অটোয়া, সোমবার ২৩ জুন, ২০২৫
রহস্যের মায়াজাল ( এগারো ) - সুজিত বসাক

দুজনে নৌকায় উঠে বসল। ব্যাগটাকে একধারে রেখে দিল শুভ্রাজিতা। দাঁড় বাইতে লাগল রাকিব।  ঘাটের দিকে তাকাতেই দেখতে পেল, একটা নির্দিষ্ট গাছের ডাল নাড়িয়ে কেউ কিছু একটার সঙ্কেত দিল।  রাকিব নিশ্চিন্ত হল, শ্যামলাল ও কিন্নর তাদের কাজ ঠিক করে যাচ্ছে। রাকিব বলল — বড় অদ্ভুত ভাবে আপনার সাথে দেখা হল। সারা জীবন মনে থাকবে। আমি কোন রাজকুমারীকে এত সামনে থেকে দেখিনি। 
—কেমন দেখলেন? শুভ্রাজিতা হেসে জিজ্ঞেস করল।
—এত তাড়াতাড়ি এ প্রশ্নের উত্তর দিতে পারব না। একটু সময় দিতে হবে। 

দুজনেই কিছুক্ষণ নীরব। নীরবতা ভেঙে রাকিব বলল — ঘটনা চক্রে আমি এই রহস্যের মধ্যে ঢুকে পড়েছি। এখন দেখছি রহস্যের শিকড় অনেক গভীরে। হয়তো অনেকেই চাইছে আমি এখান থেকে চলে যাই। আমাকে পাতালঘরে ঢুকিয়ে মেরে ফেলারও চক্রান্ত করা হয়েছিল। হীরুদা না বাঁচালে ওখানেই মরে পড়ে থাকতাম। 
শুভ্রাজিতা বলল — হীরুকাকা আমাকে সব বলেছে। আপনি সাহসী মানুষ। মায়াদিদির খুনিকে ধরতেই হবে। আমি সবরকম সাহায্য করব।
—গুপ্তধনের ব্যাপারটা আপনি জানেন?
—কিছুটা শুনেছি। মায়াদিদিই বলেছিল। মায়াদিদি আরও একটা অদ্ভুত কথা বলেছিল একদিন।
—কী কথা?
—মহাদেবের ত্রিশূল পেলে ত্রিনয়ণ জেগে উঠবে। কীসের ত্রিশূল, কোন ত্রিনয়ণ এসব অবশ্য আমি কিছুই বুঝে উঠতে পারিনি। এখন মনে হচ্ছে এই সব কথার মধ্যে কোন সূত্র আছে। মায়াদিদির হত্যার সঙ্গেও হয়তো কোনো যোগ আছে। 
চিন্তিত মুখে রাকিব বলল — অসম্ভব কিছুই নয়। গুপ্তধনকে নিয়ে অনেক ধাঁধা তৈরি হয়ে আছে। এটা হয়তো সেরকমই একটি। আপনার কাউকে সন্দেহ হয়? 
—হ্যাঁ। আমার সন্দেহ হয় জিতুকাকাকে। জিতুকাকা বাবাকে সহ্য করতে পারে না। ফন্দিবাজ মানুষ। সন্দেহ করার একটা কারণও আছে। একদিন সন্ধ্যায় রাজবাড়ির ছাদে আপনমনে ঘুরছিলাম। ছাদ থেকে পিছনদিকের ঝিলপাড়টা পরিস্কার দেখা যায়। আর একটু অন্ধকার হতেই দেখি, একটা আলো ঝিলের পশ্চিমদিকের পাড়ে চলাফেরা করছে। ভাল করে দেখার পর মনে হল, কেউ যেন কিছু একটা খুঁজে চলেছে ওখানে। কৌতূহল এতটাই বেড়ে গেল যে আর থাকতে পারলাম না। অন্দরমহলের একটা গোপন পথ দিয়ে চলে গেলাম ওখানে।
থামল শুভ্রাজিতা। রাকিব বলল — ভয় করল না আপনার?
