অটোয়া, সোমবার ২৩ জুন, ২০২৫
বোধন - যুথিকা বড়ুয়া

এক
হঠাৎ টেলিফোনের ঝন্ ঝন্ শব্দে ঘুম ভেঙ্গে যায় তাপসীর। আচমকা তন্দ্রাজড়ানো চোখে দিশা খুঁজে পায় না। ততক্ষণে পাশের ঘরে শায়িত ওর মাতা সুধাময়ী ফোনটা রিসিভ করে। তাই বিছানা ছেড়ে উঠে আসার তাগিদবোধ করলো না। দুহাতে চোখ ডলতে ডলতে তাকিয়ে দ্যাখে, বাইরে চারিদিকে প্রাকৃতিক রূপবৈচিত্র্যের সমাহার। পূর্ব দিগন্তের প্রান্তরে উষার প্রথম সূর্য্যরে কোমল রক্তিমাভা জানালার পর্দা ভেদ করে আবিরের মতো লাল হয়ে সারাঘর  ছেয়ে গিয়েছে। ভোরের স্নিগ্ধ মৃদু শীতল বাতাস আমোদিত হয়ে আছে, রংবেরং-এর ফুলের মধুর সৌরভে। কি আনন্দময় হাস্যোৎজ্জ্বল সকাল! যেন সমন্ত মানুষগুলিকে অভিবাদন জানাচ্ছে আর অকুণ্ঠভাবে আহ্বান করছে, প্রকৃতির মন মাতানো বৈচিত্র্যময় রূপ আস্বাদন করার জন্য। চারিধারে হৃদয় আকুল করা কি মধুর আবেশ। ছুঁয়ে যায় মন-প্রাণ, সারাশরীর। ভরে ওঠে পরিতৃপ্তিতে।ইতিমধ্যে ঘড়ির ঢং ঢং শব্দে অবগত হয়, সকাল ছ’টা বাজে। জানালা দিয়ে ভেসে আসা সুরভিত শিউলির সন্ধ্যে মনে পড়ে, আজ পঞ্চমী। দেবীর বোধনের দিন। আজ সন্ধ্যায় বান্ধবী ঈশিতা, লাবণী, সুলেখা ওরা সবাই মিলে একসাথে বুড়ো শিবতলার পূজামন্ডবে দেবীর বোধন দেখতে যাবে। সাথে ঈশিতার মামাতো ভাই নিখিলদাও আসবে। খুউব রসিক মানুষ। কথায় কথায় হাসায়। দারুণ মজা হবে। ভাবতে ভাবতে কখন যে গভীর তন্ময়ে কাল্পনায় ডুবে গিয়েছিল,খেয়াল ছিলনা। হঠাৎ সূর্য্যরে কোমল রশ্মি মুখের উপর পড়তেই ভাবনা ভ্রষ্ঠ হয়ে মুহূর্তে প্রাণবন্ত উচ্ছাসের টানে আড়মোড়া ভেঙ্গে মন-প্রাণ চাঙ্গা হয়ে ওঠে। দ্রুত বিছানা ছেড়ে নেমে আসতেই পাশের ঘর থেকে ভেসে আসে ফিস্ ফিস্ শব্দ।
খক্টা লাগলো তাপসীর। আশ্চর্য্য, সাত-সকালেই জরুরী তলব মায়ের! এত গুরুত্বপূর্ণ কথা! ফোনটা করলো কে! উৎকণ্ঠায় ওর ঘরের রিসিভারটা তৎক্ষণাৎ তুলে নিয়ে নিঃশব্দে আড়ি পেতে শোনে। শোনামাত্রই বুকটা ধড়াস করে উঠে। ভরে গেল বিষাদে। ক্ষণপূর্বে যে আনন্দ-উল্লাসে উৎফুল্ল হয়ে উঠেছিল, মুহূর্তে তা ভাটা পড়ে গেল। থেমে গেল ওর প্রাণবন্ত উচ্ছাস। বিষন্নতায় ছেয়ে গেল মন-প্রাণ সারাশরীর। কে এই ভদ্রলোক? সে কার মুখদর্শণ করতে চায় না? কে তার সর্বণাশ করেছে? কে সে? আর মায়ের সঙ্গে তার কি সম্পর্ক?হাজার প্রশ্নের ভীঁড় জমে ওঠে তাপসীর। প্রচন্ড ভাবিয়ে তোলে ওকে। রহস্যজনক মনে হয়। কিছু একটা ব্যাপার আছে, যা খুবই গোপনীয়। এই অনুমান করেই অজানা বিভীষিকায় অত্যন্ত বিচলিত হয়ে ওঠে। ধৈর্য্য ধরে না ওর। উদ্ভ্রান্ত হয়ে দ্রুত ছুটে আসে মায়ের ঘরে। ওর চোখেমুখে উদ্বেগ, উৎকন্ঠা। বড় বড় নিঃশ্বাস ফেলে হাঁপাচ্ছে। কিছু বলার ব্যকুলতায় ঠোঁটদু’টো ওর কাঁপছে। 
ইতিপূর্বে ভূত দেখার মতো চমকে ওঠে সুধাময়ী। অভাবনীয়ভাবে হঠাৎ তাপসীর আগমনে হকচকিয়ে গিয়েছিল। কিংকর্তব্যবিমূঢ়ের মতো অবস্থা তার। তড়িঘড়ি করে রিসিভারটা তক্ষুণি ধপ্ করে রেখে লাইন কেটে দেয়। একটা ঢোক গিলে ফ্যাস্ ফ্যাস্ শব্দে বলল,-‘কিরে, উঠে এলি? কি হয়েছে? অমন করে হাঁপাচ্ছিস কেন? কতবার বলেছি, রাতে শোবার আগে ফোনের সুইচ অফ্ করে রাখিস। গেল তো ঘুমটা ভেঙ্গে! যা যা, গিয়ে শুয়ে পড়, আর কিছুক্ষণ গড়িয়ে নে!’এমন স্বাভাবিক গলায় বলল, যেন কিছুই ঘটেনি!
