তবে আপত্তি নেই”।
এক নাগাড়ে এতগুলো কথা বলে হূ হূ করে কেঁদে ফেলেন ডাঃ মুসফেকা। রোয়েনা নিজের কান্না ভুলে স্তব্ধ হয়ে ডাঃ মুসফেকার ফুলে উঠা কান্নার দমক দেখে। শোক নয়, লাজ নয়, পরিষ্কার গলায় দ্বিধা হীন ভাবে ডাঃ মুসফেকার হাতের মধ্যে তার হাত দিয়ে আঁকড়ে ধরে বলে 
-আপনার মমতাময়ী পরশে যখন আমার কষ্ট গুলো গলে পড়ে, শুধু ডাক্তার নয়, খুব বেশী আপনজন ভাবতে ইচ্ছে করে। উপযুক্ত একটা সম্বোধন খুঁজতে থাকি ডাকবো বলে কিন্তু পাইনি চেষ্টা করেও। আপনার বলা যন্ত্রনা গুলো উপযুক্ত ডাক আমার কাছে পৌছে দিয়েছে এই মুহূর্তেই। যার উপরে আর কিছু নেই পৃথিবীতে। মা, আমার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার দায় এখন আপনারই।

কিছু দিনের মধ্যে অনাড়ম্বরে মাহমুদ রোয়েনার বিয়েটা হয়ে যায়।
প্রথম আলাপনেই রোয়েনা মাহমুদকে অনেকটাই বুঝে নিল। দুজনের দুরকম অশুভ অতীত আষ্ঠে পৃষ্ঠে বেঁধে ফেলেছে দুজনকেই। তাই মাহমুদের নির্লিপ্ততায় কিংবা রাশভারী আচরণ কোনটাই অস্বাভাবিক ঠেকলো না। নিঃস্ব রোয়েনা নতুন জীবনের দোলায় যতনা আন্দোলিত হল তারচেয়ে অনেক বেশী আঁকড়ে ধরলো দায়ীত্ব কর্তব্য। সাধারণ মধ্যবিত্ত ঘরের মেয়ে সে। ঘরকন্নার প্রতিটি কাজ শিখেছিল সে তার গুনবতী মায়ের কাছে। তারই প্রতি ফলন ঘটাতে লাগলো রোয়েনা দিনে দিনে। শাশুড়ি মন্ত্রমুগ্ধের মত নির্ভরতা খুঁজে পেলেন তারই আবিষ্কৃত এই পুত্রবধুর কাছে। ফজরের নামাজের পর শাশুড়িকে জায়নামাজে ধোঁয়া উঠা গরম চা দিয়ে শুরু করে রোয়েনা কর্মব্যস্ততাময় প্রতিটি দিন। ক্লিনিক ফেরত ক্লান্ত শাশুড়ি দুচোখভরে দেখেন রোয়েনার নিজ হাতের ছোয়ায় বাগানটি সারাক্ষণই হাসছে নিত্য নতুন ফুলের মেলায়। খাবার টেবিলে কাজের বুয়াদের একঘেয়ে রান্নার দৌরাত্মের বদলে আজ এ ভর্তা, ওভর্তা, কাল চচ্চড়ি, ভাজি নব নব শব্জির সমাহারের উপকরনে টেবিল ভরে যায়। অবসন্নতা কেটে যায় মা ছেলের রসনা বিলাসের বাহারি উপস্থাপনায়। প্রতিটি ক্ষেত্রে রোয়েনার আপন হয়ে মিশে যাওয়ার এই মধুরতায় আত্মসুখে চোখ মুছেন শাশুড়ি আনন্দে, শুকরিয়া জানান উপর ওয়ালাকে নীরবে। মাহমুদ প্রথম দিকে তেমন খেয়াল না করলেও ধীরে