—আমার বাবা মহারাজা বীরেন্দ্র প্রতাপ সিং ভয় জিনিসটাকে খুব একটা পছন্দ করেন না। আমাদেরকেও নির্ভীক হতে শিখিয়েছেন। ছোট থেকেই নানারকম ট্রেনিং দিয়েছেন যাতে কোন কিছুতে ভয় না পাই। বাবা বলেন, রাজপরিবারের মানুষদের বিপদ অনেক বেশি, তাই ভয়কে জয় করতে শেখা আরও বেশি জরুরি। যাইহোক, এবার আসল কথায় আসি। ওখানে পৌঁছে বুঝলাম আমার অনুমানই ঠিক। কেউ একজন গভীর মনোযোগ দিয়ে কিছু একটা খুঁজছে। একটুবাদে আর একজন এসে জুটলো। দু’জনের মুখ এমনভাবে কাপড় দিয়ে বাঁধা ছিল যে চেনার উপায় ছিল না। আমি একটা ঝোঁপের আড়ালে দাঁড়িয়ে ওদের কান্ডকারখানা দেখতে লাগলাম। পরে যে এসেছিল সে বলল, ব্যাপারটা ভাল ঠেকছে না ভাইরাজা, সাহেবের উদ্দেশ্য নিয়েও আমার যথেষ্ট সন্দেহ হচ্ছে। আমি মুখ না দেখতে পেলেও আগের লোকটাকে চিনে ফেললাম। জিতুকাকাকে সবাই ভাইরাজা বলে ডাকে। জিতুকাকা জবাবে বলল, খুব বাড় বেড়েছে সাহেবের, এবার উচিত শিক্ষা দিয়ে ছাড়ব দেখিস। সাহেব মৃত্যুবনে কেন যায় জানিস? পরে আসা লোকটা বলল, ওখানে গিয়ে কী পাবে সাহেব? নিজের মৃত্যু নিজেই ডেকে আনছে সাহেব। এই সময় হঠাৎ আমার পা হড়কে গেল। পড়েই যাচ্ছিলাম, কে যেন পিছন থেকে আমাকে ধরে ফেলল। তাকিয়ে দেখি মায়াদিদি। আমি কিছু বলতে যাওয়ার আগেই সে আমার মুখটা চেপে ধরল। ওরা ভাবল বোধহয় কোন বন্যজন্তু। ভয়ে বেশিক্ষণ দাঁড়াল না। চলে গেল। আমি অবাক হয়ে মায়াদিদিকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, তুমি এখানে এলে কী করে? তখনই মায়াদিদি আমাকে মৃত্যুবনের কাহিনী বলেছিল। শুনে আমি অবাক হয়ে গিয়েছিলাম। সেই সঙ্গে মায়াদিদিকে ভালবাসতেও শুরু করেছিলাম। 
রাকিব গম্ভীর মুখে বলল — সাহেব নামক একটি চরিত্রের কথা আমি ধীরেন্দ্র প্রতাপের ডায়েরিতেও পেয়েছি। সাহেব সম্পর্কে মায়া আপনাকে কিছু বলেছিল কখনো?
—মায়াদিদিও জানত না কে এই সাহেব। তবে এটুকু বলেছিল লোকটা আস্ত একটা শয়তান। মৃত্যুবনে গিয়ে ভয় দেখাচ্ছে এবং ওদের দিয়ে গুপ্তধন খুঁজে বের করার কাজ করাচ্ছে। ভয় দেখাচ্ছে, কথা না শুনলে ধরিয়ে দেবে। ওরা ধরা পড়লে কী হবে আপনি ভাল করেই জানেন রাকিব। ভয় পেয়েছিল মায়াদিদিও। হাজার হলেও রক্তের টান তো! 
রাকিব বলল— সাহেব ও মুখোশধারী একই লোক হতে পারে।
হঠাৎ উত্তেজিত হয়ে উঠল শুভ্রাজিতা — আমরা তো মৃত্যুবনেই যাচ্ছি, ওদের কাছেই তো শুনতে পারি সাহেব আসলে কে? ওরা নিশ্চয়ই সাহেবকে দেখে থাকবে।
রাকিবও আশান্বিত হল — আমার মাথাতেই আসেনি কথাটা। এটা জানতে পারলে অনেক কিছু পরিস্কার হবে। তবে একটু সংশয় থাকছেই, সাহেব কী এতটা কাঁচা কাজ করবে?