তাপসী নিঃশ্চুপ, নিরুত্তর। মায়ের অভাবনীয় ব্যতিক্রম চেহারা লক্ষ্য করে সন্দেহ আরো ঘনীভূত হতে থাকে। ওর চোখেমুখে অপার বিস্ময়, মনে সংকট, সংশয়। সৃষ্টি হয় প্রচন্ড মানসিক চাপ। অস্বন্তিবোধ করে। চোখমুখের অদ্ভুদ অবয়বে জিজ্ঞাস্য দৃষ্টিতে মায়ের মুখের দিকে চেয়ে থাকে। খুব অস্বাভাবিক লাগছে ওকে দেখতে। ভারাক্রান্ত মন। চোখমুখ ঘেঁমে একেবারে চুপসে গিয়েছে। অজানা আশক্সক্ষায় ওকে কুঁরে কুঁরে খাচ্ছে। কিন্তু মুখে কিছু না বললেও একজন অজ্ঞাত অচেনা অপরিচিত লোকের সাথে মায়ের কথোপকথনের বিষয়বস্তুটি অবগতর জন্যই ওযে উৎসুক্য হয়ে আছে, তা বোধগম্য হতেই ওকে উপেক্ষা করে সুধাময়ী। স্বাভাবিক গলায় বলল-‘ওমা, দ্যাখো কান্ড! হাঁ করে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছিস কি! বললাম গিয়ে শুয়ে পড়তে!’ বলে এক মুহূর্ত্যও আর দাঁড়ায় না। আঁচলে মুখ গুঁজে দ্রুত ঘর থেকে বেরিয়ে গিয়ে ঢুকে পড়ে ঠাকুরঘরে।
তাপসী নাছোড়বান্দা। মায়ের পিছু পিছু ওও ঠাকুরঘরে চলে আসে। টের পেলো না সুধাময়ী। পিছন ফিরতেই চমকে ওঠে। পড়ে যায় বিপাকে। কি জবাব দেবে সে এখন! মুখ খুললেও বিপদ, না খুললেও বিপদ। উভয় সংকট। বিড় বিড় করে বলে,-‘হে করুণাময়ী, দুর্গতিনাশিনী, বিপত্তারিনী, এ আমায় কোন্ পরীক্ষায় ফেলে দিলে মা, মা গো, আমায় শক্তি দাও মা!’ বলে ধপাস করে বসে পড়ে ঠাকুরঘরের চৌকাঠে। পাথরের মতো নিথর হয়ে চেয়ে থাকে শূন্য দৃষ্টিতে। গভীর তন্ময় হয়ে বিচরণ করতে থাকে ওর কল্পনায়। ধীরে ধীরে জলছবির মতো ওর মনঃশ্চক্ষে ভেসে ওঠে, অতীতের সেই ভয়াবহ তুফানি রাত। সেদিন ছিল অমাবস্যা। চারিদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার। বিদ্যুতের বাঁকা ঝিলিক। মেঘের গুড়ুম গুড়ুম বিশাল গর্জন। সেই সঙ্গে মরা কাঁন্নার মতো বাতাসের একটানা গোঙানী, শন্ শন্ শব্দ। সে একেবারে প্রলয়ঙ্করী বেগে রাজ্যের ধূলোবালি উড়িয়ে, গাছের ডালপালা দুমড়ে মুছড়ে দিগ্বিদিকে ছুটে চলে। চোখে পথ দেখা যাচ্ছে না। তন্মধ্যে শুরু হয়, মুসলধারে বৃষ্টি। যেন আকাশ ভাঙ্গা বৃষ্টি। যেদিন প্রসবকালীন জটিলতার প্রচন্ড যন্ত্রণায় কাতরাতে কাতরাতে সদ্য ভূমিষ্ঠ নবজাত শিশুকন্যার জন্মলগ্নে পৃথিবী থেকে চিরবিদায় নিয়ে নীরবে চলে গেল তাপসীর গর্ভধারিনী মাতা সাবিত্রী দেবী। যেকথা আজও তাপসীর অজানা। কিন্তু সেদিন কি ভাবতে পেরেছিল কেউ, যন্ত্রদানব এতো অসময়ে সাবিত্রীর জীবনপ্রদীপ নিভিয়ে দেবে। কখনো কি ভেবেছিল, স্বামী-সন্তান আত্মীয়-পরিজন সকলকে ছেড়ে সাবিত্রী দেবী এতো শীঘ্র চিরনিদ্রায় শায়ীত হবে। কি হৃদয়বিদারক সেই দৃশ্য। একদিকে যমে মানুষে টানাটানি। অন্যদিকে সদ্য ভূমিষ্ঠ নবজাত শিশুকন্যা তাপসীর একটানা বিরক্তিকর কাঁন্না।
একেই বলে ভাগ্যের নিষ্ঠুর পরিণতি। যেন হঠাৎ এক দমকা হাওয়ায় চোখের নিমেষে ন্তব্ধ হয়ে গেল, ছোট্ট শিশু তাপসীর মাতা-পিতার সুখী সংসার, একটি আনন্দোৎচ্ছল জীবননদীর প্রবাহ। তাদের সংসার নামক তড়ীখানা ডুবে গেল মাঝ দরিয়ায়। যেদিন নিয়তির নির্মমতায় জীবনের সবচেয়ে আনন্দঘন মুহূর্তে প্রিয়তমা পত্নী বিয়োগের শোকে -দুঃখে বিহ্বলে মুহ্যমান তাপসীর পিতা যোগেশ্বরের সুসজ্জিত জীবনকে তছনছ করে দিয়েছিল। বিরহ-কাতরতায় তাকে একেবারে নিঃসঙ্গ করে দিয়েছিল। তার সুপ্রতিষ্ঠিত সুখী ও আনন্দময় জীবনকে নিষ্পৃহা, নির্মোহ,অর্থহীণ করে তুলেছিল। জীবনের প্রতি, সংসারের প্রতি কোনো আসক্তিই তার ছিলনা। বিরহ যন্ত্রণায় তারুণ্যকে জলাঞ্জলী দিয়ে বেছে নিয়েছিল, সন্ন্যাস জীবন, নির্বাসিত জীবন। মানসিক শূন্যতায় মনোবল, বেঁচে থাকার ইচ্ছা, জীবনের কাক্সিক্ষত স্বপ্ন-আশা-ভালোবাসা সব বিরহের আগুনে জ্বলে পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছিল। যোগেশ্বরের ধারণা এবং দৃঢ় বিশ্বাস, তার নবজাত শিশুকন্যাই বয়ে এনেছে, তার সংসারে অমঙ্গল বার্তা। অশনী সংকেত। সন্তানই তার সর্বণাশের একমাত্র কারণ। সে রাক্ষশী, সর্বগ্রাসী, অলক্ষণী। সর্বোপরি অসহিষ্ণুতার কারণে ক্ষোভে দুঃখে বেদনায় যে অনাগত ভবিষ্যৎবাণী প্রিয়তমা পত্নীর জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে উচ্চারিত হয়েছিল, যোগেশ্বর তা দৃঢ়ভাবে লিপিবদ্ধ করে রাখে, তার অন্তরের অন্তরস্থলে। যা আজও নিরবিচ্ছিন্ন একাকী নির্জন সন্ধ্যায় বার বার আঘাত হানে, পীড়ি দেয় তার মুমূর্ষ্য হৃদয়কে। পারেনি তা হৃদয় থেকে অপসারিত করতে। পারেনি স্ত্রী হারানোর শোক, দুঃখ বেদনা সব ভুলে গিয়ে