ব্যথা উপসম - জয়দীপ মুখোপাধ্যায়
সে কি ব্যথা ভাষায় প্রকাশ করতে পারবো না।ব্যথাটা কোমর থেকে শুরু হয়ে ওপরে সারা পিঠ, ঘাড়, মাথা পর্যন্ত আর নীচে পায়ের পাতা অব্দি নেমে যাচ্ছে।সকালে ঘুম থেকে উঠে মনে হয় পুলিশের বস্তা পিটুনি মার খেয়েছি।ছিঁচকে চোর আর পকেটমারদের নাকি পুলিশেরা বস্তায় পুরে পিটিয়ে হাত পায়ের সুখ করে।তারপর সুখের কোটা শেষ হয়ে গেলে বস্তার মুখ খুলে ওদের ছেড়ে দেয়।সেই চোর পাক্কা তিনদিন মারের চোটে বেঘোরে শুয়ে থেকে চতুর্থ দিন থেকে লেংচে লেংচে হাঁটা শুরু করে।পিটুনির ব্যথা তার প্রায় তিনমাস থেকে যায়।এ আমি শুনেছি আমারই এক ছিঁচকে চোর বন্ধুর কাছ থেকে।ছোটবেলায় একসাথে একক্লাসে পড়তাম।বড় হয়ে আমাদের রাস্তা আলাদা হলেও বন্ধুত্ব রয়ে গেছে।আমি সেই বন্ধুকে ফোনে টোটকা চিকিৎসাটা জিজ্ঞাসা করলাম।
"কেন গুরু, কে মার দিলো? কিছু কাঁচাল পাকিয়ে ছিলে নাকি?" বন্ধু হেসে প্রশ্ন করলো চিকিৎসা পদ্ধতি বলার আগে।
" কাঁচাল পাকানোর কি আর বয়েস আছে রে। বুড়ো হতে চললাম।" আমি বলি।
"শোন, খালি গায়ে রোদ্দুরে উপুড় হয়ে শতরঞ্জিতে শুয়ে বৌদিকে দিয়ে সরষের তেল আর রসুন গরম করে সারা গায়ে দুবেলা মালিশ করা। কদিনেই সেরে যাবে।"
আমি বউকে আদর করে বন্ধুর টোটকাটা বলাতে ও প্রথমেই ভেটো দিয়ে দিল। কি আর করা যাবে। শেষে এক ওস্তাদ মালিশ করার লোক ঠিক করলাম। শুনলাম সে নাকি সারাদিন রাস্তার ইতালিয়ান সেলুনে চুল কাটে আর দুপুরে শৌখিন বাবুদের সত্যিকারের তৈলমর্দন করতে বের হয়। ওই রোজ দুপুরবেলা আমাকে গরম সরষের তেল আর রসুন দিয়ে দলাই মালাই করবে এবং একশো টাকা করে নেবে। লোকটি ভালোই। বেঁটে খাটো চেহারা, হাতের গুলিগুলো বেশ উঁচু উঁচু। প্রথম দিন মালিশ করতে করতে ও বললো, " স্যার সরষের তেল আর রসুন দিয়ে মাংস ভালো রান্না হয় কিন্তু মালিশ কি ভালো হয়?"
আমি স্তম্ভিত হলাম। "তাহলে কি দিয়ে করতে বলো?"