—তা ঠিক। তবে আশা করতে দোষ কোথায়? দেখাই যাক না ওখানে গিয়ে।
আবার কিছুক্ষণ দুজনে চুপ। নৌকা চলেছে ছলাৎ ছলাৎ শব্দে।

মৃত্যুবনে পৌঁছে ওরা দ্রুত পায়ে এগিয়ে চলল সেই পুরনো ভাঙাচোরা অট্টালিকার দিকে। হাতের ব্যাগটা বেশ ভারী, বইতে কষ্ট হচ্ছিল রাকিবের। অবাক হয়ে দেখল, রাজকীয় ঐশ্বর্যের মধ্যে বেড়ে উঠলেও কী অসাধারণ কর্মদক্ষতা রাজকুমারী শুভ্রাজিতার! বয়সে অনেকটাই ছোট, তবুও এই কুশলতাকে কুর্নিশ না জানিয়ে পারল না রাকিব। যেতে যেতে বলল — আপনি একজন রাজকুমারী, তবুও এসব কাজ এত অনায়াসে যেভাবে করছেন, আমার অনেক ধারণাই পাল্টে গেল।
খিল খিল করে হেসে উঠল শুভ্রাজিতা — সেকি! আপনি কি ধরেই নিয়েছেন রাজকুমারী মানে সেজেগুজে বসে থাকা রূপকথার পুতুল?
লজ্জা পেল রাকিব। কোন জবাব না দিয়ে নিঃশব্দে হাঁটতে লাগল।
কিছুটা হাঁটার পর হঠাৎ হাতের ব্যাগ ফেলে লাফিয়ে উঠল রাকিব। উত্তেজনায় দুহাত ছুঁড়ে দিল আকাশের দিকে। যেন মহামূল্যবান গুপ্তধন সে পেয়ে গিয়েছে! 
শুভ্রাজিতা ভীষণ অবাক হয়ে বলল — কী হল রাকিব?
রাকিব চাপা গলায় বলল — তখন থেকে একটা কথা আমার মাথার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছিল। কিছুতেই উদ্ধার করতে পারছিলাম না। সেটাই পেয়ে গেলাম বোধহয়।
—কী কথা?
—আপনি বলছিলেন না, মায়া আপনাকে বলেছিল মহাদেবের ত্রিশূল … ত্রিনয়ণ খোলার কথা? স্বয়ং মহাদেবই বোধহয় সেই ত্রিনয়ণ খুলে দিলেন। মায়ার মৃত্যু বিফলে যাবে না। যেতে দেব না।

***

আগে চলেছে হীরুদা, পিছন পিছন রাকিব ও শুভ্রাজিতা। এটা অন্য একটা পথ। রাকিব অবাক হয়ে বলল — তুমি এসব চিনলে কি করে হীরুদা?
হীরুদা হাসল — প্রায় শিশু বয়সে এবাড়িতে ঢুকেছিলাম। বড় রাজাবাবু আমাকে এই সব সুড়ঙ্গ পথের অলিগলি চিনিয়েছিলেন। তার কাছে একটা নক্সা ছিল।
—স্মিথ সাহেবের কাছে যতটুকু শুনেছি তাতে এই পাতালপুরীর পথ বহুকাল আগেই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। 
—ঠিকই শুনেছ। বড় রাজাবাবু কেমন করে জানি নক্সাটা পেয়ে যান। তারপর নিজেই এই পাতালপুরীর অনেক রহস্য ভেদ করেন ওই নক্সা দেখে দেখে। উনি আমাকে বিশ্বাস করতেন। তাই আমাকে সঙ্গে নিতেন। তবে বারবার বলতেন, এসব খবর বাইরের কাউকে বলবি না। উনি বোধহয় কিছু একটা বিপদের আঁচ করতেন। আমি কখনো ওঁর আদেশ অমান্য করিনি। 
রাকিব বিড়বিড় করে বলল — তার মানে বড় রাজাবাবুর ম্যাপটাই আসল। বাকি গুলো সব কপি। কে এতগুলো কপি বানাল? কপি করার জন্য আসলটা প্রয়োজন, সেটা পেল কি করে? আসলটা এখন কোথায়?
