অটোয়া, সোমবার ২৩ জুন, ২০২৫
বিনোদিনী - মুতাকাব্বির মাসুদ

বুকের ভেতর পাঁজর ভাঙ্গা এক নদী 
সে নদীর দুর্বোধ্য গহনে জলশূন্য নিরন্ন রাতের আঁধার
রোজ রাতে চোখের চাতালে অনূঢ়া দোয়েল 
শিস তুলে বিষণ্ণ বিজন বুকের বিধ্বস্ত নগরে। 

রাতজাগা কুহেলি রাতের চিবুকে 
বিমূর্ত চিত্রিণীর বিপন্ন দেহের নীল ছায়ায়
উন্নিদ্র জলের ফোঁটায় অনায়াস চিত্রার্পিত করে 
বিনিদ্র স্বপ্নকে
গোধূলির নগ্ন চরণে ক্লান্ত দিবস ঘুমায়
দিনের শেষে ক্লান্তিহীন 
নিপীড়িত সন্ধ্যার দীঘল কালো চুলে!

পুঁজিবাদের উচ্ছিষ্ট নগরে উঁচু উঁচু 'প্যারামাউন্ট' দালান
স্বপ্নহীন শৈশবহারা যুবকের 'প্যারাল্যাক্স' চোখ 
নবোদিত যৌবনি নদীয়ার বসন্ত খুঁজে অনতিদূরে কোনো এক 'প্যারাডক্স' বেলকনির অন্তঃস্থিত  নির্যাতিত- সম্ভ্রান্ত রুপোলী ঠোঁটের বিকম্পিত স্পন্দনে ।

যান্ত্রিক আলোয় বুকভরা বিভাবরী 
ছায়ার সাথে ছায়া-অবিরাম পথচলা
কোনো এক উদাস পথিকের প্রেম-অপ্রেমের
ক্ষুধিত স্বপ্নগুলো ছেড়া নীল জিন্সের পকেটে ভরা
কবে-কখন গ্রাজুয়েট সনদ হাতে 
জোড়াতালি সেন্ডেল-টিকটক শব্দ 
পিচঢালা পথের বক্ষবিদীর্ণ বিদ্রুপ 
নদিত হয় স্বেদজ আপ্লুত জলে 
যুবকের ফেরারি চোখের কার্নিশ। 

কোনো এক নক্ষত্র পতিত রাতে 
ঘুম ভাঙ্গে নিশুতির ; আঁধারের কপোলে
স্বপ্ন দিয়ে জীবনের আল্পনা আঁকে 
অভিমানী যুবক এই প্রেমহীন-স্বৈরাচারী নগরে
চোখ তাঁর স্বপ্নের হিমালয় ছুঁয়েছিলো কবে! 
স্বপ্ন ভেঙ্গে গেলো সোনালি রোদের তপ্ত চিত্রপটে।

এখন সে একা -
অবিচ্ছিন্ন উদ্বাস্তু ছায়ার সাথে পথচলা 
দূরে  কোথাও সংঘচারী একপাল বুভুক্ষু নেড়িকুকুর
দুর্বোধ্য শব্দে প্রতিবাদী আওয়াজ তুলে 
যুবকের ক্লান্ত নীল সিরায় স্পন্দিত হয় জীবনের শব্দ 
চোখ মেলে দেখে উঁচু উঁচু দালানে বিপন্ন রাতের ছায়া 
যান্ত্রিক এ নগরে নীলাভো আলোর ছায়ায়
ঘুমিয়ে গেছে কবেই! 
এরই অমীমাংসিত চোরানো ফাঁকে 
জোটবদ্ধ কালো বেড়াল ওম খুঁজে বিপন্ন রমণীর 
বিক্ষত বুকের বিনিদ্র উঠোনে! 

আলো-আঁধারির সাংঘর্ষিক সমীকরণে বিভ্রান্ত যুবক
চেয়ে দেখে  আকাশছোঁয়া দালানে 
মধ্য বয়সী সুশোভিত রমণীর-ঘুমহীন  রজনীর 
শ্রান্ত কোমল ছায়া 
জানালার অভিজাত গ্রিলের বরফ শরীরের অন্তঃপুরে  শব্দিত হয় হাজার বছর ধরে উড়ে চলা 
নীলকন্ঠ পাখির বেদনার্ত বিনির্জিত নিঃশ্বাস!

রাতজাগা পাখির-চোখের কালো 'সাটারে' খেলে
কুহকী কুহেলি-নোনা জলে ঝরে পড়ে 
অনুতপ্ত জীবনের দ্বান্দ্বিক যতো চিত্রকল্প 
সীদতি চন্দনে! 
অতঃপর প্রেমহীন-স্বপ্নহারা এই বিধ্বস্ত নগরে
উদাস যুবকের অনুক্ত বেদনার অস্ফুট উচ্চারণ 
" নগর সভ্যতায় আমাকে নিঃসঙ্গ রেখে কী সুখ 
পেলে বিনোদিনী? " 

মুতাকাব্বির মাসুদ। শ্রীমঙ্গল