প্রেম_পোকা_ও টিকটিকির_গল্প - অনিক সুমন
Love is the 7th sense that destroys all 6 senses and makes a person non-sense.-Anonymous
১.
সাদা ছাই অবর্ণ জলে, গুলে যখন ডুবুরির মতোন নামছে নিচে, তখন দেয়ালে একটি পোকার পিছু নিয়েছে মৃত্যু...মৃত্যু না ছাই, সরীসৃপ শ্রেনীর একটা টিকটিকি। ও দুটোর লুকোচুরি খেলা জমে ওঠায় চোখ জোড়া অর্থ্রোপোড পা হয়ে ঘুরছিল দেয়ালে, অন্তত ফিরতেই হলো এই বলে যে, এর চে' জরুরি কাজ, স্তরীভুত ঘৃণায় খনন কার্য চালাতে হবে -যা শুধু দু' পক্ষের হিপোক্রেটিক মনকে শব্দের আবাহনে সুসভ্যের পোশাকই পড়াবে। ততক্ষণে বেঁচে থাকুক পোকাটি; তার ক্ষুধার্ত লালায় ভিজে যাক দেয়াল।
এক্ষণে, সিগ্রেটের ধোঁয়ার নিরুদ্দেশ যাত্রা থমকে যায় শব্দ কয়টির গুনে... এখন বর্ণ ও নিরবলম্ব হবে ধোঁয়ার মতো --একটু একটু করে।
'আপনি তাকে নিয়ে যান - বাঁধা দেব না', সে বলে। 'আমার কোন ফিউচার নেই। তো, তার'টা কেন নষ্ট হবে? আপনি ব্রাইট এন্ড এনার্জেটিক, সে আপনারই প্রাপ্য।' বলেই সে একটু থামে। তারপর আবার যোগ করে,
'সে আবেগের মাঝে আছে - সেটা কেটে গেলে আমিও সটকে পড়ব। নেশার জীবন আমার- আলোতে আসবো,কখনো ভাবি না।' অতঃপর সে থামে।
প্রশ্নটা আমাকে করতেই হলো। না করে উপায় ছিল না।
'কে বেশি আকর্ষণ করে? নেশার জীবন, না মেয়েটি?
'ভাবিনি -নিজেকে এভাবে প্রশ্ন করিনি কখনো ', তার সংক্ষিপ্ত উত্তর।
'চলছে, চলবে - ব্যস, এইতো?' আমি অন্যমনস্ক থেকে বলি।
'হু' সে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে।
ভাল্লাগে না এসব। তারপর কষ্ট, এরপর আবার, পৌনঃপুনিক... আমি অনেকটা চেঁচিয়ে বলি, 'মন্টু, পানি দিয়ে যা- এদিকে', আমার স্বরে স্পষ্টত বিরক্তি।
এই মন্টু ছোকরা বড় বাধ্য, কথা শোনে। সর্বক্ষণ একটা সাদা স্যন্ডো গেঞ্জি, যেটা এখন ঘোলাটে অবস্থা আর একটা খয়েরী রঙের ফুল প্যান্ট্। ব্যাস, এই হলো মন্টুর সারা বছরের জার্সী।
এখন, এ চায়ের স্টলে কাস্টমারের এতো ভীর বাট্টা! সবার প্রশ্নবোধক দৃষ্টি ঝরে পড়বে, যখন সে আমার ছোট অর্ডারটা শিরোধার্য করে ফিরে আসবে; কোনো নতুন হিন্দি গানের কলি গলায় ভাঁজতে ভাঁজতে....।
আবার শুরু। 'আমি তাকে জোড় করে নিয়ে আসি, বিয়ে করি - সহ্য হবেতো এসব?' আমি অনেকটা কুশলি প্রশ্ন করি।
'কষ্ট তো হবেই... দূর থেকে ভালোবাসবো! ' তার হেঁয়ালী জবাব।
'এটা কোনো কাজের কথা নয়... নাটক, সিনেমা, কবিতা এসবে মাথা বিগড়েছে তোমার', আমার ভ্রু কুঁচকানো জবাব।