" চর্বি মালিশ হলো ব্যথার অব্যর্থ ওষুধ। তিমি মাছের চর্বি হলে ভালো নাহলে পাঁঠার চর্বি দিয়ে মালিশ করবো। আপনি রাজি হলে সেটা দিয়ে আমি মালিশ করতে পারি।"
আমি উভয়সঙ্কটে। একদিকে আমার ছিঁচকে চোর বন্ধুর পরামর্শ অন্যদিকে আমার নাপিতরুপি মালিশবাবুর চিকিৎসা, কোনটা রাখি সেটা নিয়ে ভীষণ দোটানায় পড়লাম।
" তুমি একদিন সরষের তেল আর একদিন চর্বি দিয়ে মালিশ করো।" শেষমেশ আমি সমাধান দিলাম। সেইমতো রোজ দুপুরবেলা জোর কদমে আমার দলাই মালাই চলতে লাগলো। কিন্তু দিন দিন আমার অবস্থায় অবনতি হতে শুরু হলো। বিষব্যথা যেন সর্বাঙ্গে ছড়িয়ে পড়লো। এলোপ্যাথিক চিকিৎসায় অবিশ্বাসী আমার বউ প্রথমে হোমিওপ্যাথির কথা বললেন। আমি কলকাতার এক বিরাট নামকরা হোমিওপ্যাথি চিকিৎসকের কাছে নাম লেখালাম। তিনদিন পর রাত এগারোটায় আমি এপয়েন্টমেন্টও পেয়ে গেলাম।
সেদিন সকাল থেকেই ঝমঝম অকাল বৃষ্টি কলকাতার বুকে। কোনরকমে আমার এক বন্ধু আর আমার অর্ধাঙ্গিনী তিনজনে প্রায় সাঁতার কাটতে কাটতে ডাক্তারবাবুর চেম্বারে হাজির হয়ে শুনি উনিও হটাৎ প্রচন্ড গায়ে হাতে পায়ের ব্যথায় কাবু হয়ে পড়ায় আজ চেম্বারে আসতে পারবেন না। এ যে দেখি আমারই সিম্পটম। ডাক্টরবাবুকে তখনই এক কোমর জলে দাঁড়িয়েই ফোন করলাম, "স্যার, আমার আর আপনার রোগের সিম্পটম একদম এক। আপনি কি ওষুধ খাচ্ছেন যদি বলেন তো সেটা আমারও কাজে লাগবে।"
" ধুর উজবুক কোথাকার।" বলে ডাক্তারবাবু ফোন কেটে দিলেন। আমরা আবার সাঁতরে সাঁতরে মাঝ রাত্রে বাড়ি ফিরে এলাম।
পরদিন দেখি ব্যথা একটু কম। পাড়ার লোকে বললো যে কলকাতার রাস্তায় সাঁতার কাটায় কাজ হয়েছে। রাস্তার জলে সাঁতরে একটু উন্নতি হওয়ায় বউ আমাকে ধরে নিয়ে গিয়ে সাঁতারের স্কুলে ভর্তি করে দিলো। দিন সাতেক হাফ প্যান্ট পরে লেংচে লেংচে গিয়ে সুইমিং পুলে লাফা ঝাঁপা শুরু করলাম। আমার সঙ্গী ছোট ছোট ছেলে মেয়েরা। ওরা আবার আমাকে 'ল্যাংড়া কাকু' বলে নিজেদের সাঁতারের সঙ্গী করে নিলো। কিন্তু মুশকিল শুরু হলো তার পরেই। লিটার লিটার জল গিলে চোখ মুখ লাল করে বাড়ি ফিরে ঘন ঘন বাথরুমে দৌড়োনো শুরু হলো। সেদিন সন্ধ্যে বেলায় ধুম জ্বর। কি আশ্চর্য্য দেখি জ্বরে আমার ব্যথা বাড়ার বদলে বেশ কম কম লাগলো। বউকে বললামও ব্যাপারটা। ও বললো, " জ্বরে ভুল বকছে।"
টানা তিন দিন পর আমার ব্যাথা আরো তিনগুন বাড়িয়ে জ্বর ছাড়ল। এলোপ্যাথিক ডাক্তারবাবু বাড়িতে আমাকে দেখতে এলেন। ডেঙ্গু বা চিকুনগুনিয়া বা দুটোই হতে পারে বলে খচখচ করে কিছু টেস্ট লিখে আমাকে আড়ালে ডেকে নিয়ে গিয়ে চশমার ওপর থেকে গভীর দৃষ্টি দিয়ে বললেন, "এটা মনের ব্যথা নয়তো?"
" মনে তো সব সময়েই ব্যথা লেগেই আছে স্যার। এত গায়ে হাত পায়ের ব্যথা, তার একটু অনুরাগের ছোঁয়া মনে তো লাগবেই?"
