সংসার - সুফিয়া ফারজানা
লাউয়ের তরকারিতে লবণটা বোধ হয় একটু বেশিই পরে গেল। সামান্য একটু ঝোল হাতের তালুতে নিয়ে জিভে ছোঁয়ালো সীমা। না, লবণটা বেশিই হয়ে গেল সত্যি। মামুন তরকারিতে লবণ একটু কমই খায়। লবণ বেশি হলে খেতেই পারে না বেচারা। তাই তরকারিতে লবণ দেয়ার সময় খুবই সতর্ক থাকে সীমা। কেন যে বেশি হয়ে গেল তবু?
রান্না শেষ করে ঝটপট ঘর গুছিয়ে নিয়ে বারান্দায় এসে দাঁড়াল সীমা। দুই রুমের ছোট্ট ফ্ল্যাট। খুব বেশি কিছু নেই গুছানোর। ওদের বিয়ের বয়স এখনও বছর হয়নি। সীমা এখনও ঠিক বুঝে উঠতে পারেনি সব কিছু, মফস্বলের মেয়ে মানিয়েও নিতে পারেনি রাজধানীর পরিবেশে। তবু কেমন যেন একটা মায়া পরে গেছে এই শহরটার প্রতি।
চারতলার বারান্দা থেকেই সে দেখলো, মামুন রিকশা থেকে নামলো। গেট খুলে ভিতরে ঢুকলো হয়ত। অবশ্য সেটা আর দেখতে পেল না সীমা। কলিং বেল একবার বাজতেই সে ছুটে গিয়ে গেট খুলে দিলো। প্রতিদিনের মতই শুকনো মুখে ঘরে ঢুকলো মামুন। কথা খুবই কম বলে মানুষটা। কি হতো আরেকটু প্রাণবন্ত হলে??
ঘরে ঢুকেই মামুন একটা খাম বাড়িয়ে দিলো সীমার দিকে। কেমন জানি হতাশ ভংগিতে বসে পরলো সোফায়। বললো, 'সীমা, এই মাসেও তো পুরো বেতন দিলো না।'
কেন, তা আর জানতে চাইলো না সীমা।
করোনার পরে বহু কর্মচারী ছাটাই হয়েছে মামুনের অফিসে। তার চাকরিটা যে চলে যায়নি, এতেই সীমা খুশি।
বললো, 'একটু শরবত দিবো, নাকি গোসল সেরে চা খাবে?'
'এখন আর কিছু খাবো না, সীমা। বিকালে হাবিজাবি খেয়েছি অফিসে মিটিং শেষে। একটু তাড়াতাড়ি ভাত খেয়ে শুয়ে পরবো আজ।'
শোবার ঘরে ঢুকতে গিয়ে আবার বের হয়ে আসে মামুন।
'সীমা, দেখো তো, পছন্দ হয় কি না।'
মামুন গোসলে ঢুকে গেলে প্যাকেটটা খুললো সীমা। চমৎকার একটা ওয়াল পেইন্টিং। কয়েক বার এ ধরনের পেইন্টিং পছন্দ করেও কিনতে পারেনি তারা দাম বেশি হওয়ার কারণে। সেদিন এই পেইনটিংটা বেশ কিছুক্ষণ ধরে দেখেছিল সীমা। সমুদ্রে সূর্যাস্তের ছবি। কী যে সুন্দর! কী সুন্দর! সীমা কখনও সমুদ্র দেখেনি। সেদিন মামুন বলেছিল, 'এই মাসে কিছু কেনা যাবে না, সীমা। মাসুদের বউকে কিছু দিতে পারি নাই। এবার ওর ছেলের জন্য কিছু টাকা পাঠাতেই হবে।'
মাসুদ মামুনের ভাই। ওরা জমজ ভাই। মাসুদ অবশ্য বিয়ে করেছে মামুনের বিয়ের বছরখানেক আগেই। গত মাসেই সে ছেলের বাবা হয়েছে।
হঠাৎ মনটা কেমন যেন ভালো লাগায় ভরে গেল সীমার। সে যেন ভুলেই গেল, তাদের তিন মাসের বাসা ভাড়া বাকি। ভুলেই গেল, বেতন দিতে না পেরে তার অতি প্রিয়, বিশ্বস্ত ছুটা বুয়াটিকেও সে ছাড়িয়ে দিয়েছে কয়েক দিন আগেই।।
লোডশেডিংয়ে অন্ধকার হয়ে গেল চারদিক। সীমা দু কাপ চা নিয়ে বারান্দায় এসে দেখলো, মামুন বারান্দার ইজিচেয়ারে হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে পরেছে ক্লান্ত হয়ে। পাশে রাখা ছোট বেতের মোড়াটিতে বসলো সীমা। চাঁদের আলো এসে পরেছে বারান্দায়। আচ্ছা, আজ কি পূর্ণিমা?? না বোধ হয়। তবু সীমার ভাবতে ভালো লাগছে যে আজ পূর্ণিমা।।
সুফিয়া ফারজানা
ঢাকা, বাংলাদেশ
-
গল্প//উপন্যাস
-
14-04-2023
-
-