জাহ্নবী জাইমা’র দু’টি কবিতা
বৃষ্টির নগ্নতায়
নগ্ন বৃষ্টিতে স্নান করে কচি ঘাস,
কাচঘরে অলস সময়। এরকম।
বাদল দিনে অসাড় পড়ে থাকে শূন্য হৃদয়,
আষাঢ়ের শেষ সন্ধ্যায় পিপাসু রমণীরা।
বাতাসে ওড়াতে থাকে কলঙ্কের বিষ জল,
রংধনু মেঘ উড়ে উড়ে ছোবল উঁচায়,
যুগপৎ দুলে ওঠে প্রকৃতি বৃষ্টি সঙ্গম।
বিরহের প্রতীক হয়ে ঝুলে থাকে বর্ষা এখন,
ঘ্রাণহীন পড়ে থাকে কিশোরী কদম।
আষাঢ় শ্রাবণ ঘন বর্ষার মাস, অতএব,
এক শ্রাবণঘন দিনে মনে পড়ে তোমাকে আবার,
একদা শরীর মনে বৃষ্টির লিরিক দৃশ্যময় হতো,
একদিন তোমার জন্য তাচ্ছিল্য করেছি।
নক্ষত্র জীবন সমস্ত মুগ্ধতা জলের নূপুর,
মেঘ বৃষ্টির মেঘনির্ঘুম রাতের বেলায়।
জলের আদরে ভাসাও স্বপ্নময় যুগল ভ্রমর,
আর আমাদের বৃত্তের ভেতরে জলের ঋণ।
শোকে ও সঙ্গমে চমকপ্রদ হয়ে শব্দময়,
করে তোলে চৌদিক। উড়ন্ত চোখে স্বরবৃত্ত।
বৃষ্টি নামে, রাত্রিগুলো অপেক্ষায় জেগে থাকে,
মেঘ বৃষ্টি, মেঘের জল গহ্বর থেকে।
স্বপ্ন ভেসে আসে। তারপর একটি আলোকস্তম্ভ,
শঙ্কিত কড়া নাড়ে। বিবর্ণ দেয়ালে কার ছায়া?
দোলে গভীর উল্লাসে? কে হনন করে সমুদ্র তৃষ্ণা,
জলের নিশ্বাস? গভীর মগ্নতায় বর্ষা বরণে।
মেতেছে তিতাস, বোঝে না সে বাংলার রমণীর,
মতো বর্ষা কত রমণীর হতে পারে বোঝে না সে।
ঋতুর বৈভব রক্তাভ প্রেমের মাংসল বিভা চুম্বনের উষ্ণতা,
ও মেঘ-বৃষ্টির মেঘ আমাকে দাও শ্রাবণ প্রশস্তি,
দাও বর্ষার অপরূপ শোভা স্নিগ্ধ শুশ্রুষা।
নিরালায় জাহ্নবী
নগ্ন নিশিভারে কোথায় গাহনে যাবে কোথায় সাঁতরাবে,
হাজার রাতের অন্ধকার কেশভার পিঠে ছড়িয়ে।
কিংবা তনুময় বৃষ্টিতে ভিজবে পৃথিবীর ঝাপসা ডালপালার মতো,
হে জাহ্নবী তুখোড় বৃষ্টিতে তুমি ভিজতে ভালোবাস।
কেন ভালোবাসো, অসুখকে ভয় পাওয়া না দেখে,
এলোচুলে বাতাসকে স্পর্শ করো ভর অবেলায় আঁচল উড়িয়ে।
কোন বৃষ্টিকেই তুমি প্রত্যাখ্যান করো না,
ধোয়া রঙের বৃষ্টির মধ্যে ধোঁয়া হয়ে হারিয়ে যাও।
তুমি ধুয়ে নিয়ে আসো তোমার দেহবলবীর অমিত গরিমা,
সে কি বন্দিদশা থেকে সুদূর অভ্যুত্থানের জন্যে।
প্রতিটি অভ্যুত্থানই তো পূণর্জন্মের মতো,
অভিনব শিল্পের দ্যোতনা।
দিব্য স্নান শেষে দেবতার পূজা করো,
প্রাগৈতিহাসিকদের প্রত্ন আলো জানে হে জাহ্নবী।
জাহ্নবী জাইমা
ঢাকা, বাংলাদেশ
-
ছড়া ও কবিতা
-
24-10-2020
-
-