অটোয়া, সোমবার ২৩ জুন, ২০২৫
ঈশ্বরের ঠিকানা - সৌরভ দত্ত

দাঁড়িয়ে জোড় হাতে মন্দিরের প্রতিমা প্রণাম করছেন তিনি...

বাজারের দিক থেকে অগুনতি গাড়ি এদিকে ধেয়ে আসছে।
পরপর দু'টি লরি, গোটা দশেক বাইক, যাত্রীবাহী বাস, ইত্যাদি।
উল্টোদিক থেকে টুকটাক অটো, টোটো, এবং একটি ট্রলার।
ট্রলারচালক সংকেত দিলেন মোড় থেকে ডাইনে বাঁক নেয়ার।
সন্ত্রস্ত দেখাচ্ছে বৃদ্ধপ্রায় চালককে, দৈত্যাকার গাড়ি বলে কথা।
তেমাথা মোড়ের তিনদিক জুড়ে রীতিমতো যেন গাড়ির মেলা।
অথচ, এসবকিছুকেই একা হাতে নিয়ন্ত্রণ করার কথা যাঁর...
দাঁড়িয়ে জোড় হাতে মন্দিরের প্রতিমা প্রণাম করছেন তিনি।

আমি স্টিয়ারিং হাতে অপেক্ষায় আছি তেমাথা মোড়ের মুখটায়।
পেছনে আরো দুখানি ছোটগাড়ি নিয়ে অপেক্ষা চলে দু'জনের।
আমায় উদ্দেশ্য করে অসহিষ্ণু যন্ত্রধ্বনি আসছে পেছন থেকে।
বিচলিত হচ্ছি আমি, তবে অভিজ্ঞতাকে পুঁজি করে থেমে আছি।
ওদিকে ট্রলারচালক দ্বিধায়, বাঁক নিয়েই নেবেন, না দাঁড়াবেন।
ওপার থেকে এপারে আসার পথচারীরা দৌড়ে চলে আসেন।
অথচ, এসবকিছুকেই একা হাতে নিয়ন্ত্রণ করার কথা যাঁর...
দাঁড়িয়ে জোড় হাতে মন্দিরের প্রতিমা প্রণাম করছেন তিনি।

এরইমধ্যে একটি বাচ্চা ছেলে, বয়স কত হবে, আট কি নয়।
ঢাউশ একখানা সাইকেল নিয়ে এদিকটায় আসতে চাইছে।
পেরিয়ে আসা যাবে? নাকি দাঁড়াবে? চরম সিদ্ধান্তহীনতা।
পেরোতে চাইলে, সাইকেলে চাপবে, নাকি সাইকেল ধরে ছুটবে?
দ্বিধান্বিত আড়চোখে দুদিকে তাকিয়ে যেন দিশেহারা বাচ্চাটি।
অনিশ্চয়তার চোরাস্রোতে ক্ষণিকের অসহায়তা ওর চোখেমুখে।
অথচ, এসবকিছুকেই একা হাতে নিয়ন্ত্রণ করার কথা যাঁর...
দাঁড়িয়ে জোড় হাতে মন্দিরের প্রতিমা প্রণাম করছেন তিনি।

গাড়িঘোড়ার হুড়োহুড়ি এখানে ক্ষণস্থায়ী, অভিজ্ঞতায় জানি।
মিনিটের কাঁটা ঘুরতে না ঘুরতেই রাস্তায় শান্তি নেমে আসে।
ট্রলার নিজের পথ ধরে ফেলে, আমি আমার, বাকিরা যার যার।
বাচ্চা ছেলেটিও সাইকেলে চেপে রাস্তা পেরোয় বুক ফুলিয়ে।
আবার দূর হতে ছুটে আসতে থাকে সারি সারি গাড়িঘোড়া।
অশান্ত তেমাথা মোড় চুলোয় যাক, তিনি ঈশ্বরে নিবেদিত প্রাণ।
কাজের সময়ে যাঁর ঈশ্বরের ঠিকানা শুধু এই তেমাথা মোড়...
কাজ ফেলে তিনি ঈশ্বর খুঁজে থাকেন কোন এক মন্দির পানে।

... এখনো জোড় হাতে মন্দিরের প্রতিমা প্রণাম করছেন তিনি।

সৌরভ দত্ত। পশ্চিমবঙ্গ