সেদিন পূর্ণিমায় - মানস চক্রবর্ত্তী
আজ রাতে গোল থালাটির মতো চাঁদ উঠল
বোধহয় পূর্ণিমা!
এখন আর পূর্ণিমার খবর রাখি না।
কিন্তু সেদিন সুস্বাদু পরমান্ন সাজিয়ে দিতে
আমার আসনের সামনে,
হরি ওঁ তৎ সৎ বলে শুদ্ধ হয়ে আমাকে নিতে হতো
পরমান্নের স্বাদ।
আমাকে আনতে হতো গুড়ের বাতাসা আর পাটালি
তুমি পড়তে লক্ষীর পাঁচালী
আমি অনুগত যজমানের মতো বসে থাকতাম
পূজা হলে প্রসাদী ফুল মাথায় ঠেকিয়ে দিতে।
আমি বলতাম, " কি হবে ওটা মাথায় ঠেকিয়ে?"
"সংসারে দারিদ্র আসবে না।"
দুপুরে খাওয়ার পর তুমি বিছানা স্পর্শ করতে না
মেঝেতে মাদুর পেতে সুর করে পড়তে
"সর্বশাস্ত্রে - বীজ হরিনাম দ্বি- অক্ষর।
আদি অন্ত নাহি তাহা বেদে অগোচর।।
প্রণমহ পুস্তক ভারত-নাম-ধর।
যার নাম লইলে নিষ্পাপ হয় নর।।"
পাঠে আমার মন থাকত না
আমি বিছানায় শুয়ে শুয়ে দেখতাম
তোমার নিরাভরণ ঠোঁটদুটির সঞ্চালন আর
বুকের ওঠানামা।
আমি ইশারা করতাম
তুমি বলতে, "ওরে দুষ্টু, আজকে আমার ব্রত না।"
তারপর আমি কখন যেন ঘুমিয়ে পড়তাম
ঘুম যখন ভাঙত তখন অনেকটা পশ্চিমের আকাশ লাল
রোদ এসে পড়েছে আমাদের ডাব গাছটার মাথায়
বারান্দার বড়ো সিঁড়িটার নীচে
তুমি বসে বেণী বাঁধতে,
কালো ফিতের লম্বা বিনুনি
নেমে যেত বুকের পরে।
বেণী বাঁধলে মেয়েদের কী সত্যিই সুন্দর লাগে!
ভাবনায় ছেদ পড়ত তোমার ডাকে
"মশায়ের ঘুম হলো?
চা তৈরি আছে, গরম করে খেয়ে নাও।"
আমি এখন আর চা খাই না
বহুকাল খাইনি - গরম করার ভয়ে।
মাথায় ফুল ঠেকিয়ে তুমি বলেছিলে,
"সংসারে দারিদ্র আসবে না।"
তুমি দেখে যাও অনিন্দিতা
আমি কত দারিদ্রে আছি
সেলাইয়ের অভাবে পাঞ্জাবিটা আর পরা হয় না
পরমান্ন এখন আর কেউ বানিয়ে দেয় না
ভোরের ভৈরবী এখন আর বাজে না
এখন শুধুই মধ্যরাতের কাফি।
তুমি ফিরে এসো অনিন্দিতা - ফিরে এসো
ফিরে এসো তোমার লক্ষীর পাঁচালী আর
গুড়ের পাটালী নিয়ে,
ফিরে এসো তোমার পূজার প্রসাদী ফুল নিয়ে
আমার মাথায় ঠেকিয়ে বলো-দারিদ্র আর আসবে না।
মানস চক্রবর্ত্তী
সাহাপুর, নিকুঞ্জপুর, বাঁকুড়া
পশ্চিমবঙ্গ, ভারত
-
ছড়া ও কবিতা
-
17-07-2020
-
-