অটোয়া, সোমবার ২৩ জুন, ২০২৫
গোলাম কবিরের একগুচ্ছ কবিতা

১) পঁচিশ বছর পরের পাঠিকা এবং আমি 

জ থেকে পঁচিশ বছর পরে 
 মনে করো আমি নেই! 

 এমনই কোনো একুশের বইমেলায় 
 একটা ফুটফুটে জ্যোৎস্নার 
 আলোজ্বলা সন্ধ্যাবেলায় 
 সেদিনের কোনো এক বাসন্তী রঙের 
 শাড়ি পরা, মাথায় ফুলের মুকুটে 
 শোভিত বাবার সাথে তার আদুরে 
  সুন্দরী কন্যা বইয়ের দোকানে 
 ভিড়ের মধ্যে খুঁজতে খুঁজতে 
 পেয়ে গেলো তাকের ওপরে 
 ধূলার আস্তরে ঢেকে থাকা আমারই 
 ভালোবাসার কবিতার সংকলন! 

 সে তখন হয়তো পরম মমতায় 
 ধূলা মুছে নিয়ে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়ছে 
 আমার লেখা দুই একটা কবিতা! 

 কোনো একটা কবিতা পড়ে তার হয়তো 
 ভীষণ বিরক্তিকর অনুভব হচ্ছে, 
 সে হয়তোবা হঠাৎ ভুরু কুঁচকে 
 বলে উঠলো রাবিশ কবিতাগুলো! 

 তারপর যখন সে আরো 
 একটু একটু করে পৃষ্ঠা উল্টে পড়লো,  
 তখন তার মনে হলো ; 
 নাহ্! এটা তো কোনো কবিতা নয়
 বরং এটা কবির বিরহানলে
 পোড়া হৃদয়ভষ্ম কিংবা 
 কবির প্রেম না পাওয়ার বেদনায় 
 মৃত্তিকার বুকে কৃষ্ণচূড়ার ঝরে পড়া
 পাপড়ির মতো হৃদয়ের কষ্টগুলো 
 জড় করা হয়েছে পুড়িয়ে দেবার জন্য
 যেনো তার কষ্টগুলো আর 
 কেউ দেখতে না পায়! 

 অথচ আমি তো আমার ভালোবাসা,
 পাওয়া না পাওয়ার দুঃখের 
 নীল নকশাকরা চাদর বুনে 
 বিছিয়ে দিয়েছি আমার 
 দুঃখিনী বর্ণমালায় গেঁথে 
 সাজিয়ে দিয়েছি কবিতার শরীরে!

২) শুধু তোমারই শূন্যতায়

কান পেতে কিছু শুনতে পাও? 
 পাচ্ছো না! 
 আরো একটু গভীর মনযোগী হও,  
 শুনতে পাচ্ছো এখন? 

 এই তো এখানে একটা মৃত নদীর 
 হু হু কান্নার আওয়াজে 
 বাতাস ভারী হয়ে গেছে! 

 এই হৃদয়ের গহীন ভিতরে 
 যে আকাশটা ছিলো ওখানে 
 এখন ঘন কালো মেঘে ছেয়ে গেছে 
 আর যে হৃদজমিনটা দেখছো ; 
 একটু ভালো করে খেয়াল করলে 
 দেখতে পাবে এটা এখন 
 সদ্যই নদীর ওপর সেতু গড়ার 
 প্রতিক্রিয়ায় জেগে ওঠা 
 রোদে চিকচিক বালুময় নতুন চর -
 যা এখন চরদখলের 
 নেশায় মত্ত কোনো মাতব্বরের 
 লোলুপতায় ভীত সন্ত্রস্থ! 

 শুধু তোমার শূন্যতায় এবং 
 সাড়া না পেয়ে 
 একদিন যে পরানপাখিটা 
 গান গেয়ে উঠতো 
 তোমারই নাম ধরে সকাল সন্ধ্যায়! 
 সে এখন সে শুধু বিলাপই করে! 

 শুধু তোমারই শূন্যতা নিয়ে 
 কারাগারের নির্জন সেলে বন্দী 
 হতবিহ্বল, তোমারই ভাবনায় 
 সারাক্ষণ আচ্ছন্ন হয়ে থাকা 
 তোমাকে পাবার জন্য  
 কাটিয়ে দিচ্ছি 
 অপেক্ষমাণ অনন্ত প্রহর!

৩) একদিন পৃথিবীর পথে পথে

কদিন হঠাৎ ভালোবাসা এসে 
 দুয়ারে দাঁড়িয়ে ভালোবাসি বলতেই 
 হৃদকম্পন  বেড়ে যাবে খুব! 

 তিরতির করে বয়ে যাওয়া 
 ভালোবাসার নদীতে বান ডাকবে, 
 ভাসিয়ে নেবে যতো দুঃখের 
 লাল, নীল কষ্টের জঞ্জাল! 

 বুকের গহীনে জমে থাকা 
 ছাইরঙা মেঘ উড়ে যাবে! 
 পরিযায়ী পাখির পালকের মতো 
 খসে পড়বে আমার যতো অভিমান! 

 একদিন তোমাকে পেলে হৃদয়ের
 গহীনে যে কথাগুলো প্রোথিত ছিলো 
 গভীর গোপনে তা বলে দেবো সব! 
 একদিন তোমার অপেক্ষায় থেকে 
 খর বৈশাখের দুপুরের রোদে ভিজে 
 বাড়ি ফিরতে ভুলে যাবো! 

 একদিন প্রচণ্ড চুমুর ঝড়ে 
 এলোমেলো হয়ে যাবে সব! 
 একদিন গভীর নিশিতে নিশির ডাক 
 শুনে সিদ্ধার্থের মতো একলা 
 বেরিয়ে পড়বো পৃথিবীর পথে পথে!

গোলাম কবির
ঢাকা, বাংলাদেশ