অটোয়া, সোমবার ২৩ জুন, ২০২৫
সেইসব অলৌকিক ভোর - সুনির্মল বসু

ভোরের পুকুরের উপর কুয়াশার আস্তরণ, ওপারে দাঁড়িয়ে থাকা কাঠবাদাম গাছ নীরব সাক্ষী,
থমকে থাকা বাঁশ বন, বাঁশ পাতায় গড়িয়ে পড়ছে রাতের শিশির জল,
ভোরের কচুবন মায়াবী আঁধারে চেয়ে আছে,
রাতের শিশিরে ভেজা জনপথ,
অজস্র ডেয়ো ফল পথে পড়ে আছে,
দূরে নারকেল গাছের শ্রেণী, সুপারি বন, জামরুল গাছ, গাব গাছের নিচে ভৌতিক অন্ধকার,
তখন রাতের অন্ধকারের ঘোর কাটেনি,
দিনগুলো ছিল বড় মায়া জড়ানো, সে বড় অভাবের দিন, সে বড় মুগ্ধতার ভোর,
সেইসব অলৌকিক ভোরগুলো কোথায় যে হারিয়ে গেল, সেই সব ভোরগুলো আর কোথাও খুঁজে পাইনা, সেই সব দিনগুলো আমায় কে ফিরিয়ে দেবে,
মোড়ল কাকুর বাড়িতে মান কচু দিতে আসা,
মালুম কাকুর সকালবেলায় দুধ দিতে আসা,
বিশ্বনাথ কাকুর প্যারেড,
মাঠ থেকে পাখির বাচ্চা ধরে আনতো আমার কাকু,
মাঝে মাঝে মাটির মিষ্টির দোকান দিই
আমি, বন্ধু কুদুর, পিতিস,
সেই রামধনু-আঁকা সকাল গুলো কোথায় হারালো,
কোথায় গেল সেই অনুপম পাখি-ডাকা অলৌকিক ভোর,
দিন যায়, বয়স বাড়ে, বয়স কত কিছু দেয়,
কত কিছু কেড়ে নেয়,
আজকাল আমি সেই অলৌকিক ভোরগুলোকে কবে থেকে কত নিবিড় ভাবে খুঁজে যাচ্ছি,
সেদিনের আকাশ মাটি ও ভালোবাসার মানুষগুলো
কতদিন হলো পৃথিবী থেকে হারিয়ে গিয়েছেন,
সেই অলৌকিক ভোর, সেই ভালবাসার মানুষগুলো
কবে যেন নদীর ওপারে চলে গিয়েছেন,
তবু চোখ বন্ধ করে আমি আজও অনুভব করি,
সেই ভালবাসাগুলো একটুও হারায় নি,
জীবনের ভিন্ন ভিন্ন আলপথে আমি সেই ভালোবাসা বারে বারে ফিরে পেয়ে যাই,
সত্যিকারের ভালোবাসা হারায় না কোনোদিন,
নদীর ঢেউয়ের মতো হারানো ভালোবাসা বারবার ফিরে ফিরে আসে,
জীবনে পাই নি অনেক কিছুই,
কিন্তু যা পেয়েছি, তার স্মৃতি টুকু নিয়ে এক জীবন অনায়াসে পার করে দেওয়া যায়,
নদীর ধারে নোঙ্গর করা নৌকার পাশে দাঁড়িয়ে
আমি আজও সেই অলৌকিক ভোরগুলো খুঁজে বেড়াই,
মাথার উপর ঢাউস ঈগল ওড়ে, ডাটা গাছের উপর লাল ঠোঁট টিয়া এসে বসে,
কে আমাকে সেই স্বপ্নের দিনগুলো ফিরিয়ে দেবে,
সেই পাখি ডাকা সকাল, সেই স্বপ্নের ভোরগুলো
কারা যেন কিনে নিল,
আমি সময় মতো সেখানে পৌছতে পারিনি।

সুনির্মল বসু
দক্ষিণ ২৪ পরগনা, 
কলকাতা, পশ্চিমবঙ্গ