নিজ কন্যা সন্তান তাপসীকে গ্রহণ করতে। ওর মুখদর্শণ করতে। পারেনি আপন সন্তানকে পিতৃস্নেহ-ভালবাসার দৃঢ় বন্ধনে বেঁধে রাখতে। পারেনি হৃদয়কে স্পর্শ করার মতো নিজ রক্তে গড়া সন্তানের কোনো অবয়ব তার স্মৃতির গ্রন্থিতে ধরে রাখতে। যে কারণে নির্দয় নিষ্ঠুরের মতো সংস্কারপ্রবণ যোগেশ্বর তার কন্যা তাপসীকে পিতার সান্নিধ্য থেকে আজও পৃথক করে রাখে। দূরে সড়িয়ে রাখে। যার লালন-পালন ও ভরন পোষণের সমস্ত দায়-দায়িত্ব স্বেচ্ছায় গ্রহণ করে, স্নেহ-মমতা-ভালোবাসার ছত্রছায়ায় আগলে রাখে যোগেশ্বর মুখুর্জ্জ্যরে ভগিনী সুধাময়ী। আজ এতকাল মাতৃত্বের শূন্য হৃদয় আঙ্গিনা ভরে রাখে নয়নমণী তাপসীর আহালাদে, আবদারে। ওর হাসি-কলোতানের মধুর গুঞ্জরণে। যাকে আজও ’মা’ বলেই জানে তাপসী। 

দুই
শ্বশুড়কূলের অগাধ সম্পত্তি সুধাময়ীর। কিন্তু ভোগ করবার কেউ নেই। বংশে বাতি দেবারও কেউ নেই। স্বামীর মৃত্যুকালে স্থাবর-অস্থাবর যাবতীয় বিষয়-সম্পত্তির সমস্ত মালিকানা সুধাময়ীর নামে উইল করে রেখে গিয়েছে। ওর অবর্তমানে তাপসী। যাকে দত্তক নিয়ে মুছে ফেলেছে বন্ধা নারীর কলঙ্ক, অপবাদ। পূরণ করেছে মা হওয়ার সাধ। খুঁজে পেয়েছে নারীর অস্তিত্ব। যার রক্ষণাবেক্ষণে জীবনকে উৎসর্গ করে দিয়ে ভুলে গিয়েছে, স্বামী হারানোর শোক, দুঃখ, বেদনা। ভুলে গিয়েছে, অকাল বৈধব্যের অন্তর্নিহিত যন্ত্রণা। আপন গর্ভে ধারণ না করলেও সন্তান ও মায়ের (নাড়ীর) চিরন্তন একাত্ম  বন্ধন না থাকলেও, স্নেহ-মমতা ও হৃদয় নিঃসৃত ভালোবাসায় দৃঢ়ভাবে স্থাপিত হয় এক অবিচ্ছেদ্য বন্ধন, আত্মার বন্ধন। যা কখনো ছিন্ন হবার নয়। আজ কেমন করে সুধাময়ী ওর পিতৃ পরিচয় দেবে! কেমন করে বলবে, ওর জন্মদাতা পিতা আজও জীবিত। আজ কেমন করে উচ্চারণ করবে, যোগেশ্বর মুখুজ্জ্যই ওর জন্মদাতা পিতা। বস্তুত একথা যেমন সত্য, তেমনি এও সত্য যে, তাপসীর গর্ভধারিনী মাতা নয়। যেকথা যোগেশ্বরের শপথ বাক্যে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়ে আজ এতগুলি বছর বুকের ভিতর পাথর চাপা দিয়ে চন্দ্র, সূর্য্যরে মতো এতবড় একটা সত্যকে গোপন করে রেখেছিল, শুধুুুুুুুুুমাত্র নিজেদের স্বার্থে। কিন্তু আজ কোনভাবেই তা আর গোপন রাখা যাবে না। ঠিক এই ভয়ই করেছিল সুধাময়ী, সত্য কখনোই চাপা থাকেনা। একদিন তার উদ্ঘাটন হবেই! 
কিন্তু তাপসীকে এখন কি জবাব দেবে। কি বলে ওকে বোঝাবে। এখন ও’ আর ছোট নেই। ন্যায়-অন্যায়, ভালো-মন্দ বোঝার ওর যথেষ্ট ক্ষমতা হয়েছে। বয়সের তুলনায় তরতর করে ষোড়শীতেই পূর্ণযুবতী হয়ে উঠেছে। কিন্তু রক্তের সম্পর্ক যাবে কোথায়! যা কোনভাবে অস্বীকার করা যাবেনা। পিতার সংস্পর্শে না থাকলেও বংশগত কিছু লক্ষণ থেকেই যায়। যেটা খুবই স্বাভাবিক। বাপের মতোই একরোখা, জেদী। বিরল সেন্টিমেন্টাল। সহসা হার মানার পাত্রী নয়। মায়ের পিছুই ছাড়েনা মোটেই। ছায়ার মতো অনুসরণ করে সুধাময়ীর পিছে পিছে চলে আসে ঠাকুরঘরে। কিন্তু ওর মৌনতা, বিমূঢ়তা এবং বিষন্ন চোখের চাহনি লক্ষ্য করে মুখ লুকাবার চেষ্টা করে সুধাময়ী। কিন্তু পালাবে কোথায়! এক্ষুণি বিস্ফোরণ যে একটা ঘটবে, তা অনুমেয় হতেই বুক ধুক্ ধুক্ করে। আসন্ন বিরূপ চিত্র কল্পনা করে অশ্রæকণায় চোখদু’টো ছল্ছল্ করে ওঠে। পারেনি নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে, অশ্রু সম্বরণ করতে। আঁচল টেনে চোখ মুছতেই তাপসী দ্রুত মায়ের সন্নিকটে এগিয়ে আসে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই চাপা উত্তেজনায় নরম হয়ে বলল,-‘মা তুমি কাঁদছো? কিন্তু কেন? কি হয়েছে? লোকটি কে? কি চায় সে? তিনি কার সম্বন্ধে কথা বলছিলেন?’আঁচলে মুখে গুঁজে পাথরের মতো শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে রমলা সুধাময়ী। শূন্যদৃষ্টি মেলে চেয়ে থাকে। মুখে ভাষা নেই। মনে জোর নেই। গলা শুকিয়ে কাঠ। অনুভব করে, পায়ের তলা থেকে মাটি যেন একটু একটু করে সড়ে যাচ্ছে। এতক্ষণ যা কিছু কল্পনায় বিচরণ করছিল, এখন তা চোখের সামনে ক্রমশ জীবন্ত হয়ে ভেসে উঠছে। আশঙ্খায় মনের ভিতর কুঁরে কুঁরে খেতে থাকে এইভেবে, জীবনের শেষ সম্বলটুকুও যদি হারাতে হয়! যদি কখনো ‘মা’ বলে আর না ডাকে। সুধাময়ী বাঁচবে কি নিয়ে? কাকে নিয়ে?  
এতক্ষণ অধীর আগ্রহে মায়ের মুখপানে তাকিয়ে ছিল তাপসী। হঠাৎ ওর কম্পিত কণ্ঠস্বরে চমকে ওঠে সুধাময়ী।-‘বলো মা বলো, চুপ করে থেকো না। বলো ঐ ভদ্রলোকটি কে? কে হয় তোমার? সে কেন তোমায় বিরক্ত করছে? কি জানতে চায় সে?’
