কোয়ারেন্টাইন - রাহিমা আক্তার
জানালার গ্রিলের ফাঁক দিয়ে এক টুকরো রোদের কড়াঘাতে রুবির ঘুম ভাঙে। চোখ মেলে দেখে বারান্দার গ্রিলে থাকা চড়–ই, টুনটুনি, দোয়েল, বুলবুলি পাখি রোদের সাথে মিতালি করছে। দোয়েলের মনে ভীষণ সুখ। রাতে বেশ আরাম করে ঘুমিয়েছে। আবহাওয়া ভারি সুন্দর ছিল। ঝড়ো বাতাস ছিল না। গত দুই দিন বৃষ্টি ছিল; আজ নেই, নির্ঝঞ্ঝাট নিশ্চিন্ত মনে সে ঘুমিয়েছে। সেই কথাই দোয়েল টুনটুনিকে বলছিল।
রুবি রোদকে মুচকি হেসে বিদায় দিয়ে বিছানা ছেড়ে উঠল। রুবি ঘর থেকে বের হয়ে উঠানের কাছেই একটি গোলাপ গাছে দুটি কলি ও একটি ফুল দেখে মনে মনে ভীষণ খুশি হলো। রুবি গোলাপ গাছটার কাছে এগিয়ে গেল। গাঢ় সবুজ পাতার ফাঁকে গোলাপ ফুলটি কথা বলছে কলির সাথে।
গোলাপ: আমি তো এসেছি তোদের আগে। বাড়িটি খুব সুন্দর, বাড়ির মানুষজনও। বাড়ির মালিকইতো যত্নাদি করে আমাদের।
- ওই দেখ, ফড়িং (ফড়িংটি লাফি দিয়ে গোলাপের একটি ডালে গিয়ে বসল।)
গোলাপ: কী ব্যাপার ফড়িং, সকাল সকাল আস্লে যে!
ফড়িং: আর বোলো না, ভোরে ঘুম ভেঙে গেল কাকের ডাকে। ও তো একটা স্বভাবই বদলাতে পারলো না। ঘুম থেকে উঠেই কা-কা জুড়ে দেয়।
- যাগ্গা, তোমার কী খবর? তোমার কলিরা কেমন আছে?
গোলাপ: হুম, ওদের সাথেই এতক্ষণ কথা বলছিলাম, বাড়ির মালিককে নিয়ে।
ফড়িং: কে? রুবি বেগম?
গোলাপ: হুম!
ফড়িং: ভারি ভালো মানুষ, কত কষ্ট করে সংসারের হাল ধরে রেখেছে। তার উপরে কাক, কুকুর, হাঁস, গরু, ছাগলের অত্যাচার।
গোলাপ: কী আর বলব, ওরা যতই জ্বালাতন করুক, উনি কখনও রাগ করে না।
ফড়িং: ওই তো সেদিন, খাবার না পেয়ে গরুটা কী রেগে গিয়েছিল। গোয়াল ঘর থেকে বের করতে গেলে দিল ছুট, আবার গুতো দিতে গেল।
গোলাপ: কী সাংঘাতিক! যার আদরে থাকে আবার তাকেই কিনা গুতো দিতে চায়।
ফড়িং: আর হাঁসের প্যাকপ্যাকানি তো আছেই।
গোলাপ: কুকুরটা অবশ্য বেশি বিরক্ত করে না, খাবার পেলে খেয়ে চুপচাপ পড়ে থাকে।
ফড়িং: রাতের ডিউটিটাও ভালোই করে।
রুবি বেগম চোখ মুছতে মুছতে গোলাপ গাছের দিকে এগিয়ে গেল। পিছু নিল কুকুরটা।
রুবি বেগম: কীরে? তুই কী চাস? নাস্তার তো সময় হয় নাই। বলতে বলতে গোলাপ গাছের দিকে এগিয়ে যায় রুবি বেগম। গোলাপ ফুলটিকে হাত বুলিয়ে আদর করে দেয়, সাথে কলিদেরও।
উঠানের ডানপাশে জাংলার দিকে চোখ যায় রুবি বেগমের। জাংলায় জালি, ঝিঙে, ধুন্দুল, চিচিঙ্গা গাছে ছেঁয়ে আছে। সবুজ পাতার মাঝে হলুদ রঙের ফুল মৃদু বাতাসে দোল খাচ্ছে আর মাথা নেড়ে নেড়ে কী যেন গল্প করছে।
চিচিঙ্গা ফুল একটু ছোট তবে তার পাঁপড়িগুলো অনেক সুন্দর। ধুন্দুল ফুল একটু বড় আকৃতির। এই নিয়ে ধুন্দুল ফুলের খুব গর্ব। ধুন্দুল ফুল প্রায়ই চিচিঙ্গাকে বলে- তুমি তো ছোট, তুমি কী বুঝ? দেখ আমাকে, যেমন আমার আকার তেমনি আমার রূপ। প্রজাপতি, মৌমাছি সবাই আমার সাথে ভাব করে। তোমার সাথে তো কারোরই ভাব নাই, তোমার কাছে কেউ যায় না।
চিচিঙ্গা ফুল হেসে বলে- আমাকে তোমার ছোট মনে হয়?