'হয়তোবা- হয়তো নয়, এরকমই আমি', বলেই সে উন্নাসিকের মতো চেয়ে থাকে দূরে... তার চোখের তারায় জ্বলতে থাকা আলো, ক্রমশ ম্রিয়মান হয়ে আসে, গোধূলির আলোর মতো।
'বাস্তবতায় আসো - যে তোমাকে এতো পছন্দ করে, হৃদয়ের সবটা প্রেম যে একজনের জন্য জমা করে রেখেছে - তার দিকটা চেয়ে হলেও ভালো হওয়া যায়, তাই নয় কি? ' অনেকটা উপদেশমূলক লেকচার হলো, সে যাহোক।
'বলা সহজ, করাটাই কঠিন।' হতাশা ঝরে পড়ে শিশিরের শব্দের মতোন নিঃশব্দে, তার কন্ঠে। নীরবতার পেড়িয়ে, সে আবার বলে, 'সবচে সহজ হলো, তাকে জোড় করে নিয়ে যান। আপনি অনেক করে বুঝিয়েছি, ভালো ভালো কথা, আপনার ব্যাপারে। '
আমি সিগ্রেটে শেষ সুখটান দিয়ে বলি, 'সত্যিই বুঝিয়েছ? কেন? সে তো তোমার - তবে আমায় দিচ্ছ কেন?' বলেই আমার ভীষণ হাসি পেয়ে যায়। স্টলের সবাইকে হতচকিত করে আমি উচ্চস্বরে হেসে উঠি।
'এ ভার বহন করা কঠিন। সেজন্য। 'তার সোজা উত্তর, যেন প্রতিটা প্রশ্নের জবাব সে আগেই ঠিক করে রেখেছে।
'তবে তুমি ভারমুক্ত হতে চাও..' আমার কন্ঠ প্রতিপক্ষের রক্তের সন্ধান পাওয়া এক ক্ষুধার্ত উকিলের কন্ঠ... আর সে যেনো কাঠগড়ায় মিথ্যে সাক্ষ্য দিতে দাঁড়ানো এক ব্যক্তি।
'অনেকটাই... ' তার উন্নাসিকতার পালে হাওয়া চড়তে থাকে।
'পলায়নপর প্রেমিক তুমি... দায়িত্বহীন। 'আমার কন্ঠ ক্রমশ কঠিন হতে থাকে। এসব খামখেয়ালী একদম অর্থহীন, একদম..।
'যা খুশি বলতে পারেন..আমার কোনো ব্যক্তিত্ব নেই ', সে বলে হাল ছেড়ে দেয়া কন্ঠে ।
'সে তো দেখতেই পাচ্ছি। ' তার তাসের ঘরের মতোন হঠাৎই ভেঙে পড়া, দেখতে আমার কষ্ট হচ্ছিল ভীষণ।
মুখোমুখি দু'জন পুরুষ.. মাঝখানে একটি ঘুনে খাওয়া টেবিল... এবং একটি মেয়ে, শ্রাবস্তী। দুঃস্বপ্ন, ঈর্ষা, ভণ্ডামি, অনেক অনেক ভালো লাগার সৌরভ, একটি অদৃশ্য বিম্বিত পর্দা, চোরাস্রোতের পাহাড়ি নদী... ছাইভস্ম!
২.
এদিক -ওদিক, বিক্ষিপ্ত, টেবিলে, নিচে, মনের অলিন্দে....। সময় এগোয়,আমাদের এড়িয়ে- জাগতিক শব্দ হঠাৎ যখন নাড়িয়ে যায়, বিস্মৃতির অতল থেকে সদ্য ফোঁটা ফুলের বিস্ময় নিয়ে জেগে উঠি...। ঔৎসুক্য নিয়ে দেয়ালে তাকাই। পোকা আছে, টিকটিকি নেই। কে কাকে হাপিশ করল? বাইরে তখন ধুমধুমার বৃষ্টি, ধুয়ে যাচ্ছিল সব। তবে ভেতরটা নয়, একেবারেই নয়।
'মেয়েটা তোমায় প্রচন্ড ভালোবাসে, তাই না।' এটা আমার প্রশ্ন ছিল কি উত্তর, আমি নিজেই তা জানি না।
'হু। এতো যে, এক সাগর লোনা জল সাবাড় করতে পারে... ' বলেই সে হো, হো করে হেসে উঠে। তার এই হঠাৎ প্রাণবন্ত হয়ে উঠা, আমাকেও স্পর্শ করে।
'আচ্ছা, তুমি কি পার?'
