অটোয়া, সোমবার ২৩ জুন, ২০২৫
কবিতাগুচ্ছ - মোহাম্মদ হোসাইন

কাকে দেব এ ক্ষত? 
কাকে দেব এই ক্ষত?

কাউকেতো দিতে চাইনি কখনও
নিজের কাটা হাত, কাটা আঙুল
এতকাল সামলে নিয়েছি

সামলে নিয়েছি দেহপোড়াগন্ধ, বল্কলে ঢাকা নমিত ক্ষরণ

বেশি কিছু চাইনি কোনোদিন
চেয়েছি শুধু একমুঠো আলো, একমুঠো দীর্ঘশ্বাস! 

কাকে দেব এই ক্ষত?

যাকে ভালবাসি
সে চিরকাল দূরে থেকে গেছে
দূর থেকে, পাহাড়ের ভেতর থেকে তার প্রতিধ্বনি আসে
সে প্রতিধ্বনি
ভোরের সবুজ হয়ে, সন্ধ্যার আরতি হয়ে হাওয়ায় মিলিয়ে যায়...

আমার ভালবাসাই অস্তিত্ব তার
তার ছায়াই আমার ছায়া
তার ভাষাই আমার ভাষা

হৃদয় ভেঙে দিয়ে যারা উল্লাস করে
স্বস্তি পায়

বুঝেনি তারা, আমার কষ্টেই তার স্নেহ ঝরে

আমি মাটি হয়ে, মাটির নীরবতা ধরে রাখি  ধরে রাখি ঝিরিঝিরি জল
সে জলধারাই আমার প্রেম

সমস্ত ধ্বংসের ভেতরে যেমন থাকে হারানো অতীত, প্রত্ন সম্পদ
তেমনি, বেদনাই হচ্ছে আমার অপ্রাপ্তির আলো, সুখের আয়না,
যা দিয়ে আমি আমাকে দেখি, তাকে দেখি...

কাকে দেব এই ক্ষত!
কে নেবে এ চূর্ণ, কাচ!

সংশয় থেকে চিনে নেয়া আকর
রক্তের ঘ্রাণ থেকে জেনে নেয়া রক্তবীজ
অনুচ্চারিত শব্দ থেকে মর্মরিত বোধ
লবণাক্ত হ্রদে পাওয়া ঝিনুক
সবই সংবেদ, সবই সন্তাপ!

অজ্ঞতাই একদিন এগিয়ে দিয়েছে ঠিকানা আমার
অন্ধকার চিনিয়েছে রাশিরাশি নক্ষত্রের ইঙ্গিত
ঢেউ এসে বলেছে লুপ্ত সম্ভাবনার কথা
ভালবাসা ছড়িয়েছে হাজার প্রদীপের  মুগ্ধতা

কোকিল যে গান গায়, সে গান তারই
যে আকাশ বৃষ্টি ঝরায় সে জল তারই
রোদের যে পুকুর দিনভর রাতভর ঢেউ তুলে, সে ঢেউ তারই
তার ছায়াই আমার গভীরতর অনুভব
আমার উচ্ছ্বাস...

বহুদূর থেকে যখন আসি
যখন দূরবর্তী জাহাজ আলো ফেলে যায়,  তাড়িয়ে নেয় দিগন্তের অন্ধকার
আমার ভালবাসা তখন নবীন আকাশ  নবীন নক্ষত্রের রাত ...

কাকে আমি শোনাব এ গান?

তার গান, তার সুরইতো ব্যাপ্ত হয়ে আছে চারদিক
রাত থেকে সন্ধে অবধি সেই তো সবকিছুতে মিশে আছে স্বরলিপি হয়ে
কড়ি ও কোমল, আহিরি, ভৈরো হয়ে!

আমার এ থেতলে দেয়া বুক, থেতলা দেয়া পাঁজর
কাকে আমি দেখাব?