ঝিঙে ফুল পাশ থেকে বলে- কী শুরু করলে তোমরা? চুপ করো তো। তোমাদের এত গর্ব কীসের? আমি তো কোনো গর্ব করি না। দেখ আমাকে নিয়ে কত বড় বিখ্যাত কবি কবিতা লিখেছেন। স্কুলের মাস্টার মশাই জোরে জোরে সেই কবিতা সব্বাইকে শোনায়। আমাকে নিয়ে লেখা কবিতা পাঠ্যবইয়ে ছাপা হয়েছে। পাশের মেম্বার বাড়ির স্কুলের ভেতর থেকে সেই কবিতার ছন্দ ভেসে আসে। কবিতা শুনতে আমার ভালোই লাগে।
ঝিঙে ফুল আরো বলে, তোমরা গর্ব কোরো না, দেখো না গর্ব, অহংকার, হিংসার কারণে মানুষদের আজ কী অবস্থা! তারা আজ ঘরবন্দি। কেউ কারো সাথে মিশতে পারছে না। হাত পর্যন্ত মেলাতে পারছে না। কত বড় দ্ইুটা ঈদ গেলো, এই ঈদে কোলাকুলি, মিষ্টিমুখ, একে অন্যের বাড়িতে যাওয়া-আসা কিছুই করতে পারছে না। মানুষ হাট-বাজারে যেতে পারছে না। সরকার লকডাউন দিয়ে সব্বাইকে লকআপ করে রাখছে।
স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হয়ে গেছে। সোস্যাল ডিসট্যান্স মানতে বলছে। জনসমাগম নিষেধ। গণপরিবহণ বন্ধ। একসাথে অনেকজন বসে গল্প করতে পারবে না। আবার ঘন ঘন সাবান পানি দিয়ে হাত ধুতে হবে। সব মানুষ আতঙ্কের মধ্যে আছে। দেশে মহামারি দেখা দিছে। সবাই ঘরে থেকে কী যেন করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। এই ভাইরাস নাকি খুব শক্তিশালী। একবার কারো দেহে ঢুকতে পারলে তার ফুসফুস অকেজো করে দেয়। শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ করে দেয়।
শুধু তাই না একজনের দেহে ঢুকে নিজে আরো শক্তিশালী হয়ে বংশবৃদ্ধি করে রোগীর হাঁচি কাশির মাধ্যমে বের হয়ে আশেপাশে তিন ফুটের মধ্যে যারা থাকে তাদেরকেও আক্রমণ করে।
ধুন্দুল ফুল: কী সাংঘাতিক ব্যাপার!