'কিছুই না। এমনকি এই নেশার জীবন ছেড়ে দেয়া, তা ও না...তাই তো ভীষণ কষ্ট।' তার চেহারা দেখে মায়া হয়।
আমি তাকে বলে যেতে ইশারা করি। গ্রীন সিগনালটা পেয়ে সে যেন জেগে উঠে।
'ওকে বলি, শুভ ভাই, অনেক ভালো একটা ছেলে। চলে যাও ওনার সাথে। ও বলে -মরবে তাহলে। বলি, তোমার সাথে আমার সম্পর্ক কি? ও কি বলে, জানেন? '
',কী বলে?' আমি একেবারেই অনুৎসাহিত।
'বলে, তোমার বাচ্চা আছে এ পেটে!' বলেই সে এভাবে নিজের পেটটা উচিয়ে ধরে যে, ডাক্তারকে পেটের পীড়া দেখাচ্ছে কোন রোগী।
আমি কিছুটা হকচকিয়ে গেলে ও নিজেকে সামলে নেই দ্রুত।
'চমৎকার কথা.. সত্যিই কি..?'
এলোমেলো চুলে হাত চালাতে চালাতে বলতে থাকে সে অনেকটা স্বগতোক্তির মতো 'ফালতু কথা, বড্ডই বাজে বকে শ্রাবস্তি.. '
'আকাশ, সত্যি করে বলোতো, কোনো ফিজিক্যাল কনটাক্ট বা.... ' আমার কথা শেষ হওয়ার আগেই অনেকটা চিলের মতো কথাটা ছিনিয়ে নিল আকাশ।
'কাভি নেহি। এ সিগ্রেটের শপথ। শ্রাবস্তি, খুব ভালো মেয়ে।'
'তাতো অবশ্যই' বলেই আমি মাথা ঝুঁকোই। কোথায় যেনো গীটারের তার ছিঁড়ে গেছে -বেসুরো সব।
'আরো বলে, এক আকাশে যা পেয়েছি, হাজার শুভতে ও তা পাব না।' আকাশের স্বর উচ্চকিত। তার ঠোঁটের কোনে বিজয়ীর ঝলক, আমার নজর এড়ায়নি। তারপরে ও আমি, নিজেকে সামলে নেই এভাবে, যেমন করে লোকে কাঁদা পানি এড়িয়ে যায়...। ব্যাপারটা সহজ করে নিতেই বলা,
'মারাত্মক কথা। বললাম তো - ঐ সিনেমা, নাটক। '
'আচ্ছা, শ্রাবস্তিকে কয়বার দেখেছেন? 'তার অনুসন্ধিৎসু হঠাৎ এই প্রশ্ন আমাকে খানিক অবাক করে দেয়।
'মোট তিনবার'
'প্রথমবার কোথায়? '
'নাচের অনুষ্ঠানে। অপ্সরীর মতো লাগছিল। দ্বিতীয়বারের দেখাতে তাকে প্রপোজ করি। আর শেষবারে তো আকাশ, তোমার সাথেই দেখা হয়ে গেল।' আমি জানিনা কথাগুলো বলতে আমার হয়তো কষ্ট হচ্ছিল।
'আচ্ছা, সেদিনকার ছোকরাগুলো কি আপনার চেনা? বেশ হুমকি দিয়ে যাচ্ছিলো।' আকাশ এখন বেশ সপ্রতিভ। খানিক আগের নির্লিপ্ততা তার কেটে গেছে বোঝা যায়।
'হা..হা..হা..' এবারে আমার হেসে ওঠার পালা। আমি আকাশের কাঁধ ঝাঁকিয়ে বলি, 'মনে হচ্ছে, এখনো বেশ ভয়ে আছো..? ওসব স্রেফ উত্তেজনায় বলা কিছু শব্দ। বাদ দাও। তোমার কিছু হবে না।'
ধোঁয়ার দমকে গলায় কয়েক ধরনের শব্দ ওঠে। পানি ঢেলে দিলাম কয়েক গ্লাস। ভেতরে যেন, তিক্ত লাভার স্রোত বয়ে গেল। দেয়ালে হঠাৎ কোথা থেকে যেনো টিকটিকি, পোকা দুটোই দৃশ্যমান। তবে কিনা নিরাসক্ত সরীসৃপের সামনে পোকার উল্লম্ফন চলছেই।
'ভাই,-টিয়া, জুয়েল, এদের সাথে আপনার পরিচয় কিভাবে? '
এবারে আমার উন্নাসিক হওয়ার পালা। 'বুঝলে আকাশ, দরকার হলে সব জুটিয়ে নিতে হয়।'
'ভাই, আপনি হেঁয়ালি করছেন। মানায় না '
'কেন হেঁয়ালি কি শুধু তোমার একার, আমার নয়? ' আমার তির্যক জবাব।
'কেন হবে না। সদুত্তর কিন্তু পেলাম না। '
'ঠিক আছে, ঠিক আছে... বলছি, হা..হা..হা' হাসির দমকে আমার কন্ঠ রূদ্ধ হয়ে আসছিল কতকটা।
'হাসছেন যে বড় '। ঠোঁট হতে তার সিগ্রেটের শেষ আভাটুকু ততক্ষণে মুছে গেছে।
'আকাশ,তোমার অবস্থা দেখে -অায়নায় যদি দেখতে নিজের অবস্থাটুকু একবার..। 'বলেই আমি রুমালে ভেজা হাত দুটো মুছে নিই একবার।
'বড় হেঁয়ালি হচ্ছে '
সুতরাং, আমি একটু সিরিয়াস হওয়ার চেষ্টা করলাম এবারে।
৩.