কাকে দেব এ ক্ষত?

যাকে ভালবাসি
আজন্ম যাকে চেয়েছি

সে কি নেবে এমন নিবিড়, নিহিত ক্ষত?

খারাপ লাগাগুলো
খারাপ লাগাগুলো রেখে যাচ্ছি
রেখে যাচ্ছি খারাপ লাগাগুলো
ঝড়ের কাছে, প্লাবনের কাছে
রেখে যাচ্ছি খারাপ লাগাগুলো
মাটিচাপাজল, কালের কুন্তল!

রেখে যাচ্ছি মানুষ
রেখে যাচ্ছি গৌরব
রেখে যাচ্ছি সবুজ শৈশব

মানুষের কাছে রেখে যাচ্ছি মানুষ
রেখে যাচ্ছি বিশুদ্ধ জল, গরম ভাত, ভাতের থালা, আরক্তিম অবয়ব
রেখে যাচ্ছি শনি থেকে শুক্র
ধান, দুব্বা, আলো ও আঁধার, বীজ, বীজের বিস্তার...

যত ঈর্ষা, যত বুকজ্বলা, যত কালি
কালো যত, নিয়ে যাচ্ছি, নিয়ে যাচ্ছি
অপ্রাপ্তি যত, আমার জন্য নিয়ে যাচ্ছি...
আমার জন্য...

নিয়ে যাচ্ছি অশুভ যত
নিয়ে যাচ্ছি অন্ধকার যত
বুক দিয়ে নিয়ে যাচ্ছি কষ্ট বুকের
নিয়ে যাচ্ছি, নিয়ে যাচ্ছি কালো কাক
অশৌচ, অগৌরব যত...

আকাশে টাঙ্গিয়ে দিয়েছি আরও আকাশ
নীলের সাথে আরও নীল, আরও মহাকাশ!
পৃথিবীর সমস্ত ঢেউ, সমস্ত কান্না সাগরকে দিয়ে দিয়েছি
চোখ থেকে খুলে দিয়েছি চোখ
পৃথিবীকে পৃথিবীর মত থাকতে দিয়েছি
সভ্যতাকে দিয়েছি চাকা ও চাবির কৃৎকৌশল

বিভেদের দেয়ালগুলো তুলে দিচ্ছি
তুলে দিচ্ছি সমস্ত বিষাদ, সমস্ত শোক-দুঃখস্মৃতি!

আদিম হিংস্রতা থেকে তুলে নিয়েছি সমস্ত বন্যতা, সমস্ত দ্বেষ, হিংসা
চিরদিনের মত রোপে দিয়েছি স্নেহময় রক্তবীজ, পাপ থেকে, জিঘাংসা থেকে
পলল মাটিতে বইয়ে দিয়েছি স্নেহের কুসুম

খারাপ লাগাগুলো নিয়ে যাচ্ছি
নিয়ে যাচ্ছি খারাপ লাগাগুলো...

প্রেমে পড়া
প্রেমে পড়া ছেলেদের দেখলে বোঝা যায়,
মেয়েদেরও

এসব কথা জনেজনে কানেকানে দশকানে চাউর হয়ে যায়

প্রেমের কথা মানুষেরা খুব উপভোগ করে এবং
মনেমনে নিজেরাও প্রেম করে, প্রেমে পড়ে
এমনকি কাঁদেও লুকিয়ে লুকিয়ে বালিশ চাপা দিয়ে

আমিও একবার প্রেমে পড়েছিলাম
কাউকে না বলে সে প্রেমকে উড়িয়েও দিয়েছি

প্রেমে পড়া লোকজনেদের দেখলে আমার খুব মায়া হয়, কষ্ট হয়

যেমন মায়া হয় নদীর পাড় ভাঙ্গতে দেখলে, ঘরবাড়ি উড়িয়ে নিতে দেখলে...

মোহাম্মদ হোসাইন। সিলেট