চিচিঙ্গা ফুল: ছোট্ট ভাইরাস দেখা যায় না কিন্তু তার পাওয়ার কত। সবাইকে এক্কেবারে নাস্তানাবুদ করে ফেলছে। আর যদি কোনো রকমে হার্টের রোগী, ডায়াবেটিসের রোগী, বয়স্ক মানুষের শরীরে ঢুকে তাহলে তাকে সহজেই ঘায়েল করে ফেলে।
ধুন্দুল ফুল: হ্যাঁ, মানুষের মুখের দিকে তাকানো যায় না। অর্ধাহারে, অনাহারে দিন কাটাচ্ছে। কাজ নেই, কর্ম নেই কী করে পেট চলবে। ঘরে তো পর্যাপ্ত খাবারও মজুদ নেই যে বসে বসে খাবে। আমাদের মতো গরীব, ঘনবসতিপূর্ণ দেশে মানুষের জীবনমান দিন দিন খারাপের দিকে যাচ্ছে।
ঝিঙে ফুল: শুধু আমরা কেন বড় বড় উন্নত দেশেও নাকি অনেক মানুষ মারা যাচ্ছে।
চিচিঙ্গা ফুল: শুনলাম এই গ্রামেরই ডা. আফাজউদ্দীন ইতালিতে থাকত, সেও নাকি করোনাতে মারা গেছে।
ধুন্দুল ফুল: পৃথিবীর অবস্থাই ভালো না। মানুষগুলো ভালো থাকব কী করে?
ঝিঙে ফুল: আর দেখ, মেম্বার বাড়ির স্কুলটা ছোট ছেলেমেয়েদের হৈ-হুল্লোড় চেঁচামেচিতে মুখরিত থাকত। সকাল নয়টার মধ্যে সবাই স্কুলে চলে আসত। মাঠে দৌড়াদৌড়ি, খেলাধুলা করত। ক্লাসে মাস্টাররা জোরে জোরে পড়াইতো। সবাই একসাথে গলা ফাটিয়ে গুণের নামতা পড়ত। সেইসব কিছুই নেই।
চিচিঙ্গা ফুল: সেদিন গল্প শুনলাম, এখন নাকি টিভিতে, মোবাইলে মাস্টাররা পড়ায়। ছেলেমেয়েরা ঘরে থেকে টিভিতে, মোবাইলে ক্লাস করে।
ঝিঙে ফুল: হুম, সেদিন পাশের বাড়ির ঘর থেকে শুনলাম এক আপা ‘ঝিঙে ফুল’ কবিতাটি পড়াচ্ছে। শুনে আমার যে কী ভালো লেগেছে তোদেরকে বলে বুঝাতে পারব না। আপায় আমার ছবি দেখাইতেছে, আবার জিজ্ঞেস করতেছে ‘তোমরা কী চিন?’ -এটা ঝিঙে ফুল। অনেক সুন্দর করে ফুলের রূপের বর্ণনা দিচ্ছে, কবিতার চরণ ব্যাখ্যা করছে, ছবি দেখাচ্ছে। সবাই মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুনছে। আমিও শুনছি, কী যে আনন্দ পেলাম!
ধুন্দুল ফুল: সবাই ঘরে বসেই পড়াশুনা করছে। অনেকের ঘরেই টিভি আছে। সবাই টিভিতে ক্লাস করে।
ঝিঙে ফুল: ওহ্, যেটা বলছিলাম। গর্ব, অহংকার করা ভালো না, ঝগড়া, ফ্যাসাদ করা ভালো না, অন্যের হক নষ্ট করা, অন্যায়, দুর্নীতি, সুদ, ঘুষ ভালো না। মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। তারাই আজ হুমকির মুখে। আর আমরা তো ছোট। আমাদের উচিত একসাথে মিলেমিশে থাকা। তোরা আর ঝগড়া তর্ক করবি না।
- সবাই সমস্বরে বলে উঠল, ঠিক আছে ঝিঙে ফুল।
