দালান জাহানের পাঁচটি কবিতা
মনে রাখি তারে
আমি মনে রাখি তারে
যেমন মনে রাখি তার বুকের সুগন্ধি আতর
আমি মনে রাখি তারে
যেমন মনে রাখি সে মরুর মতো তৃষ্ণা কাতর
আমি মনে রাখি তারে
যেমন মনে রাখি তার, জল ও জীবনের সোঁদা
আমি মনে রাখি তারে
যেমন মনে রাখি ভালোবাসা ও ভয়ে ভরা খোদা
আমি মনে রাখি তারে
যেমন মনে রাখি পাখি নদী ও বাউলের তান
আমি মনে রাখি তারে
যেমন মনে রাখে মা জঠরে ধরা স্বীয় সন্তান।
নীলপদ্ম
আজ এই প্রথম অপ্রস্তুত মুখটি
সকাল হতে খেলা করছে
আঙিনায় লাল কাঞ্চন জবা
হাতির সুরের মতো বের করছে
একশো বছরের সমবেদনা
তুমি ছাড়া কী রকম রকম এতিম আমি
যে ফুলটি হৃদয়ে রাখি
সে ফুলটি চোখে রাখি না
ময়ূর নিদ্রায় ভেসে যায় নীলপদ্ম
কতোদিন! কতোদিন!
মাথা উঁচু করে আকাশ দেখি না।
নদী ও মেয়ে
দুটো ঘর অতিক্রম করে
নদীটি মেয়ে হয়ে যায়
সকালে সে জল দোলায়
বিকেলে ভাঁপ নেয় আদমের।
গ্রাম শহরের পর মহল্লার দেহাতিরা
বন্দিত্বের শেকল নিয়ে আসে
পাখির মতো কলকল মেয়েটি
ভর-দুপুর আঁচল তুলে হাসে।
উপমার চেয়ে যুবতী সঙ্গীত
অতীত শব্দের অভিজ্ঞতায়
জেগে উঠে আগ্নেয়গিরির মতো
আমিও মানুষ পাপের পাথর
পেটে ক্ষুধা টেবিলে ভাত
সইবো আর কতো!
একলা আকাশ
এখানে বড়ো একলা আকাশ
এখানে আর চাঁদ উঠে না
নাকি পারফিউম ঢেলে
মেথর বাড়িটা ডিঙিয়ে যায় সময়
পিঠ বোঝাই নীরবতা নিয়ে
একটু একটু করে এগিয়ে যায়
রায় বাড়ির বুড়ো কচ্ছপ
গত কার্তিকে ভেজা কুকুরটা
লোম ঝাঁকা দিয়ে ঝেরে ফেলে
আজকের মৃত বেদনা
এখানে বড়ো একলা আকাশ
এখানে আর চাঁদ উঠে না।
শিরোনামহীন
এভিনিউয়ের সন্ধ্যার বাতিতে
ঝলমল করে মৃতদেহ
প্রাণহীন যাঁতাকলগুলো
বিগত লজ্জায় ঘুমিয়েছে।
কংক্রিটের আঘাতে ক্ষতবিক্ষত
কদম গাছটা যেন কতোকালের পরে
খুলে দিয়েছে বুকের বোতাম।
বাবা ও মেয়ের শিল্পকলায়
বিগত মানবজাতি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে
কখনো আর একে অপরের মুখ দেখবে না।
দালান জাহান। ঢাকা, বাংলাদেশ
-
ছড়া ও কবিতা
-
31-05-2020
-
-