অটোয়া, সোমবার ২৩ জুন, ২০২৫
নয় জোড়া চোখ - রহমান মাজিদ

গ্রামের শেষ মাথায়, শতবর্ষী সেই স্কুলের পিছনে
যেখানে আকাশ খানিকটা কাত হয়ে নুয়ে পড়েছে দিগন্তে
ঘনপল্লব পরিবেষ্টিত প্রাচীন কবরগাহের প্রতিটি নাম ফলকে
কুয়াশার মতো জমে আছে হাজার বছরের তরল অন্ধকার
এ রাজ্যের নিঃসঙ্গ অতিথিরা কেউ নিমগ্ন গভীর ঘুমে
কিংবা কেউ মেতে আছে সংগীতময় উচ্চকলহাস্যে
পুরুষানুক্রমে এরা সবাই আমার নিকটাত্মীয়
পিতামহ, কেউ প্রপিতামহ বা নিরেট প্রতিবেশি

প্রতিটা প্রত্যুষ অতিক্রমের সময় আমি দেখেছি
সুরা ইয়াছিন পাঠে নিমগ্ন দাদার শারীরিক দুলুনি
চরকায় ললি পাকানোর সময় দাদির গজল গাওয়া
বিশেষ দেহ ভঙ্গিমায় আম্মা তাঁত বুনছেন আর মা হাওয়া
শিখিয়ে দিচ্ছেন জো'র ভিতর দিয়ে মাকু সঞ্চালন পদ্ধতি
এ সময় মনে হত পত্রপল্লবসহ দুলছে পুরো বৃক্ষসমাজ
আর প্রভাতের নরম আলো মোমের মতো গলে গলে পড়ছে
দাদার দাড়িতে অতঃপর  আম্মার পুরোনো হিজাবে

দিনের অবশিষ্ট সময়ে আব্বা মাঠেই কাটাতেন
বাবা আদমের মতো মাথায় গামছা পেঁচিয়ে
শস্যের মাটি থেকে আগাছা সরাতেন
স্বপ্নের ভিতর স্বপ্নগুলো রুমালের মতো ভাঁজ করে
গভীর যত্নে রেখে দিতেন বুক পকেটে
শোবার ঘরের চৌকির পাশের লাটাই মেশিন
পালানে শুকোতে দেয়া কয়েক লড়া মুগা সুতো
যেন সদ্য আবিস্কৃত জোহানেসবার্গের স্বর্ণ খনি

অতঃপর পিতার ঔরস থেকে ছিটকে পড়া বীর্যের মতো
দারিদ্র্য এসে কখন যেন জেঁকে বসেছে কারখানা অভ্যন্তরে
যেন অভাবের ডিম নিয়ে বাতে বসেছে কুঁচ্চে মুরগী
নানাবিধ বিকল্প থাকলেও সভ্যতার নাভি থেকে খুলে যাওয়া লজ্জা ঢেকে দিতে ঐতিহ্যকেই আঁকড়ে ধরেছেন এসব বস্ত্র বিজ্ঞানীরা
ক্ষুধার জোঁক সজোরে কামড়ে ধরেছে কন্ঠনালী
কত শিশু আর বৃদ্ধরা অন্তর্হিত হয়েছে ভুকচানি লেগে
হরেল পাখির মতো নিরুদ্দেশ হয়েছে প্রত্যাশা সকল
জোসনার আলো খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে নয় জোড়া চোখ।

 রহমান মাজিদ, ঢাকা। বাংলাদেশ