মুখ তুলে তাকায় সুধাময়ী। অসহায় চোখের চাহনি। ওর ঠোঁট কাঁপে, বুক কাঁপে। থর থর করে সারাশরীর কাঁপে। বিন্দু বিন্দু শিশির কণার মতো টপ্ টপ্ করে দু’চোখের বাঁধভাঙ্গা জল প্রপাতরাশি অনবরত ঝড়ছে। গলা দিয়ে আওয়াজই বের হচ্ছেনা। আজ কেমন করে বলবে, ক্ষণপূর্বে যে ব্যক্তির কণ্ঠস্বর টেলিফোনে ভেসে এসেছিল, সে আর অন্য কেউই নয়, দৃঢ় সংকল্পরত এবং সংস্কারপ্রবণ মন-মানসিকতার অধিকারী ওরই জন্মদাতা পিতা যোগেশ্বর মুখুজ্জ্যে। একই শহরে বসবাসরত, চাকুরীরত, শক্ত-সামর্থ এবং জীবিত। ভাগ্য বিড়ম্বণায় যার সাথে তাপসীর  কোনো সম্পর্কই নেই। 
ইতিমধ্যে হঠাৎ টেলিফোনের ঝন্ঝন্ শব্দে দুজনেই কেঁপে ওঠে। তাপসী দ্রুত রিসিভারটা তুলে বলল,-‘হ্যালো।’ 
ওপাশ থেকে ভেসে আসে উল্লেখিত সেই একই ভভ্রলোকের কণ্ঠস্বর।-‘হ্যাঁ রে সুধা, লাইনটা কাইট্টা গেল ক্যান? ভালো আছিস তরা! কই কতা কস না ক্যান? কি হইছে? রাগ করছস? কি করুম কয়, ক্যামনে বুঝাই। আমার যে বড় কষ্ট হয় রে! কোনমতেই তারে আজও ভুইলতে পারি নাই।’
তৎক্ষণাৎ এপাশ থেকে তাপসী বলল,-‘আপনি কে বলছেন?’
-‘সে কি রে, আমি যোগু,যোগেশ্বর। কথা কইতে কইতে তহন লাইনডা কাইট্টা দিলি। শরীল ঠিক আছে তো? কি হইল? কতা কস না ক্যান?’
শুনে থ্ হয়ে যায় তাপসী। একেবারে আকাশ থেকে পড়ে। মনে মনে বলে, যোগেশ্বর, এ আবার কে? কোথাকার আমদানি? এই নাম আগে তো কখনো শুনিনি। চোখেও দ্যাখেনি কোনদিন। অথচ কথাবার্তায় মায়ের খুউবই ঘনিষ্ঠ মনে হচ্ছে। লোকটা কে? কে এই যোগেশ্বর?
ঠিকই অনুমান করেছিল সুধাময়ী। উৎসুক্য হয়ে কানদু’টো সজাগ করে রেখেছিল। কিন্তু তাপসীর চোখ মুখের ভাবভঙ্গি লক্ষ্য করে স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়ে।  ভাবলো অন্য কেউ হবে। এইভেবে নিঃশব্দে বেরিয়ে গেল ঘর ছেড়ে। টের পায়নি তাপসী। তন্ময় হয়ে ডুবে গিয়েছিল বিস্ময়ের ঘোরে। কিছুক্ষণ থেমে বলল,-‘আমি সুধা নই, তাপসী। কিন্তু আপনি কে বলছেন? আপনাকে তো চিনলাম না। কখনো নামও শুনিনি। আমার মা কে হয় আপনার?’
যোগেশ্বর নিরুত্তর। জীবনে আজ প্রথমবার আপন সন্তানের স্নেহস্পর্শী শ্রুতিমধুর কোমল কণ্ঠস্বরে বুকটা তার ছ্যাঁৎ করে উঠলো। বিদ্যুতের শখের মতো একটা ঝটকা লাগলো সারাশরীরে। আপাদমস্তক কেঁপে ওঠে। হৃদস্পন্দনও আরো দ্রুতগতিতে চলতে থাকে। রূদ্ধ হয়ে যায় কণ্ঠস্বর। একটা শব্দও আর উচ্চারিত হয়না। চকিতে রিসিভারটা হ্যাং-আপ করে ষ্ট্যাচুর মতো দাঁড়িয়ে থাকে। ভিতরে ভিতরে টের পায়, অদ্ভুদ একটা শিহরণ, কি নিদারুণ একটা অনুভূতি। সে এক সম্পূর্ণ নতুন চেতনা। বড়ই তৃপ্তিদায়ক, আনন্দদায়ক। যা পূর্বে কখনো ঘটেনি। এমন অনুভব করেনি, উপলদ্ধি করেনি। যা ভাষায় বয়ান করা যায়না। অথচ ক্ষণপূর্বেও মন মেজাজ তার প্রচন্ড ক্ষিপ্ত হয়েছিল। সমানে অকথা-কুকথা বকছিল। আর এ মুহূর্তে তার সম্পূর্ণ বিপরিত।
কিন্তু এ আর নতুন কি! প্রত্যেক বছর শারদীয়া উৎসবে দেবী দূর্গার আগমনের প্রাক্কালে মাথাটা একেবারেই বিগড়ে যায় যোগেশ্বরের। হুঁশ-জ্ঞান থাকে না। একাকী নিঃসঙ্গতায় পাগলের মতো হন্যে হয়ে কল্পনায় খুঁজে বেড়ায়, তার মৃতা স্ত্রী সাবিত্রীকে। কত মান-অভিমান, অনুযোগ, অভিযোগ। ঈশ্বরের কাছে কত নালিশ তার। 
আজও সেই সকাল থেকে ভারাক্রান্ত মনে চা-জল খাবার নিয়ে বসেছিল। অথচ মুখে রুচী নেই। খাবারের প্রতি এতটুকু ভক্তি নেই। কিন্তু মন্ত্রের মতো হঠাৎ মানসিক পরিবর্তনে কিংকর্তব্যবিমূঢ় যোগেশ্বর মুহূর্তের জন্য দিশাহীন হয়ে পড়ে। স্থীর করতে পারে না কি করবে। আপনমনেই স্বগতোক্তি করে ওঠে,-‘তাপসী, আমার সেই শিশুকন্যা! এমন হতভাগা পিতা আমি, আপন সন্তানের নাম আজও জানি নে! জন্মাবধি যার মুখই দর্শণ করি নাই!’ 