There's no time to lose
I heard her say
Cash your dreams before
They slip away
Dying all the time
Lose your dreams and you
Will lose your mind.
আমি আকাশের দিকে সরাসরি তাকিয়ে বললাম,
'প্রথম আলাপের দিনেই তুমি মিথ্যে বলে ছিলে আমাকে , কেন? '
উষ্মা বোধকরি একটু বেশিই হয়ে গেল। সে যাহোক, রাতের দেহ বিস্তৃতির সাথে সাথে চলছিল, চলমান বহু জিজ্ঞাসার শরে আমাদের ছিন্নভিন্ন হওয়া। সে সময় ও বিস্মৃতির অতল খানা-খন্দ পারি দেয়া হয় না।
'মিথ্যে বলে ছিলাম -কারন, আপনি কষ্ট পাবেন,তাই।'
'রাজীব, নামক একটি চরিত্রের আগমন শুধু তোমার কারনে।'
'ভাই, স্বীকার করছি।' সে অকপটে ভুল স্বীকার করে।
'সে আমার ছোট ভাইয়ের মতন -তার সাথে ঝামেলা হতে পারতো।'
আকাশ তার এলোমেলো চুলে মাথা চুলকাতে চুলকাতে, বলে,
'হু,-পারতো, মানছি।'
'রাজীবকে, তুমি ঢাল হিসেবে ব্যবহার করতে চেয়ে ছিলে..কেন?' আমার ভ্রুকুচঁকানো চোখ দুটোর দৃষ্টি তার থমকে যাওয়া মুখাবয়বের উপরে স্থির হয়।
'চাইছিলাম, আপনি এগিয়ে যান এবং শ্রাবস্তিকে জয় করে নিন।' আকাশের সপ্রতিভতা মুগ্ধকর। যদিও তা দূরাগত কোন শব্দের প্রতিধ্বণির মতোই শোনালো।
'রাজীব, একদিন ছুটে এসেছিল, মারমুখী ভঙ্গিতে.. তুমি কি তা জানতেনা?' আমার কৌসুলি প্রশ্ন ছুটে গেল তীরের মতন।
একটু থেমে আবার যোগ করি, 'তোমার নিজের হাতে লেখা বেশ কিছু চিঠি ছিল, রাজীবের কাছে। সেসব যেভাবে হোক এখন আমার হাতে। দেখতে চাও?'
মাঝ আকাশে সুর্য ঢাকা পড়লো যেনো, হঠাৎ। বার কয়েক খক্খক্ কেশে সে গলা ঠিক করে নিলো। হয়তো মাথাটাও। ওদিকে দেয়ালে জমে উঠেছে খেলা। পোকটি বিপর্যস্ত, টিকটিকির সাঁড়াশি আক্রমনে।
'রাজীব কোন ব্রুটাস নয়। কাজেই তার উপরে রাগ করে লাভ নেই।' আমি হাসতে হাসতেই বললাম। পরেই যোগ করি, 'তোমার ক্যালকুলেশনে কোথাও গলদ থেকে থাকবে।'
'ভাই,আপনি ঠিক বলেছেন না -একেবারেই '। সে বলছে বটে - তবে আত্মবিশ্বাসহীন; পতঙ্গের মতো, মৃত্যুকূপে ঝাঁপ দেয়ার পূর্বে যে কূপ টাকে আপন ভাবে।
আমি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলি,
'হয়তো, তুমিই তাকে আসতে বাঁধা দিচ্ছ - চাও না যে, সে কথা বলুক আমার সাথে, কে জানে! It is just my assumption. '
'আমার কথাটা আগে একটু শুনুন,.. প্লিজ!' আকাশ যেনো ডানা ভাঙ্গা পাখির মতো ডানা ঝাঁপটাতে থাকে।
'আসলে আমি বলতে চাইছিলাম কি...' সে আঙ্গুল নেড়ে কিছু বলার চেষ্টা করে।
একটা দুঃখবোধের চড়ায় ততক্ষণে আমি আটকে গেছি।
'হ্যাঁ বলো, কি বলবে?' তার জবাবের কোন অপেক্ষা না করেই বলি,
'Actually, you are that kind of person, who could come out of hell with Novelty, though you have done all sinister deed!'