ধীরে টের পায় কেমন যেন নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে সেও। কাজে যাবার আগে জামা জুতা প্রয়োজনীয় কাগজ ঠিক সময় মত রেডি পেয়ে যায়। ফিরেও তাই, যেখানকার অবস্থান গুছিয়ে থাকে সেখানে। একান্ত অবসরে কোথাও ঘুরতে যাবার আদেশ জারী মা যখন করেন রোয়েনা অতি উৎসাহে মাকেই তৈরী করার জন্য ব্যস্ত হয়। শরীর খারাপের অজুহাতে মা এড়াতে চাইলেও রোয়েনা মাকে অসুস্থ রেখে যাবেনা বলে বেঁকে বসে। অগত্যা মা ছেলে এবং পুত্রবধুর ছোট্ট দলটি লং ড্রাইভে ছুটে চলে শহর ছেড়ে দুরে। রোয়েনা নিজের সব হারানোর বিশাল দুঃখবোধকে আড়াল করে অকৃত্রিম হাতে তাদের মা ছেলের সংসার যে আনন্দের জোয়ারে বেঁধে ফেলেছে তা অনুভব করেন ডাঃ মুসফেকা আর সত্যি সত্যি ভুলে যেতে চান বংশধর না পাওয়ার ঐ দুঃখ বিলাসিতাটিকে।
এভাবেই দিন গড়িয়ে বছর গড়িয়ে এক সময় সাতটি বছর অতিক্রান্ত করে কালের নিয়মে শাশুড়ি মারা যান। অথৈ সাগরে হাবু ডুবু খেতে খেতে এক সময় রোয়েনা শাশুড়ির দেয়া নির্দেশনায় আবার সংসারের হালটা শক্ত করে ধরে। আরো বেশি ব্যস্ত হয়ে পড়ে বিভিন্ন তদারকিতে।

গড়াচ্ছিল দিন এভাবেই। হঠাৎ শারমিনের চিঠিটা অনেক দিনের পুরোনো কথাগুলিকে, দুঃখগুলিকে হারানোর কষ্টগুলিকে জাগিয়ে দিল যেন।  শাশুড়ি বেঁচে থাকলে এসব ভাবনার জবাব তিনিই দিতেন ভেবে দুচোখ ভরে উঠে লোনা পানিতে রোয়েনার। অনেক দিন পর নিজেকে বড় নিঃসঙ্গ মনে হয়। মাহমুদের সবসময়ের এড়িয়ে চলা আচরনে অভ্যস্ত হয়েও আজ যেন নতুন করে ধাক্কা খায়। মনে ঘুর পাক খেতে লাগলো একটি প্রশ্ন। শারমিনের প্রতি অনাগ্রহ দেখিয়ে শারমিনের দেয়া দায়ীত্বের কথা শুনে হঠাৎ এত আগ্রহী হয়ে গেল কেন মাহমুদ চিঠিটার প্রতি?
আনমনে চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ায় রোয়েনা। এগিয়ে গিয়ে বেডরুমে ঢুকে। মাহমুদকে আবিষ্কার করে কম্পিউটার টেবিলের সামনে রিভলভিং চেয়ারে। খুব মনোযোগের সাথে দ্রুত আংগুল টিপছে কিবোর্ডে আর মনিটরে ভেসে উঠছে একে একে  শব্দের পর শব্দ।

বিস্ময়ে বিমুঢ় হয়ে শক্তি শুন্য রোয়েনা পাশের খাটে বসে পড়ে ধপাস করে। নিস্তেজ কন্ঠের শব্দ শোনা যায় - ”এ কি করে সম্ভব”!