শেষের কথাটা বেশ জোরেই বলে ফেলল। হীরুদা যে উত্তর দিল তাতে অবাক না হয়ে পারল না রাকিব।
—আসলটা বড় রাজাবাবু লুকিয়ে ফেলেছিলেন। রাত জেগে জেগে খুব সাবধানে নিজেই দুটো কপি তৈরি করেছিলেন। খুব সুন্দর আঁকার হাত ছিল ওনার। 
—কিন্তু কপি করার প্রয়োজন কী ছিল? কেউ কি ম্যাপটার জন্য ওঁকে চাপ দিচ্ছিল?
—একদম ঠিক ধরেছ। তবে নামটা বলেননি বড় রাজাবাবু। শুধু বলেছিলেন, খুব বড় বিপদে পড়েছি রে হীরু। কী সেই বিপদ আমি জানতে পারিনি। তার কিছুদিন পরেই মারা গেলেন। মারা যাওয়ার কিছু দিন আগে ওই নক্সার একটা কপি দিয়ে বলেছিলেন, আমার যদি কিছু হয়ে যায় তুই এটা স্মিথ সাহেবের কাছে পৌঁছে দিস। আমি জানতে চাইলেও এর বেশি কিছু আমাকে বলেননি। আমার বিশ্বাস বড় রাজাবাবুকে ওষুধের হেরফের করে মেরে ফেলা হয়েছে এবং আসল নক্সাটা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে।
—তোমার কাউকে সন্দেহ হয়নি?
—সন্দেহ নয়, আমি নিশ্চিত এটা রাজমাতার কাজ। পরামর্শদাতা শিবনারায়ণ। আমাকেও পরোক্ষভাবে ভয় দেখানো হতো, সেসব তোমাকে আগেই বলেছি। কিন্তু মহারাজা আমার পাশে থাকায় বেশি সুবিধা করতে পারেনি। 

হীরুদা থামল। শুভ্রাজিতা আজ পুরুষের পোশাকে সজ্জিত। নিষ্পাপ সরল মুখের আড়ালে এক তেজস্বিনী নারী। রাকিব যত দেখছে তত অবাক হচ্ছে। সংকীর্ণ পথ ধরে এগোতে গিয়ে মাঝেমাঝেই শরীরের স্পর্শ লাগছে। রাকিব আড়ষ্ট থাকলেও শুভ্রাজিতার কোন হেলদোল নেই। আলতো হেসে এড়িয়ে যাচ্ছে। কিন্তু রাকিব ভুলতে পারছে না, বয়সে ছোট হলেও ইনি একজন রাজকুমারী। তার নিজস্ব একটা মর্যাদা আছে।
হীরুদা বলল — আমার মনে হয় ধীরু দাদাবাবু যে নক্সাটা পেয়েছিল সেটা অসম্পূর্ণ।
রাকিব হাসল— সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে? তোমার কথাতেই বুঝতে পারছি বড় রাজাবাবু ইচ্ছে করেই দুটো অসম্পূর্ণ নক্সা তৈরি করেছিলেন। তিনি বোধহয় বুঝতে পেরেছিলেন, গুপ্তধনকে কেন্দ্র করে বড় কোন গোলমাল হতে চলেছে। তাই আসলটা সরিয়ে দুটো নকল বানিয়েছিলেন। ওঁকে যারা মেরেছে তারা নকলটা নিয়েছে। কিন্তু একটা খটকা লাগছে, একটা নক্সা উনি কেন স্মিথসাহেবকে দিতে বললেন?
শুভ্রাজিতা বলল— এখানে অবশ্যই কোন জটিল রহস্য আছে। যতদূর জানি নানাজি খুব বিচক্ষণ লোক ছিলেন। বিনা কারণে কোনো কাজ করার লোক নন।
রাকিব চিন্তিত মুখে বলল— কথাটা আপনি ঠিকই বলেছেন রাজকুমারী। রহস্যের একটা ইঙ্গিত রয়েছে। আমাদের আরও ভাল করে ভাবতে হবে।
—এমনও তো হতে পারে স্মিথসাহেবকে দিয়ে তিনি কোনো কাজ উদ্ধার করতে চেয়েছিলেন? হঠাৎ করে মৃত্যু হওয়ায় সেটা আর সম্ভব হয়নি। 
—এসব উত্তর স্মিথ সাহেব জানেন। কিন্তু তিনি তো গা ঢাকা দিয়েছেন। বিশ্বাসঘাতকতা করে তার কী লাভ হল কে জানে?