এতক্ষণ পাশের গাছের ডালে বসে কথাগুলো শুনছিল কাক, শালিক, টুনটুনি, দোয়েল। ওরাও বলে উঠল - ঠিক ঠিক।
কুনো ব্যাঙ জাংলার নিচ থেকে বলে উঠল - হ্যাঁ, হ্যাঁ।
রুবি বেগম জাংলার দিকে এগিয়ে আসতেই সবাই চুপ হয়ে গেল।
রুবি বেগম জাংলার চারদিকে ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগল। জালি, ঝিঙে, চিচিঙ্গা, ধুন্দুল গাছে অনেক ফুল এসেছে। আবার কিছু কড়াও বের হয়েছে। কয়েকদিনের মধ্যেই এগুলো খাওয়ার উপযোগী হয়ে যাবে।
আতালের (গরু রাখার স্থান) দিকে এগিয়ে গেল রুবি বেগম। দুইটি গরু মুখোমুখি বাঁধা। সামনে কোনো খাবার নেই। চারে (চাই/মাটির পাত্র) একটু পানি আছে। খড়ের গাদা থেকে কিছু খড় নিয়ে গরুর সামনে দিয়ে বলল- নে খা...।
বকরির (ছাগল) রশি ধরে নিয়ে গেল রাস্তার পাশে। জিগা গাছের সাথে দড়ি (রশি) প্যাঁচ দিয়ে বেঁধে দিল। গাছ থেকে কয়েকটা ডাল ভেঙে নিয়ে মুখের কাছে ধরল। বকরিটা পাতাগুলো খেতে লাগল। গর্ভবতী বকরিটা কয়েকদিন বাদে বাচ্চা দিবে। তাই একটু বেশি যত্ন নেয় বকরিটার।
হঠাৎ ঘরের ভিতর থেকে মোবাইলের ক্রিং ক্রিং আওয়াজ রুবি বেগমের কানে গিয়ে আঘাত করল। রুবি বেগম তাড়াতাড়ি ঘরে ঢুকে মোবাইলটা রিসিভ করল।
- হ্যালো...
অপর প্রান্ত থেকে মায়া ও কান্নাজড়িত আধভাঙা গলার স্বর রুবি বেগমের পেটের ভিতরের সমস্ত নাড়িভুড়ি উলট-পালট করে দিল।
- রুবি, রুবি, আমি ছাড়া পাইছি। আমি আজ রাইতের ফ্লাইটে বাংলাদেশে আসছি।
রুবির সমস্ত দেহ থেকে ২০৬ জোড়া হাড় যেন ছিন্নভিন্ন হয়ে গেল। ক্ষণিকের জন্য যেন মূর্ছা গেল। কোনো কিছু তার অনুভূতিতে কাজ করছে না। যেন রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। মস্তিষ্ক ইশারা দিচ্ছে না। রুবি কিছু বুঝতে পারছে না, বলতেও পারছে না। শুধু মোবাইলটা কানে ধরে থিরি ধরে দাঁড়িয়ে আছে। সকালের রোদের আলো মুখে পড়ে এক ধরনের আলোর ঝিলিক তৈরি করছে নতুন টিনের চালের মতো। শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে রুবি বেগমের।
অপর প্রান্ত থেকে আবার জোরে বলছে,
- রুবি, তুমি কী শুনতে পাচ্ছ? আমি জেল থেকে ছাড়া পাইছি। আজ রাতেই দেশে ফিরছি।
এবার রুবির গা ঝাড়া দিয়ে চৈতন্য ফিরে পেল। রুবি মোবাইলটা ফেলে পাশে দাঁড়িয়ে থাকা রুবেলকে জড়িয়ে ধরে চিৎকার দিয়ে বলল- ‘তোর বাপ আসছে।’
রুবেল থতমত হয়ে বলল- ‘মা, আব্বায় আজ আসব?’