নামটা উচ্চারণের সাথে সাথেই অতীত বর্তমান সব এলোমেলো হয়ে গেল ভাবুক, স্মৃতিকাতর যোগেশ্বর মুখুজ্জ্যের। চকিতে হারিয়ে যায়, অতীতের সেই মুহূর্তে, যেদিন প্রিয়তমা পত্নী সাবিত্রীর মহাপ্রয়াণে দিগ্বিদিক জ্ঞান শূন্য হয়ে ভুলেই গিয়েছিল নিজের অস্তিত্ব। ভুলে গিয়েছিল, নৈতিকতা, মানবিকতা এবং দায়বদ্ধতা। একটি নিস্পাপ শিশুর জীবনের মূল্যায়নবোধ। যার অভাবে পিতার সান্নিধ্য এবং পিতৃস্নেহ থেকে যাকে এতকাল বঞ্চিত করে রেখেছিল, আজ তারই মধুর কণ্ঠস্বরে ছুঁয়ে গেল একজন পিতার পিতৃত্বের শূন্য হৃদয়। কানায় কানায় পরিপূর্ণ হয়ে ভরে গেল, আদর-স্নেহ-ভালোবাসায়। এ যেন বর্ণনাতীত এক অভিনব অনুভূতি। অনুভত হয়, পিতৃস্নেহ-মমতা-ভালোবাসার শিথিল বাঁধন কে যেন টেনে ধরছে। সে এক অদৃশ্য বন্ধন শক্তি। ভিতরে ভিতরে অনুতাপ, অনুশোচনায় বড্ড কষ্ট হচ্ছে। ক্রমান্বয়ে অপরাধবোধের তীব্র দংশণে সংকোচ আর সংশয়ে বিচলিত হয়ে ওঠে। টের পায়, এক ধরণের বেদনানুভূতির তীব্র দংশণ। যা নদীর ঢেউএর মতো বার বার ফিরে এসে মস্তিস্কের স্নায়ূকোষে আঘাত করতে থাকে। কি কঠিন, অসহনীয় একাকীত্বের সেই চরম মুহূর্ত। আজ অদ্ভুদ বৈপরীত্য যোগেশ্বরের।
হঠাৎ প্রগাঢ় আবেগে আপ্লুত হয়ে মন-প্রাণ সারাশরীর ক্রমশ সম্পৃক্ত হতে থাকে, মায়া-মোহহীন সংসারের প্রতি ও তার নিগৃহীত এবং পরিত্যাক্ত কন্যা তাপসীর প্রতি। সম্পৃক্ত হতে থাকে, জন্মদাতা পিতার স্নেহ-ভালোবাসার অদৃশ্য বন্ধনে। চিরসত্য ও পবিত্র বন্ধনে। ইচ্ছে হচ্ছে, নিজের অপরাধ স্বীকার করে নিজেকে ধরা দিতে। পিতৃত্ব আর অভিভাবকত্বের দাবি নিয়ে পিতার পরিচয় দিতে। যে মিথ্যে সংস্কারের দৃঢ় বিশ্বাসী হয়ে আপন সন্তানের কলঙ্ক রচনা করে তাকে হৃদয় থেকে বর্জন করেছিল, আজ তারই কোমল সুমিষ্টি কণ্ঠস্বরে উচ্চারিত হোক, পিতা শব্দের চিরন্তন সত্য ও পবিত্র ধ্বনী। ঘুঁচে যাক সংস্কারপ্রবণ যোগেশ্বর মুখুর্জ্জ্যরে কু-সংস্কার। মুছে যাক তার অন্তরের পূঞ্জীভূত সমস্ত গ্লানি, মান-অভিমান। হাজার হোক সে তো তারই সন্তান, শরীরের অংশ। তাই আজ ক্ষণপূর্বে কিশোরী কন্যা তাপসীর হৃদয়াকর্ষক শ্রুতিমধুর কণ্ঠস্বর ধ্বনী প্রতিঃধ্বনীত হয়ে বার বার কানে বাজতে থাকে যোগেশ্বরের।

তিন
এ কেমন বিধাতার লীলা খেলা। ভাগ্য পরিক্রমায় বাস্তব সত্যতার সংঘাতে যোগেশ্বর আজ নিজেই নিজের কাছে পরাস্ত, অপদস্থ, অনুতপ্ত এবং মর্মাহত। ক্ষণিকের মৌনতায়, বিমূঢ়তায় যোগেশ্বরে আজ এতকাল পর নিজেকেই অপরাধী মনে হয়। নিজের ভুল স্বীকার করে আজ নিজেই নিজেকে দোষী সাব্যস্ত করে।    একেই বলে রক্তের টান। আত্মার সম্পর্ক। যা কখনো অস্বীকার করা যায়না। পিতার ছত্রছায়া থেকে যে সন্তানকে এতকাল দূরে সড়িয়ে রেখেছিল, আজ সেই দুর্ভাগ্য পিতা যোশ্বেরের আদর-স্নেহ-ভালোবাসার কোমল অনুভূতির তীব্র জাগরণে মহাপ্রলয় ঘটে তার হৃদয় পটভূমিতে। অস্থিতিশীলতায় তোলপাড় করে দেয় একজন অসহায় পিতার পিতৃত্বের হৃদয়কে। যোগেশ্বর তৎক্ষণাৎ চাপা আর্তকণ্ঠে বলে ওঠে,-‘তাপসী, তার সেই পরিত্যাক্ত কন্যা, অবজ্ঞা ও তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যে এতকাল যার মুখদর্শণ করেনি, জন্মাবধি যাকে আজও চোখের দ্যাখা দ্যাখে নি!’
শাস্ত্রে আছে,-‘পিতা পরমেশ্বর! পিতাই স্বর্গ, পিতাই ধর্ম!’ হে প্রভু, আপন সন্তানের পিতা আমি। পিতা হয়ে এ আমি কি করেছি? কেন এমন হোলো? এ যে বড়ই অর্ধম। অপরাধ করছি। আমার অপরাধ ক্ষমা করো প্রভু। আমায় ক্ষমা করো!’
বিবেকের তীব্র দংশণে যোগেশ্বর আজ মুর্ছাণ্বিত, বেদনাহত, বাক্যাহত। ক্রমাণ্বয়ে মনঃস্তাপ আর অনুশোচনার আগুনে পাষাণ হৃদয় বিগলিত হয়ে স্নেহাস্পদে সঞ্চালিত হতে থাকে তার মন-প্রাণ সারাশরীর। অনুভব করে, হৃদয় স্পর্শ করা এক অভিনব স্নেহানুভূতি। যা মরমে মরমে উপলদ্ধি করতে গিয়ে হঠাৎ মন উদাস করা নির্জন নিস্তব্ধতায় দাঁড়িয়ে অভাবনীয় ভাবনার উৎপত্তি হয় তার মস্তিস্কের মধ্যে। প্রশ্ন করে নিজেকে, স্ত্রী হারানোর শোকে বিহ্বলে সদ্য প্রস্ফূটিত ফুলের মতো একটি নবজাত শিশুকে তার পিতার স্নেহ-ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত করে তার নিঃসঙ্গ জীবনে কি পেয়েছে সে? বরং নিজেই শাস্তি গ্রহণ করে নিজেকে কষ্ট দিয়েছে, নিজের আত্মাকে কষ্ট দিযেছে। তার সংস্পর্শ থেকে সন্তানকে বিচ্ছিন্ন করে কখনো কি শান্তি পেয়েছিল কোনদিন? কখনো সুখনিদ্রায় জীবনযাপন করতে পেরেছিল কোনদিন? 