আমার কথার স্রোত আমি নিজে ও আজ থামাতে পারি না; আমাকে যেনো কথার ভুতে পেয়েছে আজকে। সরাসরি তার চোখের দিকে চেয়ে বলি,
'আকাশ, তুমি শ্রাবস্তিকে অনেক ভালোবাসো তাই না? '
একটা ভেজা কাগুজে ফুলের মতো চুপসানো দেখাচ্ছে তাকে। মনে হলো, অনেক আঁধারের মাঝে উত্তর হাতড়ানোতে শ্রান্ত সে ভীষণভাবে। তার অস্তিত্বের এক একটা আস্তরণ খুলে পড়ছে যেন, পেঁয়াজের খোসার মতোই।
'জানি না,' এতই হালকা ভাবে শব্দগুলো ভেসে এল, আমিই হঠাৎ কনফিউজ হলাম।
'সত্যিটা বলতে, তোমার এতো বাঁধছে কোথায়?' হাফ্ ছেড়েই বলি।
দেয়ালে খেলাটি ততক্ষণে শেষ। সরীসৃপ তার জিহবাটি দিয়ে যখন চেটে নিচ্ছিল নিজের শরীর, তৃপ্তির ঢেকুরে যখন ফেঁপে উঠছিল ভেতরের পাকস্থলীকে, বাইরের গর্ভবতী সদৃশ উদর... যখন পোকাটির জীবন সায়াহ্নের শেষ নিশ্বাসের কার্বনডাই-অক্সাইড প্রলম্বিত দীর্ঘশ্বাসের সাথে মিলেমিশে বৃহৎ হয়ে ওঠে ইমারতের মতো, কেননা বৃহৎ হওয়াটাই রীতি বলে.... চাপা পড়ে থাকে বহু প্রশ্নের উত্তর, উত্তরের প্রশ্ন, পক্ষের পালাবদল; তখন সরীসৃপের সাথে উল্লাসে শামিল হতে গিয়ে, মৃত পোকার জন্য ভারী হয়ে আসে ভেতরটা।
বাইরে বৃষ্টি ততক্ষণে থেমে এসেছে।
আমি আকাশের কাঁধে ঝাঁকুনি দিয়ে বলি,
'চল,উঠা যাক এখন - অনেক রাত হয়ে এল। '
'চলেন, অনেকটাই রাত হলো।' আমার নিরাসক্ত তাড়ায় সে অনেকটা ঢোরা সাপের মতো উঠে পড়ে যেনো জল ছেড়ে ডাঙায়।
ভাবছিলাম, শিকার না করলে টিকটিকির চলে না, ইকোসিস্টেমটা ও টেকনো যায় না বড়। আমার অত দায় নেই। ভুলে যাওয়া যায়, শ্রাবস্তির দিকে চেয়ে হলেও - যেহেতু চাইলেই সব হয় না। একদিন হয়তো ক্ষনিকের জন্য যে ফুলের কাল্পনিক সৌরভ উত্তপ্ত করে রেখেছিল নিলয় -অলিন্দ, সে দায় থেকে হলে ও অবশেষে মুছে ফেলা যেতে পারে কষ্টের দাগ।
বিদায়ের পাট যখন চুকে গেল, তখনও বাতাসে লেগে ছিল বৃষ্টির চেনা সোঁদা গন্ধ। আর নিজেকে মনে হচ্ছিল একটা বৃষ্টি ভেজা নিঃসঙ্গ কাক। (সমাপ্ত)
অনিক সুমন। চট্টগ্রাম
-
গল্প//উপন্যাস
-
08-08-2020
-
-