হীরুদা হঠাৎ হাতের ইসারায় ওদের থামতে বলল। গভীর মনোযোগ দিয়ে কিছু শোনার চেষ্টা করল। তারপর আবার চলতে শুরু করল। রাকিব চাপা গলায় বলল — এখন আসল নক্সাটা ওদের চাই। স্মিথসাহেবের সাথে সাথে ওরাও বুঝে গেছে দুটো নক্সাই গুপ্তধন পর্যন্ত পৌঁছুবে না। আসলটা কোথায় আছে, সেবিষয়ে তোমার কোনো ধারণা আছে হীরুদা?
হীরুদা একটু চমকে উঠল যেন। মাথা নাড়িয়ে বলল — না, বড় রাজাবাবু সে বিষয়ে কোনো দিন কিছু বলেনি আমাকে। বড় রাজাবাবু ও ধীরুদাদাবাবু যে কি কুক্ষণেই ওসব নিয়ে নাড়াচাড়া করতে গেছিল! ওই গুপ্তধন অভিশপ্ত! তিন তিনটে প্রাণ চলে গেল, আরও যাবে, তোমরা দেখে নিও …।
হীরদা প্রলাপ বকার মতো বকে চলল। রাকিব থামিয়ে বলল — তোমার ব্যথাটা আমি বুঝি। এই রাজ পরিবার তোমার নিজের পরিবারের মতো, এদের কিছু হলে তোমার কষ্টটা স্বাভাবিক। তাই তো আরও কোনও অঘটন ঘটার আগেই এই রহস্যের সমাধান করতে হবে।
শান্ত হল হীরুদা — কী করে করবে সমাধান? চোখের সামনেই তো ঘটে গেল সব, কী করতে পারলাম?
—সব কিছুর সমাধান একরকম হয় না। এই সমস্যার সমাধান একমাত্র বুদ্ধি দিয়েই করা সম্ভব। তুমি শুধু একটু সাহায্য করো, দেখা যাক বুদ্ধির খেলায় জিততে পারি কিনা। কিছুটা ভরসা আমাকে করো তো?
—করি বলেই তো তোমার কথাতে এসেছি।
—বেশ, এবার বলো তো এই পাতালপুরীর কতটুকু জায়গা তোমার চেনা?
—ওভাবে বলা মুস্কিল। চারদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে, কোথায় শুরু কোথায় শেষ বোঝা খুব মুস্কিল।
—আগের দিন আমাকে যেখানে উদ্ধার করেছিলে সেখানে নিয়ে যেতে পারবে?
—নিশ্চয়ই পারব। সাথে এসো।
যেতে যেতে রাকিব বলল — সেদিন তুমি আমাকে যেভাবে উদ্ধার করেছিলে এখনও আমার কাছে অলৌকিক মনে হয়। তুমি কেমন করে জেনেছিলে যে আমি ভেতরে আটকা পড়ে আছি?
—যদি বলি কেউ আমাকে এর ইঙ্গিত দিয়েছিল …।
রাকিব হেসে বলল — এবার তো দেখছি তুমি নিজেই রহস্য তৈরি করতে শুরু করলে।
শুভ্রাজিতাও হাসল। হীরুদা গম্ভীর মুখে বলল — না গো দাদাবাবু, সত্যি সত্যি একজন এরকম কিছু একটা ঘটার ইঙ্গিত দিয়েছিল। নইলে আমি কেন শুধু শুধু যাব?
—কে? 
একটু ইতস্তত করে হীরুদা বলল — স্মিথ সাহেব।
ভীষণ অবাক হল রাকিব। বোধহয় শুভ্রাজিতাও। দু’জনে কিছুক্ষণ কোন কথা বলতে পারল না। …(চলবে)

সুজিত বসাক। কুচবিহার