রিভলভিং চেয়ার ঘুরিয়ে মাহমুদ চমকে ঘুরে মুখোমুখি বসে রোয়েনার। গভীর উত্তেজনায় রোয়েনার হাত নিজের হাতের মধ্যে টেনে নেয়। আবেগ ভরা কন্ঠে বলে -অসম্ভব নয় রোয়েনা। দীর্ঘ কুড়িটা বছর অপেক্ষায় থেকেছি এই খবরটির জন্য। 
রোয়েনার গত পনেরো বছরের চেনা রাশভারি মাহমুদকে হঠাৎ অচেনা লাগে। যেন কোন অজানা জাদুর বলে আমুলে পালটে গেছে কয়েক মুহুর্তেই। ধীরে ধীরে হাত ছাড়িয়ে নেয় রোয়েনা, বলে
-তাহলে এত গুলো বছর সবাইকে তুমি মিথ্যে বলে এসেছ? আমার দুঃসহ অতীতটাকে করুনা করেছ? কিন্তু করুনার আশ্রয়ে পনেরো বছর কাটিয়েছি আমি না জেনে। যখন জেনেছি সত্যটাকে, আর একদন্ডও নয় এখানে। উঠে দাঁড়ায় রোয়েনা ঠোঁটে দাঁত চেপে। মাহমুদ পথ আগলে দাঁড়ায়। হাত ধরে বসিয়ে, নিজে পাশটিতে বসে। সরাসরি তাকায় রোয়েনার দিকে 
-মা যতটুকু জানতেন ততটুকুই তোমাকে বলেছেন। কিন্তু আমার কথাতো তোমাকে বলা হয়নি। না শুনে তুমি যেতে পারবেনা। জীবনের অপরিণত বয়সের আবেগতাড়িত একটা ভুলের মাশুল বয়ে বেড়াচ্ছি আমি। শারমিন যখন ছাত্র জীবনের ঐ সময়টায় অনাগত সন্তান আগমনের দুর্ভাবনাময় সংবাদটা দিল ক্ষণিক সমস্যা ভেবে চটজলদি সমাধান দিয়েছিলাম এ্যাবরেশন শব্দটা উচ্চারন করে। বেশী কিছু না ভেবেই। কিন্তু শারমিনের মাতৃ হৃদয়ে যে চোট লেগেছিল তা বুঝতে আমার অনেক দেরী হয়ে গিয়েছিল। যখন বুঝলাম অনেক দুরে শারমিন তখন। এর পর আর কখনই ওর একগুয়েঁ, এক রোখা স্বভাবের বেড়াজাল ডিঙিয়ে আমার সামনে আসেনি সে।
মাস খানেকের মধ্যে ও এখানকার পাট চুকিয়ে আমেরিকা প্রবাসী বড় বোনের কাছে চলে যাবার পর যখন জানলাম, সম্ভাব্য সব জায়গায় ওর পরিচিত জনদের কাছে খুঁজে খুঁজে ঠিকানা আর টেলিফোন নম্বর সংগ্রহ করে নিরুদ্দেশ থাকার পর বাড়ীতে ফিরলাম। ততক্ষনে বাবার হাতে পৌছে গেছে শারমিনের পাঠানো আইনী ছাড়পত্র। রাতে ফোন করলাম আমেরিকায় ওর বোনের কাছে। শারমিন নিজেই কথা বললো অচেনা আর কঠিন গলায়। সেকন্ঠে অনুরোধ নয়, আদেশ নয় ছিল অন্য কোন সুর। ফোনে প্রথম কথাতেই বললো -
-হঠাৎ সিদ্ধান্তের সকল পাঠ চুকিয়ে কাগজে কলমে তোমাকে পাঠিয়ে দিয়েছি। শুধু জেনে রাখ এর পরে আর কোন রকমের যোগাযোগ তোমার বা আমার তরফ থেকে নিষিদ্ধ। আর একটা কথা, যে সন্তানের জন্য তুমি পিতৃ পরিচয় জানাতে ভয় পেলে সেই সন্তান পৃথিবীতে আসবে, তোমার পরিচয় ছাড়াই বড় হবে।