সব টেস্ট নেগেটিভ আসার পরেও ব্যথা আমার সারে না। বিছানায় ডান দিকে বাম দিকে ঘুরলে তীব্র ব্যথায় ককিয়ে উঠি। তার সাথে পিঠ থেকে একটা হালকা মড়মড় আওয়াজ আসাও শুরু হলো। সে আওয়াজ কেবল আমি শুনতে পাই, অন্য কেউ শুনতে পায় না। ছোটবেলার ঠাকুরমার ঝুলির হাড় মড়মড়ি রোগের কথাটা মাথায় আসতে লাগলো। আমি আরো ব্যথায় কাতর হয়ে মটকা মেরে বিছানায় শুয়ে রইলাম।
পাশের বাড়ির জেঠিমা বললেন, "যোগ ব্যায়ামে ভর্তি হয়ে যাও। কদিনেই সব সেরে একেবারে চাঙ্গা হয়ে যাবে।যোগের মতো জিনিস হয় না।"
বিশ্বশ্রী, ব্যায়ামবীর, পালোয়ান, যোগসম্রাট, যোগশ্ৰী সবার খোঁজ খবর নেওয়া শুরু হলো। অনেক পরামর্শের পর বাড়িতেই ব্যথা বিয়োগ দিতে আমার যোগ শুরু হলো। তবে আমার মাস্টারমশাই যোগী নন, যোগিনী। লম্বা, চওড়া এক ডাকিনিসমা যোগিনী রোজ সন্ধ্যায় আমাকে যোগাভ্যাস করাতে আসা শুরু করলেন। আমার বউ পড়লো মহা ফ্যাসাদে। স্বামীর মতো এক বীর পুঙ্গব আর এক যোগিনীকে এক ঘরে ভরসন্ধ্যে বেলায় ছাড়াটা বুদ্ধিমতির কাজ হবে না ভেবে ও গ্যাট হয়ে আমাদের পাশে বসে থাকা শুরু করল। কি ফ্যাসাদে যে পড়া গেল। একটু যে মন দিয়ে যোগাভ্যাস করবো সেই শান্তিও ভগবান আমার ভাগ্যে দেননি। যোগিনী আমাকে উল্টে, পাল্টে, দুমড়ে, মুচড়ে আমার প্রায় বারোটা বাজিয়ে ছেড়ে দিলো। শবাসনটাই আমার সবচেয়ে পছন্দের আসন। কিন্তু একটু বেশিক্ষন ওটা হলেই যোগিনী আবার রেগে ওঠেন।
" উঠুন, ঘাপটি মেরে শুয়ে থাকবেন না। কুঁড়ের বাদশা কোথাকার।" ওনার ধমকে আমার পিলে চমকে ওঠে আর আমি শবাসন ত্যাগ করতে বাধ্য হই।
প্রায় পনেরো দিন যোগাভ্যাস করার পরে আমার শরীরে আরো ব্যাথা যোগ হলো। কিন্তু তাও আমি অভ্যাস ত্যাগ না করে মনের জোরে আসন করে যেতে লাগলাম।
একদিন আমার অফিসের সাহেব আমার দীর্ঘ অনুপস্থিত হবার কারণ অনুসন্ধানে সকাল বেলায় সহকারী সমেত আমার বাড়ি এসে হাজির হলেন। আমার অবস্থা দেখে উনি প্রায় কেঁদে ফেলেন আর কি। বললেন, "বৌমা, ওকে চেঞ্জ এ রাজগীর নিয়ে যাও। ওখানে উষ্ণ প্রসবনে সকালে ওকে বসিয়ে যাবে আবার বিকেলে তুলে নেবে।"
এ যেন এক রান্নার পদ করার মতো হলো। এতক্ষন গরম জলে চুবিয়ে তারপর তুলে নাও। সংসার এর কড়াইয়ে আমি বিয়ের পর থেকেই রান্না হয়েই চলেছি। গিন্নি আমায় গরম তেলে ছাঁক করে ছাড়ছেন, খুন্তি দিয়ে উল্টে পাল্টে দিচ্ছেন আবার কড়াই থেকে তুলছেন। এবার আবার অফিস কর্তার পরামর্শে বাড়ির কড়াই থেকে বাইরের কড়াইতে পড়তে চলেছি। কড়াইতে পড়তে পড়তে পিছনে কড়া পড়ে গেলেও ওর থেকে আমার মুক্তি নেই। এ আমার সংসারে হাতকড়া পড়া।
দিন তিনেক পর আমি, শালাবাবু আর আমার স্ত্রী তিনজনে রাজগীর হাজির হলাম। পরদিন সকালে আমি হাফপ্যান্ট, গেঞ্জি আর হাওয়াই চটি পরে সকলের সাথে সেই পবিত্র চিকিৎসক রূপী উষ্ণ প্রসবনের দর্শনে হাজির হলাম। ছোট্ট জায়গায় হুতকো হুতকো মোটা ভক্তরা মিলে সেই গরম জলে নামতে হুড়োহুড়ি করছে। এক কোমর জলে দাঁড়িয়ে দেখি দুজন ঘুমিয়ে পড়ে রীতিমতো নাকও ডাকছে। আমি চমকিত হলাম। একজন স্নানর্থীকে বেশ শান্ত অবস্থায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করার লোভ সামলাতে পারলাম না।
"ভাই আমার তো কোমর ব্যথা, তোমার কি রোগ যে এখানে স্নান করতে এসেছ?"