অথচ সংস্কারের প্রবণতায় দীর্ঘদিন যাবৎ অহেতুক অন্তর্কলহে শুকিয়ে শরীর তার অর্ধেক হয়ে গিয়েছে। বয়সের তুলনায় চিন্তাশক্তি ও প্রাণশক্তি অনেক কমে গিয়েছে। কর্মক্লান্ত দিনের শেষে নিথর নিস্তেজ হয়ে বাড়ি ফিরে এসে ক্ষিদে-তৃষ্ণাও মালুম হয়না। পা টান টান করে শুয়ে পড়ে বিছানায়। প্রায়ঃশই উপবাসে অনিদ্রায় রজনী অতিবাহিত করে। কোন কোনদিন ঘুমের ঘোরে আবোল-তাবোল বকতে বকতে হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে যায়। ধড়্‌ ফড়্‌ করে ওঠে। জনশূন্যতায় খাঁ খাঁ করে বুক। প্রচন্ড কষ্ট হয়। অন্তরের কষ্ট-বেদনাগুলি তরল হয়ে নীরবে বেরিয়ে আসে দু’চোখের কোণায়। কিন্তু এতবড় একটা সত্য আজ কেমন করে উন্মোচন করবে! কি কৈফেয়ৎ দেবে সে নিজেকে! তার কি পরিচয় দেবে?
ভাবতে ভাবতে হঠাৎ পূঞ্জীভূত দ্বিধা আর দ্বন্ধের কালো ছায়া সড়ে গিয়ে হৃদয়গহ্বরে জাগ্রত হয়, পিতৃত্বের তীব্র অনুভূতি। মুহূর্তেই রক্তের স্রোতের মতো শরীরের প্রতিটি রন্দ্রে রন্দ্রে, শিরা-উপশিরায় সঞ্চালিত হতে থাকে। একদন্ডও স্বস্তি পায়না যোগেশ্বর। তক্ষুণি কক্ষ্যচ্যুত উল্কার মতো উর্দ্ধঃশ্বাসে মরিয়া হয়ে ঘর থেকে ছুটে বেরিয়ে আসে বাইরে।
ওদিকে রিসিভারটা তখনও হোল্ড করেছিল তাপসী। গলা ফাটিয়ে বার ক’য়েক হ্যালো বলে চেঁচালো। কিন্তু ওপাশ থেকে কোনো সাড়া শব্দ না পেয়ে রিসিভারটা ধপ্ করে রেখে দেয়। বিরক্তি প্রকাশ করে বলল,-‘রাবিশ, ননসেন্স। দিলো সক্কাল বেলায় মুডটা অফ্ করে, ষ্টুপিড!’ 
শুনতে পেয়ে সুধাময়ী রান্নাঘর থেকে উৎকণ্ঠিত হয়ে বলে,-‘কি হয়েছে তপু? সক্কালবেলা কাকে বলছিস তুই এসব কথা?’

গলার স্বর বিকৃতি করে তাপসী বলল,-‘কে আবার, তোমার ঐ যোগেশ্বর না ঈশ্বর নামধারী লোকটা। কথাবার্তা শুনে মনে হচ্ছে তোমার বাল্যবন্ধু। আমার নাম বলতেই ব্যস, বেটার মুখে লেগে গেল তালা!’ অট্টহাস্যে ব্যঙ্গ করে বলে,-‘হেঃ, গাঁজা ফাজা খেয়েছে বোধহয়!’  
শুনে চোখমুখ রাঙিয়ে সুধাময়ী রান্নাঘর থেকে ছুটে আসে। সামান্য চটে গিয়ে বলল,-‘ছিঃ তপু, উনি বয়োঃজ্যেষ্ঠ মানুষ। তোমার পিতৃসমতূল্য, গুরুজন। অমন অকথ্য ভাষায় মন্তব্য করে তাকে অসম্মান, অশ্রদ্ধা কোরো না! শত হলেও...!’কথাটা শেষ না করে থেমে গেল। তাপসীর চোখে চোখ পড়তেই বলল,-‘তা কি কথা হলো ওঁর সাথে?’
লম্বা একটা হাই তুলে তাপসী বলল,-‘তা’হলে আর বলছি কেন! সেই সকালবেলার লোকটাই ফোন করেছিল।  প্রথমে যা বললো, কিছুই তো আমার মাথায় ঢুকলো না। বললাম, আমি সুধা নই, তাপসী। ব্যস, তারপর থেকে একটা শব্দও আর উচ্চারণ করলো না। কিন্তু তুমি এখনো বললে না তো!’
-‘কি কথা?’
-‘ঐ যে লোকটা! হয় কে তোমার? অকারণে ফোন করছে বার বার।’
গম্ভীর হয়ে সুধাময়ী বলল,-‘এতো ভাবনার কি আছে। আরো বড় হও, একদিন তুমি নিজেই সব জানতে পারবে।’ বিড়বিড় করে বলে,-কি পাপ যে করেছিলাম, কপালে আরো কত দুঃখ আছে ভগবানই জানে। বকতে বকতে ঢুকে পড়ে রান্নাঘরে।
ইতিপূর্বে মুখ ভার করে নিঃশব্দে নিজের ঘরে চলে গেল তাপসী। পা টান টান করে আবার বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়ে। 

চার
দেখতে দেখতে বেলা গড়িয়ে পড়ন্ত বিকেলে ক্লান্তসূর্য্য অস্তাচলে ঢলে পড়েছে। চারিদিকে পূজো পূজো রব। মন্ডবে মন্ডবে ঢাক বাজজে, ঢোল বাজজে, চন্ডীপাঠ হচ্ছে শোনা যাচ্ছে। রেকর্ডে বাজজে অতুলপ্রসাদী গান। রাজ্যের শিশু -কিশোর-কিশোরী, নবিন-প্রবীন সকলেই স্বতঃস্ফূর্ত মনে খুশীর পাল তুলে মেতে উঠেছে শারোদৎসবের আনন্দ মেলায়, মিলন মেলায়। তাপসী তখনও নিজের সাজ-সজ্জা আর প্রসাধনের পরিচর্যা নিয়ে ব্যস্ত। বান্ধবীদের সাথে বুড়ো শিবতলার পূজামন্ডবে যাবে দেবীর বোধন দেখতে।হঠাৎ গাড়ির শব্দ শুনে চমকে ওঠে। জানালায় উঁকি দিয়ে দ্যাখে, ধূতি-পাঞ্জাবী পরিহিত একজন অচেনা অপরিচিত প্রৌঢ় ভদ্রলোক গাড়ি থেকে নেমেই উদ্ভ্রান্ত হয়ে দ্রুত ওদের বাড়ি দিকে লক্ষ্য করে এগিয়ে আসছে। তাপসী দৌড়ে মাকে গিয়ে বলল,-‘দ্যাখো তো মা, কে যেন আসছে আমাদের বাড়িতে!’ 
