পথেই হারিয়ে গেল মা! - রহিমা আক্তার রীমা
করোনা সঙ্কটে দীর্ঘ লকডাউনে ঘর থেকে একদম বাহিরে বের হওয়া মানেই আতঙ্ক। তিনমাস হয় ঘরে বসে অনেকটা শূন্যতা ও মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েছে মোমেনা বেগম।
ছেলেমেয়েরও আবদারের শেষ নেই, মা এটা লাগবে সেটা লাগবে।
ঘরে কেন কিছু নেই?
যা আছে তা দিয়ে বাচ্চাদের চাহিদা অপূরণীয়। অনেক সময় বাচ্চারা বুঝে পরিস্থিতি সঙ্কটাপন্ন আবার অনেক সময় বুঝেও বুঝে না। তাই মোমেনা বেগম হঠাৎ সিদ্ধান্ত নেয় বাচ্চাদের নিয়ে কিছুটা সময় মুক্ত বাতাসে বিচরণ করবে এবং প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি কিনে আনবে।
যেই ভাবা সেই কাজ,বের হলো বাচ্চাদের সহ মার্কেটের উদ্দেশ্যে,সাবধানতারও কোন কমতি ছিলো না।মাস্ক,গ্লবস,চোখে সানগ্লাস, মাথায় সেফটি ক্যাপ,আর বারবার হাতে হেক্সাসল ব্যবহার।
সুপার শপে ঢোকতে শরীরের তাপমাত্রা পরিক্ষা করে ঢোকানোর সময় ঘটলো বিপত্তি!
বাচ্চাদের তাপমাত্রা ৯৭-৯৮ ডিগ্রি কিন্তু আটকে দেওয়া হলো মোমেনা বেগমকে।কারণ মোমেনা বেগমের তাপমাত্রা ধরা পড়লো ১০২ ডিগ্রি! আতঙ্ক বাড়ে মোমেনার,বাচ্চারাও আতঙ্কিত কি হয় কি হয়!
মোমেনা বেগমকে আবার পরীক্ষা করা হলো কিন্তু বারবার একই রেজাল্ট!
পরীক্ষার জন্য নিয়ে যাওয়া হলো পরীক্ষা কেন্দ্রে তাই রেজাল্ট আসার আগে বাসায় আসা যাবে না। বাচ্চারা নিঃস্ব হয়ে মা বিহীন ফিরলো বাসায়।
মার্কেটে যাওয়া সময় ছেলে হাতে গ্লবসটাও পড়তে পারে না, জুতা মুছে দিতে হয় মাকে। কোন কাপড় পড়বে সবই মার রেডি করে দিতে হলো।
মেয়েটা চুল বাঁধতে পারে না কি পড়বে কাপড়টাও ইস্ত্রি করে দিতে হলো কিন্তু সেই বাচ্চাগুলো মা ছাড়া!
কখন মায়ের রেজাল্ট আসবে নেগেটিভ সেই অপেক্ষায়?
কিন্তু না উপরওয়ালা বুঝি মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন তাদের কাছ থেকে।
তিনদিন পর রেজাল্ট আসলো করোনা পজেটিভ!
করোনা চিকিৎসা দেওয়ার জন্য হাসপালেই হলো শেষ ঠিকানা, আরও তিনদিন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে মোমেনা বেগম মিতালী করে নিলো মৃত্যুকেই!
আর ফিরা হলো না আদরের সন্তানদের কাছে, যারা মা ছাড়া একগ্লাস পানিও তুলে খেতে নারাজ।
প্রাণপ্রিয় স্বামীর সাথেও সেদিন বাসা থেকে শেষ বিদায় ছিলো সেটাও জানা ছিলো না!
মৃত্যুর পর লাশ সোজা চলে গেলো কবরস্থানে, কারও সাথে আর দেখা হলো না। কেউ আর শেষ দেখা দেখতেও পেলো না!
আর হাসপাতালেই কেমন সেবা পেয়েছিলো, আদৌও কি চিকিৎসা পেয়েছিলো কিনা তা রয়ে গেল অজানা?
বাচ্চারা সেই পথ ধরেই তাকিয়ে যে পথে শেষ হেটেছিলো মায়ের সাথে। জানে মা আর ফিরবে না তবুও আকুতিময় অপেক্ষার চাহনী।
পথের ধুলোয় মিশে গেলো মা
আর বাড়ীতে ফিরা হলো না!
রহিমা আক্তার রীমা। ঢাকা, বাংলাদেশ
-
গল্প//উপন্যাস
-
24-06-2020
-
-