লোকটা আমাকে একবার দেখে আর আমার স্ত্রীকে একবার দেখে। বোধহয় আমার স্ত্রীর সামনে ওর কথা বলতে আপত্তি। আমি শালাবাবু আর স্ত্রীকে বললাম চারঘন্টা পরে আসতে।
লোকটি আমার কানে কানে এসে বললো, "বাবাসির"
আমি চমকে উঠলাম। এ কি মন্ত্রপুত গরম জল? এতে গায়ের ব্যথাও সারে আবার বাবাসিরও সারে। অন্য লোকেদের জিজ্ঞাসা করলে সবাই নিশ্চয়ই আলাদা আলাদা অসুখের চিকিৎসা করাতে এসেছে বলবে।
কোনরকমে সেই গরম জলে নেমে প্রায় ধাক্কা ধাক্কি করে একটা দেওয়ালের কাছে দাঁড়ালাম। দেখি লোকে পরম ভক্তিভরে যে জলে স্নান করছে সেই জলই আবার চরণামৃতর মতো মুখেও ফেলছে। বাবাসিরের কথাটা মনে পড়তেই গাটা গুলিয়ে উঠলো।
প্রায় তিনদিন স্নানের পর একদিন শালাবাবু আমাকে জিজ্ঞাসা করলো, " জামাইবাবু এখন কেমন লাগছে?"
"অন্য জায়গায় ব্যথাটা কিছুটা কমলেও কোমরের ব্যথাটা বরং একটু বেড়েছে।" আমি জানাই।
"এখানে দশ কিলোমিটার দূরে এক খুব নামকরা বাবা আছেন, উনি নাকি ধনন্তরীর মতো কোমরের ব্যথার চিকিৎসা করেন। যাবেন নাকি?"
শহরের সব চিকিৎসা ফেল করাতে এখানে এলাম। এতদূর এসে আরো দশ কিলোমিটার নাহয় আরো যাবো। আমি বেপরোয়া হয়ে উঠেছি। রোগ আমাকে সারাতেই হবে। আমি রাজি হলাম।
গিয়ে দেখি সে এলাহী ব্যাপার। দূরদূরান্ত থেকে সব কোমর ব্যথার রুগীরা ল্যাংচাতে ল্যাংচাতে এসেছে। কেউ কেউ স্ট্রেচার, হুইলচেয়ার করেও এসে চুপচাপ অপেক্ষা করছে। লোকে লোকারণ্য। একটা ছোটখাটো মেলাই বসে গেছে। ফেরিয়ালারা পসরা সাজিয়ে হাঁক পাড়ছে। নাম লিখিয়ে বটগাছের ছায়ায় অপেক্ষা করার প্রায় দুঘন্টা পর আমার ডাক পড়লো। বাড়ির লোককে সঙ্গে আসতে দেওয়া হয় না। একজন ষণ্ডা মতো লোক আমাকে প্রায় পাঁজাকোলা করে ধরে নিয়ে একটা প্রায়োন্ধকার ঘরে ঢুকিয়ে একটা কম্বল চাপা দিয়ে কাঠের তক্তার ওপর উপুড় হয়ে শুতে বললো। আমি কম্বলের তলায় চোখ বন্ধ করে গরমে কুলকুল করে ঘামছি আর ভগবানকে ডাকছি। কার পাল্লায় যে পড়লাম কে জানে। শালাবাবুকে মনে মনে ভীষণ গাল পাড়ছি। ওর পরামর্শেই এখানে এসে এই গরমে উপুড় হয়ে কম্বলের তলায় শুয়ে আছি। প্রায় মিনিট কুড়ি পর ঠাওর করলাম কোনো বৃদ্ধ লোক ওনার চেলা চামুন্ডা নিয়ে ঘরের ভিতর প্রবেশ করলেন। কলকাতায় যেমন বড় ডাক্তারবাবুরা ওনাদের জুনিয়র নিয়ে রুগী দেখতে আসেন তেমনি আর কি। আড় চোখে দেখি একমুখ সাদা দাড়ি বৃদ্ধ ভদ্রলোক খালি গায়ে লুঙ্গি পরা। গলায় একটা উপবিত আর কপালে একটা লাল সিঁদুরের ফোঁটা। বয়সের ভারে বাবা একটু সামনের দিকে হেলে পড়েছেন। উনি একটু ঝুঁকে আমার কোমরটা