বুঝতে দেরী হলো না সুধাময়ীর। শোনামাত্র বুক ধড়াস করে উঠলো। ক্ষণপূর্বে ওর চোখেমুখে যে খুশীর ঝিলিক দিয়ে উঠেছিল, মুহূর্তে তা মিলিয়ে গেল। মনে মনে বলল,‘নিশ্চয়ই দাদা এসেছে। কিন্তু এতকাল পর এ বাড়িতে কিসের জন্য? কি চায় সে? এতগুলি বছর পার হয়ে গেল, কোনদিন মেয়ের খোঁজ-খবর নিয়েছিল? বেঁচে আছে না মরে গিয়েছে, সেখবরও কি নিয়েছিল কোনদিন? দর্শণই দেয়নি কোনদিন! এখনো কি বুকের জ্বালা মেটেনি ওর? কেমন মানুষ সে? নিজের সন্তানের প্রতি এতটুকু মায়া-মমতা নেই ওর অন্তরে। মেয়েটাকে একটু শান্তিতে থাকতে দেবে না! কিন্তু আজ কোন্ পরিচয়ে সে সম্মুখে এসে দাঁড়াবে? কি পরিচয় দেবে সে? পারবে, নিজের অপরাধ স্বীকার করে তপুকে গ্রহণ করতে? পিতার পরিচয় দিতে? পারবে তার কৈফেয়ৎ দিতে? একবারও ভেবে দেখেছে সেকথা? নির্ঘাৎ চিৎকার চেঁচামিচি করে তুলকালামকান্ড একটা বাঁধিয়ে বসবে। পাড়ার লোক জড়ো হবে। তামাশা দেখাবে। কিন্তু তপুকে সামলাবে কে? ওকে কি বোলে বোঝাবে! নানান দুশ্চিন্তায় দুর্ভাবনায় উদ্বিগ্নতা আরো বেড়ে যায় সুধাময়ীর।
ইতিপূর্বে কলিং-বেলের রিংটা বেজে উঠতেই বুকটা ধরাস করে ওঠে। আসন্ন বিরূপ পরিস্থিতির অনুমানিক চিত্র কল্পনা করে বিষন্নতায় ছেয়ে যায় ওর মন-প্রাণ সাড়াশরীর। একটা শব্দও আর উচ্চারিত হয় না।  
ততক্ষণে তাপসী দ্রুত এগিয়ে এসে দরজা খুলতেই ভূত দেখার মতো চমকে ওঠে যোগেশ্বর। মাত্র কয়েক কদম দূরত্বের ব্যবধান। আচমকা তাপসীর মুখদর্শণে বড় বড় চোখ পাকিয়ে বিস্মিত দৃষ্টি মেলে পলকহীন নেত্রে চেয়ে থাকে। নিজের চোখদুটোকে বিশ্বাসই হয় না। বিস্ময়ের ঘোরে পড়ে গেলেও আপনমনে বিড় বিড় ওঠে,-এ কি, এ যে অবিকল আমার সাবিত্রী। পূণর্জনম নিয়ে ওকি আমার ঘরেই এসেছে! সেই নাক, চোখ, কপালের মাঝে সেই জোড়া ভ্রু। সাবিত্রীর মতোই সেই ডাগর চোখের মায়াবী চাহনি। পিষ্ঠদেশ জুড়ে ঘন কালো লম্বা কোঁকড়ানো চুল। এই ওর সেই কন্যা? নিজের রক্ত দিয়ে গড়া সেই সন্তান? তার শরীরের অংশ?
আর ভাবতে পারছে না যোগেশ্বর। একরাশ দ্বিধা আর দ্বন্দ্ব নিয়ে সকাল থেকে মনের সাথে প্রচন্ড যুদ্ধ করেছে। অর্ন্তকলহে বড্ড ক্লান্তি অনুভব করছে। সারাদূপুর ভবঘুরের মতো উদ্দেশ্যহীনভাবে এখানে সেখানে ঘুরে ঘুরে সময় অতিবাহিত করেছে। এখন একটু শান্তি পেতে চায়। অথচ এ মুহূর্তে ক্লান্তি আর অবসন্নতার এতটুকু রেশ কোথাও নেই তার শরীরে এবং মনে। তাপসীর দর্শণে লক্ষণীয় পরিবর্তন ঘটে যোগেশ্বরের মন-মানসিকতার। খুঁজে পায় প্রবল প্রাণশক্তি, ইচ্ছাশক্তি। নতুন করে জাগ্রত হয়, বেঁচে থাকার সাধ। কত সুন্দর এই পৃথিবী। পৃথিবীর মানুষ, মানুষের সম্পর্ক। একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধা-ভক্তি, আদর-স্নেহ-ভালোবাসা। কি নিদারুণ সেই অনুভূতি! সে এক নতুন বিস্ময়। যোগেশ্বর আজ আবেগে আপ্লুত। বিমোহিত। অভিভূত।মুহূর্তে আনন্দাশ্রুর প্লাবনে প্লাবিত হয়ে ভরে গেল শুস্ক মরুভূমির মতো যোগেশ্বরের হৃদয়-মন-প্রাণ সারাশরীর। অব্যক্ত আনন্দ-বেদনার সংমিশ্রণে অশ্রুসজলে চোখদু’টো সিক্ত হয়ে ওঠে। মন ভরে দর্শণ করেও সাধ মেটেনা। অপরাধীর মতো অব্যক্ত ভাষায় ক্ষমা প্রার্থীর দৃষ্টি মেলে চেয়ে থাকে। কি অসহায় তার চাহনি। থর থর করে হাত কাঁপে। ঠোঁট কাঁপে। ভারি হয়ে আসে তার কণ্ঠস্বর।একেই বলে সংযোগ। মনে মনে বলে,-সেই চওড়া লাল পাড়ের সাদা শাড়ি পরিহিতা। মায়ের মতোই দীর্ঘ লম্বা এলোকেশী। শুভ্র ললাটে বড় একটা লাল রঙের ফোটা। ঠিক একই বেশে পঞ্চমী তিথীতে তার হবু পত্নী সাবিত্রী দেবীকে প্রথম দেখেছিল যোগেশ্বর। আজ কত কথা মনে পড়ছে। হাসি কলোতানের কত আনন্দঘন মুহূর্তের স্মৃতি তার চোখের পর্দায় ভেসে উঠছে। আবেগের প্রবণতায় নিজেকে আর সম্বরণ করতে পারে না যোগেশ্বর। গলা ভারি হয়ে আসে।অবলীলায় দু’হাত প্রসারিত করে দিয়ে বলে,-‘আয় মা আয়, আমার বুকে আয়। আজ পঞ্চমী। দেবীর বোধনের দিন। আজ তোরে দুচোখ ভোরে দেখি। কতকাল দেখি নাই।’ 
ভিতরে ভিতরে অনুভব করে, এক ধরণের স্নিগ্ধ শীতলতায় বুকটা তার জুড়িয়ে গেল। ততক্ষণে পিতৃস্নেহে বুকে জড়িয়ে ধরে তাপসীকে। কাঁন্নাজড়িত কণ্ঠে বলল,-‘তুই তো আমার অন্নপূর্ণা মা। আমার আনন্দময়ী মা। আমায় চিনতে পেরেছিস মা!’লম্বা একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে বলে,-‘ওরে, আমিই তোর হতভাগ্য পিতা যোগেশ্বর। হ্যাঁ আমিই যোগেশ্বর, তোর জন্মদাতা পিতা। আজ আমি বড় একা, বড়ই অসহায়, নিঃসঙ্গ। বহুকাল যাবৎ বুকটা আমার শূন্য হয়ে আছে মা। বাবা বলে একবার আমায় ডাক মা। মন যে আমার বড় উতলা হয়ে আছে মা। বড় আশা নিয়ে এসেছি, এই বুড়ো ছেলেটাকে শূন্যহাতে ফিরিয়ে দিসনে মা। আয় মা আয়, আমার বুকে আয়!’বলতে বলতে তাপসীকে সজোড়ে বুকে চেপে ধরে হাউ হাউ করে কেঁদে ওঠে যোগেশ্বর। 