শারমিন কথাকটি বলে আর অপেক্ষা করেনি আমার জবাবের। নতুন করে বোধ উদয় হল আমার। সন্তান গ্রহনের অপারগতা বা ভয় আমাকে প্রতিশোধের জালে আটকে ফেললো। সিদ্ধান্ত নিলাম নিজের উপর ঘৃণাভরে। আর কখনই কোন সন্তানের পিতা হবার অধিকার আমার থাকা উচিৎ নয়। জীবন ভর বাবা মার সাথে মিথ্যাচার করে নিজের উপর প্রতিশোধ নিয়েছি।
রোয়েনা শান্ত স্থির দৃষ্টি মাহমুদের উপর নিবদ্ধ করে বললো
-প্রতিশোধের পালা তবে শেষ হল। শূন্যস্থান গুলো প্রকৃতির নিয়মেই পুরণ হতে চাইছে। এখানে আমাকে ধরে রাখবার কোন উৎস থাকতে পারেনা।

মাহমুদ বাঁকা হাসি হাসলো একটু,
-আমার মিথ্যাচারের অপমান মাথায় নিয়ে চলে যেতে চাও? কারো রেখে যাওয়া শুন্যস্থান পুরনের অজুহাতে নিজেকে অতিরিক্ত ভাবতে চাইছো, কিন্তু তার আগে জেনে নাও তুমি এসেছো আমার অপুরনীয় জীবনটায় পরিপূর্ণতা নিয়ে।
দুচোখ ভরা পানি নিয়ে রোয়েনা বললো
-আমি নিজেই যে একজন অপূর্ণ মানুষ ছিলাম এই পনেরো বছরে একটি বারো তা মনে পড়েনি।
-না রোয়েনা, যদি মনে কর পূর্ণতা শুধুই মাতৃত্বে, তবে বলি আমার মা সেই পূর্ণতা তোমাকে দিয়ে গেছেন। সব থেকেও এক জন মন ভাঙ্গা অসহায় মানুষ তোমাকে আঁকড়ে ধরে আনন্দের দেখা পেয়েছেন অনেক কষ্টের পর, উৎসাহে সামনে এগিয়েছেন। উপচে পড়া খুশিতে মা আমাকে বারবার বলেছেন “অনেক ঋণে ঋণী হতাম আমি রোয়েনার উদারতা আর ভালবাসার মূল্যের কাছে। কিন্তু আমি ওর সন্তানের জায়গাটি অনায়াসেই দখল করেছি বলে ঋণের বোঝা মুক্ত থেকেছি, মায়েরা কখনই সস্তানকে ঋণী করেন না, দান করেন। আমার সেই মায়ের অমর্যাদা হলে কষ্ট দেয়া হবে আমাকেই, মনে রাখবি সব সময়।”
আমি মায়ের উপদেশ মনে রাখতে চাই রোয়েনা। এবাড়ীর প্রতিটি জিনিস তোমার সযত্ন ছোঁয়ার অপেক্ষায় থাকে সারাক্ষণ। এসবের কি হবে তুমি চলে গেলে? হায়রে নিয়তি, সেদিন গ্রহনের অস্বীকৃতিতে গুনছি মাশুল জীবন ভর, আর আজ স্বীকৃতির সময় এলো বলে তোমাকে হারাতে বসেছি। বলতে পার রোয়েনা আমার অতীত ঘেরা ভুলটা আমাকে নিস্তার দেয়না কেন? জীবনভর নিজের উপর এত প্রতিশোধ নেবার পরও। বলতে বলতে গলা বুঁজে আসে মাহমুদের।

আকুলতা ঝরে পড়া মাহমুদের কথার জবাব না দিয়ে রোয়েনা উঠে দাঁড়ায়, এগিয়ে যায় কম্পিউটার রাখা টেবিলের দিকে। মাহমুদ প্রথমটায় হকচকিয়ে গেলেও পর মুহুর্তে আনন্দে ছলকে ওঠা দৃষ্টিতে দেখে কিছুক্ষন আগে তারই কম্পোজ করা ইমেল টার ”সেন্ড” এ ক্লিক করলো রোয়েনা, পর মুহুর্তেই মনিটরে ভেসে উঠলো, সানজানার সিন করবার প্রতীকি।

ফাহমিদা রিআ
ঢাকা, বাংলাদেশ