টিপে হিন্দিতে জিজ্ঞাসা করলেন যে ব্যথা সেখানেই কিনা। আমি হ্যাঁ বলাতে উনি উঠে দাঁড়িয়ে টিপ করে আমার ব্যথার জায়গায় কসে এক লাথি ঝাড়লেন। আমি কঁকিয়ে উঠলাম। এরপর ওনার জুনিয়ররা একেক করে এসে প্রবল পরাক্রমে আমার কোমরে লাথি মারতে লাগল। যেমন করে পকেটমার পেটানো হয় আর কি। প্রায় গোটা কুড়ি লাথি মেরে ওনারা বীরদর্পে চলে গেলেন। আমি মেঝেতে পড়ে বাবা রে মা রে বলতে লাগলাম। প্রায় মিনিট দশেক পর একজন এসে একটা কিছু আঠার মতো বিশ্রী গন্ধযুক্ত ওষুধ কোমরে মাখিয়ে চলে গেল। আমার শালাবাবু এসে কড়কড়ে পাঁচশো টাকার একটা নোট লাথি মারার খরচ হিসেবে দিয়ে আমাকে উদ্ধার করলেন।
সন্ধ্যের দিকে দেখি কোমরের ব্যথা বেশ কম। কোনো ব্যথার ওষুধ খেতে হলো না। লাথি খেয়ে শরীরটা বেশ চাঙ্গা হয়ে উঠেছে। কচুরি, জিলিপি খেয়ে ফুরফুরে হাওয়ায় আমরা তিনজন টাঙ্গা করে সন্ধ্যেবেলায় রাজগীর ঘুরতে বেরোলাম।
একমাস হলো কলকাতা ফিরে এসেছি। কাজেও যোগ দিয়েছি। কোমরে কস্মিন কালে ব্যথা হয়েছিল কিনা তাই মনে করতে পারছি না। সকলকে তো আর চিকিৎসার পদ্ধতি নিয়ে কিছু বলা যায় না কেবল আমার অফিসের সেই দরদী সাহেবকে চুপি চুপি বললাম। হাজার হোক উনিই তো রাজগীর যাবার পরামর্শ দিয়েছিলেন। ওনার কাছে আমি চিরকৃতজ্ঞ।
" বলো কি।" উনি বিস্ফারিত নেত্রে আমার দিকে চেয়ে বললেন। ব্যবসায়ী লোক।ধু লোতেও সোনা চিনে ফেলেন।
কিছুদিন হলো আমি আর আমার সাহেব ট্রেড লাইসেন্স পেয়ে গেছি। জায়গা দেখাও হয়ে গেছে। যত দুরারোগ্য কোমর ব্যথার চিকিৎসার জন্য আমাদের চেম্বারের উদ্বোধনের শুভদিন দেখতে আমি বাস্তু বিশেষজ্ঞর বাড়ি হাজির হলাম। বাইরের দরজাটা পূর্বদিকে না পশ্চিমে, জানলাটা দেওয়ালে না ছাদে হবে সেসব সাহেবের কথামতো আমি জেনে নিলাম। ঘোড়ার মতো টগবগ করে ছুটে অফিসে হাজির হয়ে সাহেবকে আমাদের চেম্বারের নাম কি দেব জিজ্ঞাসা করলাম। সাহেব একটু চিন্তিত হয়ে ঘরের ছাদের দিকে চেয়ে রইলেন। ইতিমধ্যেই আমি আর সাহেব রাজগিরে হাজির হয়ে সেই বৃদ্ধ কোমরব্যথা চিকিৎসার ধন্যন্তরীর কাছে গিয়ে ওনাকে আর ওনার চার শিষ্যকে আমাদের চেম্বার উদ্বোধনের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানিয়ে এলাম।
কয়েকদিন পরই কলকাতার এক প্রখ্যাত দৈনিক কাগজে বিজ্ঞাপন দেওয়া হলো, " বিশ্বের সর্বপ্রথম, সর্বাধুনিক, অপারেশন ছাড়া বিশেষ পদ্ধতিতে কোমরে ব্যথা সারানোর জন্য 'কিকক্লিনিক' এ নাম লেখান। ভিসিট মাত্র দুই হাজার টাকা।"
জয়দীপ মুখোপাধ্যায়। কলকাতা
-
গল্প//উপন্যাস
-
01-12-2020
-
-