অপ্রস্তুত তাপসী মুহূর্তের জন্য হতভম্ব হয়ে গিয়েছিল। বিস্ময় আর সংকটে বাকরুদ্ধ হয়ে ষ্ট্যাচুর মতো দাঁড়িয়ে ছিল। আচমকা যোগেম্বরের আগমন, ওর উপস্থিতি এবং তার কথাবার্তা শুনে একেবারে আকাশ থেকে পড়ে। জেগে জেগে ও’ স্বপ্ন দেখছে নাকি। বলে কি ভদ্রলোক। নিজের কানদু’টোকে কিছুতেই বিশ্বাস হয়না ওর। এ তো স্বপ্নেরও অতীত। কল্পনাই করা যায়না। অথচ চন্দ্র সূর্য্যরে মতো নিতান্তই বাস্তব সত্য। যাকে এতকাল তাপসী মৃত বলে জানতো, আজ সেই ব্যক্তিই সশরীরে ওর সম্মুখে দাঁড়িয়ে। 
কিন্তু কতক্ষণ! একরাশ ক্ষোভ আর বিস্ময় নিয়ে জিজ্ঞাস্য দৃষ্টিতে মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে এক ঝটকায় পিতার আলিঙ্গন থেকে বেরিয়ে আসে। প্রচন্ড আলোড়ণ সৃষ্টি হয় মনের মধ্যে। ক্ষণিকের নীরবতায় হাজার প্রশ্নের ভীঁড়ে জর্জড়িত হতে থাকে। কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না। মাতা সুধাময়ীর মৌনতা এবং বিমূঢ়তা লক্ষ্য করে সত্যতা জাহির করবার আর অপেক্ষা রাখেনা। প্রচন্ড ক্ষীপ্ত হয়ে ওঠে তাপসী। মুহূর্তে চোখমুখ ওর লাল হয়ে ওঠে। এতবড় বাস্তব সত্যকে চেপে রাখার মূল কারণ আজ ওকে জানতেই হবে। কি সেই রহস্যের জ্বাল ওকে খুলতেই হবে।হঠাৎ কাঁন্নাজড়িত কণ্ঠে মায়ের হাতদু’টো চেপে ধরে বলে,-‘এসব কি শুনছি মা! বলছেন কি উনি? বলো মা বলো, সত্যিই উনি আমার পিতা? তবে এতকাল কোথায় ছিলেন? কেন এতকাল আমায় দেখতে আসেন নি? পিতার স্নেহ-ভালোবাসা থেকে কেন আমায় বঞ্চিত করে রেখেছিল? তোমরা কেন আমায় এতকাল জানাও নি, জানতে দাওনি। কেন তোমার এই বেশ? তুমি কেন বৈধব্যের রীতি-নীতিগুলি সব যথারীতি পালন করো? একাদশী করো, নিরামিশ আহার ভোজন করো। কেন, কেন করো বলো মা বলো? আজ তোমাকে বলতেই হবে, তোমার কেন এই বেশ বলো?’ 
কিন্তু কি বলবে সুধাময়ী। দীর্ঘ ষোলবছর পর আজ অপ্রত্যাশিত যোগেশ্বরের আগমন এবং তার অভাবনীয় ভাবমূর্তি লক্ষ্য করে বিস্ময়ে একেবারে থ্ হয়ে গিয়েছিল। যা কখনো স্বপ্নেও কল্পনা করতে পারেনি। কিন্তু কি আশ্চর্য্য, আজ চোখেমুখে নালিশ কিংবা অভিমানের ছাপ বিন্দুমাত্র কোথাও নেই যোগেশ্বরের। দীর্ঘদিন পর আজ ওর মুখমন্ডল কি শান্ত, প্রশান্ত । একটা শব্দও উচ্চারিত হচ্ছে না। ভিতরে ভিতরে খুশীর প্লাবনে প্লাবিত করে হৃদয়ের দুকূল ছেয়ে গেলেও অভিমান আর অব্যক্ত খুশীর সংমিশ্রণে চোখদু’টো ছল্ছল্ করে ওঠে সুধাময়ীর। কিন্তু ওর নীরব নির্বিকার আচরণে সত্য প্রমাণিত হতেই মনকে প্রচন্ড আন্দোলিত করে, উদ্বেলিত করে তাপসীর। একরাশ মনবেদনা আর অভিমান নিয়ে চোখেমুখের বিচিত্র অবয়বে মাতা সুধাময়ীকে অনবরত প্রশ্ন করতে থাকে। কিন্তু ওর কোনো কথা কানে তুলছে না। গুরুত্ব দিচ্ছে না। সুধাময়ী ওকে উপেক্ষা করার চেষ্টা করে।
ততক্ষণে ধীর পায়ে তাপসীর সন্নিকটে এগিয়ে আসে যোগেশ্বর। মৃদুস্পর্শে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,-‘ওকথা বলে ওকে কষ্ট দিসনে মা। ওতো আমার ভগিনী সুধা, তোর পিসিমনি। হতভাগিনী কপাল দোষে অকাল বৈধব্যে জীবনের সব রং ওর মুছে গিয়েছে। তোর মা সাবিত্রী বহুকাল আগেই আমাদের ছেড়ে চলে গিয়েছে। সুধাই কোলে পিঠে করে তোকে লালন-পালন করেছে, বড় করেছে। তুই ছাড়া আমাদের আর কে আছে বল মা!’
ক্রোধে, অভিমানে ফেটে পড়ে তাপসী। মুহূর্তে চোখমুখ ফুলে লাল হয়ে ওঠে। অশ্রুজলে প্লাবিত হয়ে পরণের কাপড় চোপড় সব যাচ্ছে। হিচকি টেনে কেঁদে কেঁদে পিতা যোগেশ্বরকে বলে,-‘তবে কেন এতদিন আমায় দেখতে আসো নি? কেন আমায় দূরে সড়িয়ে রেখেছিলে?  কি অপরাধ করেছিলাম? পিতার সংস্পর্শ থেকে কেন আমায় বঞ্চিত করে রেখেছিলে? তোমরা কেন আমায় এতবড় শাস্তি দিয়েছ? কেন? কিসের জন্যে? তোমরা কেন একথা আমায় এতদিন জানাও নি?’ বলতে বলতে পিতা যোগেশ্বরের মুখপানে পলকমাত্র দৃষ্টিপাত করে দৌড়ে নিজের ঘরে ঢুকে বিকট শব্দে দরজা বন্ধ করে দিলো। 
সুধাময়ী বলল,-‘দিলে তো দাদা মেয়েটার আনন্দ মাটি করে! যাও যাও শীগগির যাও, এবার সামলাও তোমার মেয়েকে।’

যুথিকা বড়ুয়া। টরন্টো
(যুথিকা বড়ুয়া, কানাডার টরন্টো প্রবাসী গল্পকার, গীতিকার, সুরকার  ও সঙ্গীত শিল্পী। jbaruajcanada@gmail.com)