রুবির হাত, পা, সারা শরীর অজানা সংশয় ও উত্তাপে কাঁপছে। রুবেলকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে রুবি।
রুবেল মায়ের হাত ছাড়িয়ে দিয়ে একদৌড়ে দাদার কাছে চলে গেল।
- দাদা, দাদা, আব্বায় কাল আসব।
রুবি চুপে চুপে কিছুক্ষণ কেঁদে মনটা হালকা করে নিল। রুবিই একমাত্র জানে রুবেলের বাপ জেলখানায় আছে। রুবেল এ ব্যাপারে কিছুই জানে না। রুবেলকে রুবি কখনও বুঝতেও দেয়নি। বাবা মায়ের আদর দিয়ে রুবেলকে রুবি বড় করেছে। কখনও বাবার অভাব বুঝতে দেয়নি। নিজের মনের মধ্যে লুকানো কষ্ট কখনও প্রকাশ করেনি। রুবেলের কোমল মনে আঘাত পাবে বলে ওর বাবার কথা কিছুই বলা হয়নি। রুবেল জানে ওর বাবা বিদেশে থাকে। ভালো আছে, সময় হলে দেশে ফিরে আসবে।
রুবেলের বয়স দশ বছর। এবার ক্লাস ফোরে পড়ে। গ্রামে প্রাইমারি স্কুলে পড়ে। লেখাপড়ায় খুবই ভালো। প্রতিবছরই ক্লাসে প্রথম হয়। এছাড়া বিভিন্ন সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে জেলা, উপজেলা থেকে পুরস্কার আনে। এজন্য স্কুলের মাস্টাররা রুবেলকে অনেক আদর করে।
করোনা ভাইরাসের কারণে স্কুল বন্ধ। রুবেল ঘরে বসে সংসদ টিভির ক্লাস করে। এছাড়া স্কুলের নিপা ম্যাম, ফারুখ স্যারের ক্লাস মোবাইলে করে।
রুবেলকে পেটে রেখে রুবেলের বাবা বিদেশ গেছে। আট বছর ধরে জেলখানায় আটক থাকার পর ছাড়া পেয়েছে। আট বছর রুবি খেয়ে না খেয়ে ভিটের মাটি কামড়ে ধরেছিল। এক বুক কষ্ট নিয়েও রুবেলকে জড়িয়ে দিনের পর দিন পার করেছে। অভাব অনটনে, কখনও বা না খেয়ে থাকতে হয়েছে। বাড়ির উঠানের সবজি চাষ, হাঁস, মুরগি, গরু, ছাগল লালন-পালন করে কোনো রকমে দিনগুলো কেটেছে। কষ্টে ভরা মনটা হালকাও হয়েছে অবুঝ প্রাণীদের সাথে সখ্য ও ভালোবাসায়।
এদিকে রুবেলের বাপের বাড়ি আসার কথা শুনে রুবি ঘরদোর সব পরিষ্কার করেছে। রান্না-বান্না করেছে। সন্ধ্যার আগেই গরু, ছাগল, হাঁস, মুরগি সব যার যার ঘরে ঢুকিয়ে দিয়েছে। সন্ধ্যার পরে রুবেলকে প্রতিদিনের মতো পড়াতে বসিয়েছে।
রুবেল আজকে আর পড়তে চাচ্ছে না। রুবেল ওর বাবাকে বলেছে ওর জন্য খেলনা, কার, প্লেন নিয়ে আসতে। চকলেট আনতে বলেছে, সেই খুশিতে লাফাতে লাগলো।
একসময় ক্লান্ত শরীরে রুবেল ঘুমিয়ে পড়লে রুবি প্রতীক্ষার প্রহর গুণতে থাকে। কখন যেন সেই কণ্ঠস্বর ভেসে আসে- রুবি, ও রুবি দরজা খোল।
রুবির মনে ভেসে উঠে হাজারো কথা। প্রথম সন্তানের মুখ প্রথম দেখবে রুবেলের বাবা। সে কী আনন্দ! রুবেল যেদিন ঘর আলো করে পৃথিবীতে এসেছিল সেদিন যেমন আনন্দ হয়েছিল। টানা দুই দিন ব্যথা খেয়ে রুবেল হয়েছিল। রুবেলের মুখ দেখে ব্যথার কথা ভুলে গিয়েছিল রুবি। এসব ভাবতে ভাবতে চোখটা লেগে আসে রুবির।
হঠাৎ মোবাইলের ক্রিং ক্রিং শব্দে চমকে উঠে রুবি। তাড়াতাড়ি কলটা রিসিভ করে রুবি। অপর প্রান্ত থেকে শুনা যায়,
- রুবি আমি ঢাকা বিমানবন্দরে আছি। আজ আমার আসা হবে না। এখানে আমাকে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে।
রুবি কোনো কথা বলে না। শুধু একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে উঠে,
- হায়রে কোয়ারেন্টিন!
রাহিমা আক্তার
গাজীপুর, বাংলাদেশ
-
গল্প//উপন্যাস
-
28-08-2020
-
-