রবীন্দ্রনাথ, আপনাকে - সুনির্মল বসু
রবীন্দ্রনাথ, আপনার আলাদা কোনো জন্মদিন পালনের কথা মনে হয় না আমার,
প্রতিদিন আপনার সঙ্গে ঘর সংসার,
সেভাবেই রবীন্দ্র তর্পণ করি আমি,
তরুণ সকালের রোদ এলে, আপনাকে মনে পড়ে,
আপনি আছেন বলেই, বাগানে প্রজাপতি রঙীন ডানা মেলে, গাছে ফোটে স্বপ্নের ফুল, উদাসী ধানক্ষেত গান গায়, কলশী কাঁখে পল্লীবধূ আলপথে
হেঁটে যায়,
রবীন্দ্রনাথ, ছেলেবেলায় মা আপনার কবিতা শোনাতেন, রান্নাঘরে গাইতেন, ক্লান্তি আমার ক্ষমা করো, প্রভু,
সেই থেকে আপনার সঙ্গে আমার অদৃশ্য বাঁধন, সম্পর্ক যেন জন্মান্তরের,
বর্ষার গান, বিরহের গান, চৈত্রের সুর,
বসন্ত দিনে ঝুঁকে পড়া কৃষ্ণচূড়ার লালিমা, এই অনুভব তো আপনার কাছ থেকেই পাওয়া।
রবীন্দ্রনাথ, আমি যখন প্রেমিকার হাত ধরে উদাসী বিকেলে পলাশবনে হাঁটি, তখন আমি অমিত রে, আর সুচন্দা অবিকল লাবন্য হয়ে যায়,
বাবা যেদিন চলে গেলেন, সেদিন, আছে দুঃখ, আছে মৃত্যু, বিরহদহন মাঝে, মনে পড়ছিল,
মায়ের চলে যাবার দিনে,সে চাঁদের দেশে ভেসে গেছে,মনে বাজছিল,
রবীন্দ্রনাথ, কোথায় নেই আপনি,
শীতের কুয়াশা মোড়া সকালে, হেমন্ত দিনে পাইন বনে, উতরোল নদীর তীরে, আপনি আমার সঙ্গে হেঁটে যান, সুখে দুঃখে আনন্দে বেদনায় ও শোকে
আমার সঙ্গে থাকেন, আপনি।
এক স্যুটকেস পিঙ্গল দুঃখ অ্যাটাচি কেসে ভরে যখন পথে নামি,যখন গ্লানি অপমান জীবনকে ক্লেদাক্ত করে, তখন একমাত্র পরিত্রাতা আপনি ছাড়া আর কে,
রবীন্দ্রনাথ, স্বপ্নে জাগরনে, রাত্রির মধ্যযামে ব্যথায় দুরাশায়, আপনি আসেন, খুলে দেন ভাষামুখ, আপনি যে অনুভবের দূত,
মায়াময় পৃথিবীর পালাবদল তো আপনার চোখ দিয়েই দেখি,
শৈশবের অমল আমি, যৌবনের অমিত রে,
এই সাজ বদল শুধু, আপনার জন্যে,
কবি দীনেশ দাসের মতো করে বলি,
সবখানে তোমার চরণ পাতা, আমার প্রনাম রাখবো কোথায়।
সুনির্মল বসু
দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা, পশ্চিমবঙ্গ
-
ছড়া ও কবিতা
-
24-04-2023
-
-