ঘুমের অসুখ - রহমান মাজিদ
এইতো সেদিন তাকে ছেড়ে আসলাম স্টেশনে
অপেক্ষমাণ যাত্রীদের কেউ লোহার বেঞ্চে বসে ঝিমুচ্ছিল
কারোও পা দাপিয়ে বেড়াচ্ছিল প্লাটফর্মের এমাথা ওমাথা কারোও চোখ ওঠা নামা করছিল খবরের কাগজ-
কিংবা ল্যাংটা ছবির প্রচ্ছদযুক্ত ম্যাগাজিনের পাতায়
আমার হাত নিয়ে খেলা করছিল তার আঙ্গুল
যেন কোন শিশু কাঁধ থেকে ভেঙ্গে যাওয়া পুতুলের হাত
জোড়া দেবার অবিরাম প্রচেষ্টায় নিরত
হঠাৎ ছিনতাইকারীর মতো আমাকে টেনে হিঁচড়ে
পেটের ভিতর ঢুকিয়ে নিল মহানগর এক্সপ্রেস
অতঃপর বাঁশি বাজিয়ে ছুটে চল্ল ঢাকার দিকে
তখনও তার স্পর্শের উঞ্চতায় ঘামছিল নাকের মাথা
নীল সরোবরের স্বচ্ছ পানির মৃদু ঢেউয়ের মতো আর
আমার চোখে ক্রমাগত নেচে যাচ্ছিল দুটি কাঁচের গুলি
কিন্তু হায়! আজ তার চোখের নিচে গোচরিভুত কালো দাগ এলোমেলো পাপড়ি যেন কোন অসতর্ক রাখালের গরুর পাল পয়মাল করে দিয়েছে খেসারির খেত
চাষের অভাবে জং ধরেছে পতিত মাটির গায়
গভীর পর্যবেক্ষণে স্থির হয়েছিল সে আমার দৃষ্টির ভ্রমবরং দুর্ভাবনায় রাত্রি জাগরণে সেটা ছিল ঘুমের অসুখ
বহুদিন ফসলের গন্ধ শুঁকিনা তাই চুলের গন্ধে ভুল করে ফেলি বাদশাভোগ ধানের মাঠ ভেবে
এইভাবে ঠকতে ঠকতে যুগের পর যুগ
এইভাবে জ্বলতে জ্বলতে দিনের পর দিন
এইভাবে পুড়তে পুড়তে রাতের পর রাত
যখন তোমাদের কন্ঠে জ্বলে আগুনের চুল্লি
দেয়ালে পেরেক ঠুকে অবিশ্রান্ত বজ্রমুঠি
ফসলের গন্ধে নেচে ওঠে কৃষকের মন
পাখিদের সঙ্গীত মূর্ছনায় জেগে ওঠে নবাগত প্রত্যুষ
ফুলেরা হাসে, প্রজাপতি - ভ্রমর খেলা করে কানামাছি,বৌচি
অতঃপর তার চোখের কোনায় নেমে আসে রাজ্যের ঘুম।
রহমান মাজিদ। ঢাকা, বাংলাদেশ
-
ছড়া ও কবিতা
-
09-06-2020
-
-